লন্ডন টিউব ট্রেনে বিস্ফোরণের পিছনে সন্ত্রাসবাদীরাই, নিশ্চিত করল স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড
লন্ডনের টিউব ট্রেনে বিস্ফোরণের ঘটনা। একটি সাদা রঙের বালতির মধ্যে থাকা প্লাস্টিকে বিস্ফোরণ হয়। এই ঘটনাকে আইইডি বিস্ফোরণ বলে দাবি করেছে স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড।
শুক্রবার সকালে সন্ত্রাস হামলাই হয়েছে লন্ডনের টিউব ট্রেনে। এটা নিশ্চিত করল স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড। সেইসঙ্গে জানানো হয়েছে, লন্ডনের টিউব ট্রেনে বিস্ফোরক হিসাবে ইম্প্রোসিভ এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস বা আইইডি ব্যবহার করা হয়েছে। স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের অ্যাস্টিট্যান্ট কমিশনার মার্ক রাউলে জানিয়েছেন, ইতিমধ্যে এই সন্ত্রাসের ঘটনার তদন্তে নেমেছে হাজারখানেক গোয়েন্দা। জায়গায়-জায়গায় সতর্কতা পাঠানো হয়েছে। স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের সঙ্গে এমআই-ফাইভ-এর গোয়েন্দারাও তদন্তে নেমেছেন।
সবে রাতের অন্ধকার মুছে সকালের আড়মোড়া ভেঙেছিল লন্ডন। টিউব ট্রেনে করে অফিসের পথে রওনা হয়েছিলেন মানুষজন। উইম্বলডন থেকে ডিস্ট্রিক্ট লাইন ধরে পূর্ব-লন্ডনের দিকে যাচ্ছিল একটি টিউব ট্রেন। কিন্তু, পার্সন্স গ্রিন স্টেশনে ঢোকার মুখে ট্রেনটিতে বিস্ফোরণ হয়। দরজার পাশে থাকা একটি সাদা বালতির মধ্যে একটি সুপার-মার্কেটের প্লাস্টিকের ব্যাগ ছিল। তার মধ্যেই ছিল বিস্ফোরক। বিস্ফোরণের জেরে এক জন যাত্রীর মুখ ঝলসে যায়। একটি কিশোরের মাথায় আঘাত লেগে গলগল করে রক্তও বের হচ্ছিল বলে পরে প্রত্যক্ষদর্শীরা দাবি করেন। বেশ কয়েক জনেরও অল্পবিস্তর চোট লাগে। বিস্ফোরণের জেরে তৈরি হওয়া আগুনেই ঝলসে গিয়ে অধিকাংশ যাত্রী আহত হন বলে জানা গিয়েছে। এই মুহূর্তে হাসপাতালে অন্তত ২২ জন জখম ভর্তি আছেন বলে জানিয়েছে স্কটল্য়ান্ড ইয়ার্ড।
ওই টিউব ট্রেনেই ছিলেন বিবিসি লন্ডনের সংবাদ উপস্থাপক রিজ লতিফ। তিনি জানিয়েছেন, 'বিকট বিস্ফোরণের শব্দে সকলেই আতঙ্কিত ছিল। পার্সন্স গ্রিন স্টেশনে ট্রেন ঢোকামাত্রা যাত্রীদের মধ্যে হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। আতঙ্কে অনেকে ছুটে পালাতে থাকেন। এই সময় অনেকে চোট পান। বহু যাত্রীর হাত-পা ছড়ে যায়। সকলেই মুখে আতঙ্কের একটি আওয়াজ- বিস্ফোরণ। আতঙ্ক যেন মুহূর্তে গোটা স্টেশন চত্বরটিকেই গ্রাস করেছিল।'
বিস্ফোরণের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে চলে আসে লন্ডন এমার্জেন্সি বিভাগ। আসে দমকল। পুলিশ মুহূর্তে গোটা স্টেশন চত্বর ঘিরে ফেলে। চলে আসে সশস্ত্র পুলিশ বাহিনী। অ্যালেক্স লিটলফিল্ড নামে বছর ছাব্বিশের এক তরুণ জানিয়েছেন, ঘটনার সময় তিনি প্ল্যাটফর্মে সাফাই-এর কাজ করছিলেন। বিস্ফোরণের বিকট শব্দ তাঁর কানেও পৌঁছেছিলো। তিনি দেখেন লোকজন পাগলের মতো দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করছেন।
স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার রাউলে জানিয়েছেন, পার্সন্স গ্রিন স্টেশন এলাকা ঘিরে রাখা হয়েছে। মোতায়েন করা হয়েছে সশস্ত্র বাহিনীকে। সাধারণ মানুষকে সতর্ক থাকারও পরামর্শ দিয়েছেন রাউলে। তবে, অযথা আতঙ্কিত না হওয়ারও পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। ঘটনার সময় কেই যদি কোনও ছবি বা ভিডিও তুলে থাকে তাহলে তা স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের ওয়েবসাইটে আপলোড করারও আবেদন জানিয়েছেন রাউলে।
ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে টুইটার বার্তায় জানিয়েছেন, 'ঘটনায় আহতদের প্রতি আমার সমবেদনা রয়েছে।' সেইসঙ্গে এমার্জেন্সি সার্ভিসকে সাহসিকতার সঙ্গে দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য কৃতিত্ব দিয়েছেন মে।
লন্ডনের মেয়র সাদিক খানও জানিয়েছেন, 'কোনওভাবেই আমরা সন্ত্রাসের কাছে মাথা নোয়াবো না।'
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও লন্ডনে টিউব ট্রেনে সন্ত্রাসে কড়া নিন্দা করেছেন এবং এই ঘটনাকে কাপুরুষোচিত বলে মন্তব্য করেছেন।
এদিকে, পার্সন্স গ্রিন স্টেশনে হামলার পর থেকেই লন্ডন সহ ব্রিটেনের বেশকিছু স্থানে কড়া সতর্কতা জারি করা হয়েছে। লন্ডনের আকাশে সমানে চক্কর কেটে চলেছে হেলিকপ্টার। স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড সুত্রে খবর, বেশকিছু সন্দেহভাজনেরও খোঁজ মিলেছে বলে মনে করা হচ্ছে এবং তাদের সন্ধানে বিভিন্ন স্থানে তল্লাশি চলছে। কিন্তু, এখনও কেউ এই হামলার দায় স্বীকার করেনি।