ফের জোড়া হামলা, আট জঙ্গির হাতে প্রাণ গেল সাত জনের, আতঙ্কে কাবুল
বুধবার আফগান রাজধানী কাবুলে দুই পুলিশ স্টেশনে পৃথক আত্মঘাতী বোমা হামলায় দুই পুলিশসহ অন্তত সাতজন নিহত এবং ১৭ জন আহত হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। একটি হামলার দায় নিয়েছে ইসলামিক স্টেট গোষ্ঠী এবং অপর হামলার
থমথম করছে কাবুলের রাস্তাঘাট। ফের আত্মঘাতী হামলা আফগান রাজধানীতে। বুধবার শহরের দুটি আলাদা অংশে দুই পুলিশ স্টেশনে জঙ্গি হামলা হয়। এতে দুই পুলিশকর্মী-সহ অন্তত সাত জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। আরও সতেরো জন গুরুতর জখম হয়েছেন বলে জানিয়েছে আফগান পুলিশ। আফগান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াইস আহমেদ বার্মাক জানান, 'মোট আটজন আত্মঘাতী বোমারু মিলে হামলা দুটি চালিয়েছে। একটি হামলার দায় স্বীকার করেছে ইসলামিক স্টেট এবং অপরটির তালিবান।
প্রথম হামলাটি হয় কাবুলের পশ্চিমের দস্ত-ই-বার্চি এলাকার পিডি ১৩ পুলিশ সদর দফতরে। হামলাকারীরা হ্যান্ড গ্রেনেড ও গুলি ছুড়তে ছুড়তে ঢুকে পড়ে পুলিশ সদর দফতরে। দুজন আত্মঘাতি বোমায় নিজেদের উড়িয়ে দেয়। ভবনটির একাংশে আগুন ধরে যায়। বার্মাক জানান, 'তৃতীয় এক আত্মঘাতী জঙ্গি বিস্ফারণ ঘটানোর আগেই পুলিশ গুলি করে হত্যা করে। হামলায় দুই পুলিশও নিহত হয়েছেন। এছাড়া জখম আরও দুই পুলিশকর্মী ও এক অসামরিক ব্যক্তি। আইএস তাদের নিজস্ব নিউজ এজেন্সি আমাক-এ এই হামলা তারা চালিয়েছে, বলে দাবি করেছে।
দ্বিতীয় হামলাটি হয় শহরের কেন্দ্রস্থলে, প্রথম হামলা হওযার এক ঘন্টার মধ্যেই। শাহর-এ-নওয় এলাকার পিডি ১০ পুলিশ সদর দফতরে হামলা চালায় তালিবান জঙ্গি গোষ্ঠী। প্রথমে এক আত্মঘাতী জঙ্গি পুলিশ স্টেশনের প্রবেশপথে বিস্ফোরণে নিজেকে উড়িয়ে দেয়। এতে আরও চার জঙ্গির দফতরে ঢোকার পথ পরিষ্কার হয়ে যায়। আফগান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী জানান, আরও 'দুই থেকে তিনজন' সন্ত্রাসবাদী পাশের এক বিল্ডিংয়ে লুকিয়ে ছিল। নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে তাদের তীব্র গুলি বিনিময় হয়। রাত পর্যন্ত ওই গুলি বিনিময় জারি থাকে। জনস্বাস্থ্য মন্ত্রকের মুখপাত্র ওয়াহিদ মাজরো, দ্বিতীয় হামলায় মোট পাঁচ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং ষোল জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন। তবে এখনও হতাহতের সংখ্যাটা স্পষ্ট নয়, আরও বাড়বে বলেই আশঙ্কা করা হচ্ছে।
হামলার কারণে কাবুলের বিভিন্ন এলাকায় রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়। যে সব স্থান সাধারণত ব্যস্ত থাকে সেসব এলাকায় জনপ্রাণী ছিল না। কাবুলে প্রায় চার দশক ধরে যুদ্ধ চলছে। গত কয়েক বছরে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছিল পরিস্থিতি। তাতে আশায় বুক বেঁধেছিলেন আফগানরা। সামনেই সেদেশে নির্বাচন হওয়ার কথা। আর তার ঠিক আগ দিয়েই একের পর এক সন্ত্রাসবাদী হামলা চলছে। গত সপ্তাহে জঙ্গিরা নিশানা করেছে সাংবাদিকদেরও। এতে কাবুলবাসী যারপরনাই উদ্বিগ্ন।
কাবুলের এক বাসিন্দা খাইবারুল্লাহ বলেন, 'এখান দিয়ে যারাই যাচ্ছেন প্রত্যেককেই একইরকম হতাশ ও উদ্বিগ্ন দেখাচ্ছে। আজ আমি বাড়ির বাইরে যাইনি। দিন-দিন শহরে হাঁটাচলা করা মুশকিল হয়ে যাচ্ছে।'
কাবুলে একটি ছোট ফাস্ট ফুডের দোকান চালান চমন আলী। তিনি জানান, সকাল থেকে ছেলেকে নিয়ে দোকানে বসে মাছি তাড়াতে হয়েছে। হামলার ভয়ে বিশেষ কেউ ঘর থেকেই বেরোননি। আলী বলেন, 'দোকানে এসে থেকে যাকেই দেখছি সবাই ভয়ে আছে, খুব ভয়ে। সবাই খুব ঘাবড়ে গিয়েছে।'
যাত্রী পাওয়ার আশায় কাবুলের জরুরী হাসপাতালের কাছে তার গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন এক ট্যাক্সি চালক। আর পাঁচটা দিনের মতো বাজারে লোকের ভিড় থাকবে ভেবেছিলেন। সামনে ঈদ, তাই দোকানে ভিড় থাকাটাই স্বাভাবিক। বদলে তাঁকে আহতদের হাসপাতালে আনার ভয়াবহ দৃশ্যের সাক্ষী হতে হয়েছে। তিনি বলেন, 'ভয় সঙ্গে করেই আমাদের এখানে কাজ করতে হয়। এছাড়া কী বা করার আছে?'