ইউক্রেন অভিযানের তীব্র সমালোচনা, পশ্চিমী চাপে জি-২০ সম্মেলন থেকে সরে এলেন রুশ বিদেশমন্ত্রী
ইউক্রেনের হামলার জেরে জি-২০ সম্মেলনে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়তে হল রাশিয়ার কূটনীতিকদের। পশ্চিমি দেশগুলোর সমালোচনার জেরে জি-২০ অন্তর্ভুক্ত দেশগুলোর বিদেশমন্ত্রীদের বৈঠক থেকে সরে এলেন রুশ কূটনীতিকরা। রাশিয়ার বিদেশমন্ত্রী সেরগেই লাভরভ জি-২০ সম্মেলনের আলোচনা থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। চলতি বছরের নভেম্বর বা ডিসেম্বরে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের জি-২০ সম্মেলনে যোগ দেওয়ার সম্ভাবনা ছিল। জি-২০ তে বিদেশমন্ত্রীদের বৈঠকে যেভাবে রাশিয়াকে কোনঠাসা করা হয়েছে, তাতে পুতিন আদৌ সম্মেলনে যোগ দেবেন কি না, সেই নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে।
ইন্দোনেশিয়ার বালিতে জি-২০ অন্তর্ভুক্ত দেশগুলোর বিদেশমন্ত্রীদের বৈঠক শুরু হয়েছে। বৈঠকের প্রথম থেকেই ইউক্রেন অভিযানের জন্য রুশ কূটনীতিক ও বিদেশমন্ত্রীর শিকার হন। তবে শুক্রবার থেকে মার্কিন বিদেশ সচিব অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের নেতৃত্বে পশ্চিমি দেশগুলো রুশ বিদেশমন্ত্রীর সঙ্গে সেরগেই লাভরভের সঙ্গে ক্রমাগত অসহোযগিতা করতে থাকেন। প্রথমে একটি রুদ্ধদ্বার বৈঠক হয় ব্লিঙ্কেনের নেতৃত্বে। সেখানে জি-২০ সদস্যভুক্ত প্রায় সমস্ত দেশের বিদেশমন্ত্রীরা উপস্থিত থাকলেও সেরগেই লাভরভকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। শুক্রবার বিকেলে বিদেশমন্ত্রীদের জি-২০ সম্মেলনে একটি বৈঠক হয়। সেই বৈঠকে লাভরভ ইউক্রেনের বিদেশমন্ত্রী দিমিত্রো কুলেবার সঙ্গে মার্কিন বিদেশমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন উপস্থিত ছিলেন না।
আমেরিকা, ইউক্রেনের পাশাপাশি পশ্চিমি দেশগুলো একসঙ্গে রাশিয়ার সমালোচনা করেছে। বার বার রুশ বিদেশমন্ত্রী ও কূটনীতিকদের অস্বস্তিকর পরিবেশে পড়তে হচ্ছে পশ্চিমি দেশগুলোর সমালোচনার জেরে। শুক্রবার একটি বৈঠকে জি-২০ অন্তর্ভুক্ত দেশের বিদেশমন্ত্রীরা বিশ্বজুড়ে খাদ্য সঙ্কটের যে সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে, তার জন্য সরাসরি রাশিয়াকে দায়ী করে। ব্লিঙ্কেন তীব্র ক্ষোভ নিয়ে রুশ বিদেশমন্ত্রীকে বলেন, 'ইউক্রেন আপনাদের দেশ নয়। তবে কেন তাদের খাদ্যপণ্য রফতানিতে বাধা দিচ্ছেন? কেন তাদের বাণিজ্য জাহাজ বন্দর থেকে বের হতে দিচ্ছেন না?'
রাশিয়ার ইউক্রেনের অভিযানের জেরে খাদ্যপণ্য আমদানি হতে প্রতিকূল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। বিশ্বের অনেক দেশ খাদ্যপণ্যের ওপর ইউক্রেনের ওপর নির্ভর করে। কিন্তু রাশিয়ার আগ্রাসনের জেরে কৃষ্ণসাগরে কোনও বাণিজ্যিক জাহাজ প্রবেশ করতে পারছে না। রাষ্ট্রসংঘ সতর্ক করে জানিয়েছে, এর জেরে বিশ্বজুড়ে খাদ্য সঙ্কট দেখা দিতে পারে। ব্লিঙ্কেন সরাসরি মস্কোকে যুদ্ধ বিধ্বস্ত ইউক্রেন যাতে খাদ্যশষ্য রফতানি করতে পারে, সেই বিষয়ে নির্দিষ্ট ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান।
ইন্দোনেশিয়া চলতি বছরের জি-২০ সম্মেলনের আহ্বান করেছে। সেই বৈঠকে রাশিয়াকে বয়কট করলে ইন্দোনেশিয়া অস্বস্তিতে পড়তে পারে। সেই কারণেই চরম অসহযোগিতার পরেও আমেরিকা সরাসরি রাশিয়াকে বয়কটের পথে হাঁটছে না বলেই এক মার্কিন কূটনীতিক বলেছেন। তবে প্রতি বছর জি-২০ সম্মেলনে অংশগ্রহনকারী দেশগুলোর প্রতিনিধিদের একটি ছবি থাকে। এই বছর সেই ধরনের কোনও ছবি তোলা হবে না বলে আমেরিকা সরাসরি জানিয়ে দেয়।
ইন্দোনেশিয়ার বালিতে জি-২০ সম্মেলনে তীব্র অপমানিত বোধ করছেন রুশ বিদেশমন্ত্রী সেরগেই লাভরভ ও অন্যান্য রুশ কূটনীতিকরা। সেখান থেকে তাঁরা জি-২০ সম্মেলন থেকে বেরিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নেন। বালির মুলিয়া হোটেলের বাইরে সাংবাদিকদের লাভরভ বলেন, 'পশ্চিমি দেশগুলো আমাদের সঙ্গে যে কোনও ধরনের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক আলোচনা এড়িয়ে থাকতে চাইছে।' কোনও বৈঠকেই তারা রাশিয়াকে কথা বলার সুযোগ দিচ্ছে না। ক্রমাগত রাশিয়ার সমালোচনা করে গিয়েছে বলে লাভরভ জানিয়েছেন।