করোনাভাইরাসের ক্ষতি কাটাতে মৌসুমী আমের আশ্রয়
বাংলাদেশের অনেক শিক্ষার্থী, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী বাংলাদেশের আমের এই মৌসুমে পুরাদস্তুর আম ব্যবসায়ী হয়ে উঠেছেন। তারা নিজেরা সরাসরি গিয়ে বা মোবাইল -ইন্টারনেটের মাধ্যমে আম বিক্রি করছেন।
ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শাহরিয়ার আলম করোনাভাইরাসের কারণে এক বছরের বেশি সময় ধরে ঘরেই বসে রয়েছেন। সময় কাজে লাগাতে কয়েকজন বন্ধুর সঙ্গে মিলে তারা রাজশাহী, নওগাঁ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে আম এনে অনলাইনের মাধ্যমে বিক্রি করতে শুরু করেছেন।
''আত্মীয়স্বজন, ক্লাসমেট, বন্ধুবান্ধব-এদের কাছ থেকে অনেক অর্ডার পেয়েছি। কারণ সবাই ভালো আম খেতে চান। আমরা বন্ধুরা মিলে ভালো লাভ করছি বলা যায়।'' বলছিলেন শাহরিয়ার আলম।
শাহ আলম আম বিক্রি করছেন ফেসবুক পাতার মাধ্যমে। দামে কম হওয়ায় তিনি এর মধ্যেই ভালো অর্ডার পেতে শুরু করেছেন বলে জানালেন।
''একটা চাকরি করতাম, করোনাভাইরাসের কারণে সেই দোকান বন্ধ হয়ে গেছে। এখন আমের ব্যবসা শুরু করেছি। এই মৌসুমে ব্যবসা খারাপ না।'' তিনি বলছেন।
তাদের মতো আরও অনেক শিক্ষার্থী, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী বাংলাদেশের আমের এই মৌসুমে পুরাদস্তুর আম ব্যবসায়ী হয়ে উঠেছেন। তারা নিজেরা সরাসরি গিয়ে বা মোবাইল-ইন্টারনেটের মাধ্যমে আম বিক্রি করছেন।
আবার অনেক বাগান মালিক নিজেরাও সরাসরি ফেসবুক পাতার মাধ্যমে গ্রাহকদের কাছে আম বিক্রি করেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের কয়েকটি আম বাগানের মালিক ইউসুফ আলী বিবিসি বাংলাকে বলছেন, ''এর আগে পাইকাররা এসে আম কিনে যেতেন বা আমাদের পাইকারদের কাছে নিয়ে যেতে হতো। কিন্তু এইবার দেখছি, ইউনিভার্সিটির ছেলেপেলে, গ্রামের ছেলেরা আম কিনে নিচ্ছে। তারপর ফেসবুকের মাধ্যমে অর্ডার জোগাড় করে পার্সেল করে পাঠাচ্ছে।''
আমবাগানে সবচেয়ে উন্নতমানের আমের কেজি পড়ে ৪০/৫০ টাকা। তবে কুরিয়ার খরচ, প্যাকেজিং ইত্যাদি মিলিয়ে ঢাকায় এসে সেটি বিক্রি হয় ৮০/৯০ টাকা দরে।
গত কয়েক বছরে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হয়ে ওঠায় এখন অনেকেই সরাসরি আম ব্যবসার সঙ্গে জড়িত হয়ে পড়ছেন।
এজন্য বড় গাড়ি ভাড়ার বদলে তারা সহায়তা নিচ্ছেন বিভিন্ন কুরিয়ার সার্ভিসের। প্রতি কেজি আম পাঠাতে গড় পড়তায় খরচ হয় ১২ টাকা করে।
সরাসরি বাগান মালিকদের কাছ থেকে আম কিনে ক্রেতাদের কাছে সরবরাহ করার চেইন তৈরির মাধ্যমে এটি তাদের জন্য লাভজনকও হয়ে উঠেছে।
ঢাকায় একসময় ক্ষুদ্র ব্যবসা করতেন মাইনুল ইসলাম। কিন্তু গত তিন বছর ধরে তিনি আমবাগান কিনে রাখার ব্যবসা শুরু করেছেন। মৌসুমের আগে আগে বাগান কিনে রাখেন। আমের মৌসুমে আম ঢাকায় এনে বিক্রি করেন।
''বছরের এই একটা নির্দিষ্ট সময়ে যা ব্যবসা হয়, আল্লাহর রহমতে আমার সারা বছর চলে যায়।'' তিনি বলছিলেন।
কিন্তু যেখানে মৌসুমে বাজারে যত্রতত্র আম বিক্রি হতে দেখা যায়, তখন ক্রেতারা কেন অনলাইন থেকে বা সরাসরি বাগান থেকে আম কিনতে আগ্রহী?
শাহ আলমের একজন ক্রেতা ঢাকার ধানমন্ডির বাসিন্দা শিখা আক্তার।
তিনি বলছেন, ''আমে কি কেমিক্যাল দিয়েছে না দিয়েছে, কোথা থেকে এসেছে, তাতো কিছু জানি না। ফল খেয়ে দেখা গেল আরও ক্ষতি হয়েছে। তাই চেষ্টা করি বিশ্বস্ত কারো মাধ্যমে সরাসরি বাগান থেকে আম এনে খাওয়ার। তাতে যদি দুই টাকা বেশিও পড়ে, আমটা ভালো হলে আপত্তি নেই।''
একসময় আমের মূল চাষাবাদ রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, সাতক্ষীরা কেন্দ্রিক হলেও এখন আমের চাষাবাদে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন বিভিন্ন এলাকার মানুষজন।
যেসব এলাকা ধান, পাট বা অন্য শস্যের জন্য পরিচিত ছিল, এখন সেসব এলাকার অনেক চাষিও আম চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। অনেকেই নিয়মিত ফসল বাদ দিয়ে এখন সেসব জমিতে আমের বাগান তৈরি করেছেন।
রাজবাড়ীতে এরকম একটি বাগান করেছেন রায়হান আলী। নিজেদের পৈত্রিক জমির পাঁচ বিঘা জুড়ে তার হিমসাগর আর ল্যাংড়ার আম বাগান।
''গত বছর প্রথম ফলন পেয়েছি। এই বছরে ফলন আরও ভালো হয়েছে। এই জমিতে পাট বা ধান লাগালে যা হতো, আম চাষে তার চেয়ে বেশি লাভ হচ্ছে।'' রায়হান আলী বলছেন।
তিনি বলছেন, আর দেখাদেখি গ্রামের আরও অনেকে এখন আম বাগান করতে শুরু করেছেন।