বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র নির্যাতন: বিচার চেয়ে টিএসসিতে 'অবস্থান' নিয়েছেন মার খাওয়া মুকিম
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সার্জেন্ট জহুরুল হক হলে 'শিবির সন্দেহে' নির্যাতনের শিকার চারজন শিক্ষার্থীর একজন মুকিম চৌধুরী বিচারের দাবিতে টিএসসির রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে অবস্থান নিয়েছেন।
তিনি বুধবার সন্ধ্যে থেকে এই অবস্থান নিয়েছেন।
মঙ্গলবার রাতে তাকেসহ বাকীদেরকে নির্যাতনের পর পুলিশের হাতে তুলে দেয়া হয়।
মুকিম চৌধুরী বিবিসিকে জানিয়েছেন, তাকে মারধর এবং বিনা কারণে পুলিশে দেয়ার ঘটনায় জড়িতদের বিচার না হওয়া পর্যন্ত তিনি সেখানে অবস্থান করবেন।
এজন্য জহুরুল হক হল শাখা ছাত্রলীগ নেতার ও ডাকসু হল সংসদের কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ করছেন মিঃ চৌধুরী।
এদিকে, মুকিমের ওপর নির্যাতনের প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থীরা রাজু ভাস্কর্যে মানববন্ধন করেছেন।
মুকিম এই বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র।
অন্যদিকে, ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য জহুরুল হক হল কর্তৃপক্ষ তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।
- 'শিবির সন্দেহে' ক্যাম্পাসে চার ছাত্রকে মারধর
- ছাত্রলীগ ও যুবলীগে 'টর্চার সেল’ নিয়ে যে উদ্বেগ
- আবরার হত্যা: বুয়েট থেকে চিরতরে বহিষ্কার ২৬ ছাত্র
- আবরার হত্যার যেসব কারণ খুঁজে পেয়েছে পুলিশ
কী হয়েছিল?
মুকিম চৌধুরী বলেন, সার্জেন্ট জহুরুল হক হলে মঙ্গলবার রাতে সরকার-সমর্থক ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা তাকেসহ দ্বিতীয় এবং তৃতীয় বর্ষের মোট চারজন ছাত্রকে গেস্টরুমে ডেকে নেবার পর তাদের মারধর করা হয়।
মারধরের শিকার শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেছেন, তাদেরকে 'শিবির সন্দেহে' ডাকা হয়েছিল, এবং তাদের দফায় দফায় হাতুড়ি, মোটা তার (মোটা এই কোএক্সিয়েল তারগুলো স্যাটেলাইট টিভি সংযোগের জন্য ব্যবহার হয়) এবং ক্রিকেট স্ট্যাম্প দিয়ে পেটানো হয়।
এক পর্যায়ে ছাত্রলীগের অন্য নেতৃবৃন্দ এবং হলের আবাসিক শিক্ষকেরা এসে পৌঁছালে চার ছাত্রকে শাহবাগ থানায় হস্তান্তর করা হয়।
তবে, ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য দাবি করেছেন, ওই শিক্ষার্থীদের জিজ্ঞাসাবাদ করার ঘটনায় শুধু হল শাখা ছাত্রলীগ নয়, হলের সাধারণ শিক্ষার্থীরাও ছিল।
"মারধরের ঘটনায় ছাত্রলীগ জড়িত ছিল না, যদি আমরা দেখি কেউ তাতে জড়িত ছিল, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আমরা সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেব।"
পুলিশের হাতে তুলে দেয়ার প্রায় ১২ ঘণ্টা পর বুধবার বিকেল চারটায় শাহবাগ থানা থেকে চার ছাত্রকে ছেড়ে দেয়া হয়।
শাহবাগ থানা থেকে জানানো হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে কোন লিখিত অভিযোগ না পাওয়ায় চার ছাত্রকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর ছেড়ে দেয়া হয়।
রাজু ভাস্কর্যে অবস্থান
থানা থেকে ছাড়া পাবার পর, চারজন ছাত্রের একজন মুকিম চৌধুরি ওই ঘটনার প্রতিবাদে এবং তাতে জড়িতদের বিচার চেয়ে বুধবার সন্ধ্যার পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যে অবস্থান ধর্মঘট পালন করছেন।
বৃহস্পতিবার ভোররাত পর্যন্ত রাজু ভাস্কর্যে অবস্থান করার পর, সকাল সাতটা থেকে আবারো সেখানে অবস্থান নিয়েছেন মুকিম।
তিনি বিবিসিকে জানিয়েছেন, "এ ঘটনায় যতক্ষণ জড়িতদের বিচার না হবে, আমাদের নিরাপত্তা না দেয়া হবে, আমি এখান থেকে কোথাও যাবো না। আমাকে অন্যায়ভাবে সন্দেহ করা হইছে এবং বেদম মারা হইছে। আমি এ ঘটনার বিচার চাই।"
মুকিম অভিযোগ করেছেন, তাকে মারধরের ঘটনায় সরকার-সমর্থক ছাত্রলীগের হল কমিটির কয়েকজন নেতা এবং হল সংসদের কয়েকজন অংশ নিয়েছেন।
বিক্ষোভ
মুকিমসহ চারজন ছাত্রকে নির্যাতনের প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থীরা সকালে রাজু ভাস্কর্যে মানববন্ধন করেছেন।
মুকিম এই বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র।
এদিকে, নির্যাতনের প্রতিবাদে এবং এ ঘটনায় জড়িতদের বিচারের দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসবিরোধী ছাত্র ঐক্য দুপুর বারোটায় বিক্ষোভ মিছিল করছে।
তদন্ত কমিটি
ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য জহুরুল হক হল কর্তৃপক্ষ তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।
রাতে মুকিমকে দেখতে রাজু ভাস্কর্যে গিয়ে এই তদন্ত কমিটি গঠনের কথা জানান সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন।
এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, গত বছর অক্টোবর মাসে বুয়েটের ছাত্র আবরার ফাহাদকে 'শিবির সন্দেহে' টানা নির্যাতনের এক পর্যায়ে সে মারা যায়।
নির্যাতনের অভিযোগ ছিল ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় দেশব্যাপী ছাত্রবিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছিলো।