পাকিস্তান বদলায়নি, বদলে গিয়েছেন ইমরান খানই, পাক ভোটে তিনিই সবচেয়ে খারাপ বিকল্প
পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনে ইমরান খান, শরীফ ও ভুট্টো'দের চেয়ে এগিয়ে আছেন। কিন্তু বিশ্লেষকরা বলছেন যে তিনি সব থেকে খারাপ পছন্দ।
পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনে শরিফ ও ভুট্টোদের থেকেও এগিয়ে রাখা হচ্ছে ইমরান খানকে। পাক জনতার অনেকেই মনে করছেন চিরাচরিত রাজনৈতিক পরিবারগুলির বাইরে ইমরান হয়তো সত্যি কিছু করে দেখাতে পারবেন। কিন্তু পাকিস্তানি রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন পাক নির্বাচনে সবচেয়ে খারাপ বিকল্প হলেন ইমরান।
তাঁদের দাবি, পাক রাজনীতিকে বদলাতে এসে ইমরান নিজেই বদলে গিয়েছেন। কিরকম? অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির প্রাক্তন এই ছাত্র রাজনৈতিক জীবনের শুরুতে ধর্মীয় রক্ষণশীলদের তীব্র বিরোধী ছিলেন। ২০১১ সালে ধর্মের সমালোচনা করার জন্য পাক পঞ্জাবের গভর্নর সালমান তসীরকে গুলি করে হত্যা করেছিলেন তাঁরই দেহরক্ষী মালিক মুমতাজ হুসেন কাদরি।
সেই সময় কাদরির ওই কাজের প্রবল সমালোচনা করেন ইমরান। আর পাঁচজন সাধারণ খুনির চোখেই কাদরিকে দেখতে হবে - একথাও বলেছিলেন তিনি। কিন্তু এখন সেসব ভাবনা পাল্টে গিয়েছে। সবকিছু পাল্টে দেয় ২০১৩ সালের নির্বাচন। পাক জনতার মধ্যে প্রবল আলোড়ন সৃষ্টি করেও ভোটের ময়দানে বিশেষ কিছু করে উঠতে পারেননি ইমরান খান। তাঁর দল পিটিআই তৃতীয় স্থান পায় সাধারণ নির্বাচনে।
এরপরই ইমরান ধীরে ধীরে রক্ষণশীল নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াতে সুরু করেন। তিনি বোঝেন ক্ষমতা পেতে গেলে একদিকে সেনাবাহিনীর সমর্থন আদায় করতে হবে অপরদিকে একটি মুসলিমপন্থী অবস্থান নিতে হবে। আর তা করতে গিয়েই বদলে গিয়েছেন ইমরান। নওয়াজ শরীফের আমলে কাদরিকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। এখন ইমরানের দল কাদরির ছবি তাদের প্রচারে এনে বলছে কাকে ভোট দেবেন, যারা কাদরিকে হত্যা করেছে তাদের, নাকি যারা নির্বাচনী ফ্ল্যাগে কাদরিকে স্মরণ করছে তাদের?
শুধু তাই নয়, একের পর এক সভায় ইমরান আহমদী মুসলিমদের সমালোচনা করেছেন, বলেছেন, হজরত মহম্মদই শেষ নবি। সোচ্চারে ঘোষণা করেছেন পারিস্তানের আইনের ২৯৫ সি ধআরাকে। যে ধারা অনুযায়ী হজরত মহম্মদকে কোন প্রকার সমালোচনা করলেই কোনও ব্যক্তিকে মৃত্য়ুদণ্ড দেওয়া হয়।
এর পাশাপাশি সেনাদের সঙ্গে তাঁর য়োগসাজশের বিষয়টিও প্রকাশ্যে এস গিয়েছে। সেনারা খোলামেলাই তাঁকে সমর্থন জোগাচ্ছেন। তাঁকে জেতাতে সংবাদমাধ্যমের উপরেও হস্তক্ষেপ করেছে পাক সেনা। ফলে ইমরান জিতলে যে আরও একজন পাক সেনার পুতুল হিসেবেই তাঁকে শাসন করতে হবে তা স্পষ্ট।
এই দুই বিষয়ের সঙ্গে তাঁর বিপক্ষে আছে প্রশাসনিক অনভিজ্ঞতার অভিযোগও। দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতি করে আসলেও কোথাও কোনও প্রশাসন চালানর অভিজ্ঞতা তাঁর নেই। ২০১৩ সালে নির্বাচনে খাইবার পাখতুনিয়া প্রদেশের শাসন ক্ষমতা হাচে পেয়েছিল পিটিআই। কিন্তু যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তার কিছুই এই প্রদেশএ করে দেখাতে পারেননি ইমরান।
তিনি কথা দিয়েছিলেন খাইবার পাখতুনিয়া প্রদেশকে পাকিস্তানের আর্শ প্রদেশ হিসেবে গড়ে তুলবেন। কিন্তু বাসিন্দাদের অভিযোগ, কার্যক্ষেত্রে কোনও বদলই আসেনি এই প্রদেশে। যেমনকা, তেমনটাই রয়ে গিয়েছে। প্রসাসনের সঙ্গে পিটিআই নেতা কর্মীরা কোনওরকম সহায়তা করে না বলেও অভিযোগ রয়েছে। দলের অনেক স্থানীয় নেতা আবার ইমরান ও কাইবার পাখতুনিয়ার মুখ্যমন্ত্রীর উপরও ক্ষুব্ধ।
সেই সঙ্গে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন ইমরানের রাজনীতির সবটাই আবেগ নির্ভর। বাস্তবোচিত কোনও পরিকল্পনা করার তাঁর ক্ষমতা নেই। এবারের নির্বাচনেই যেমন ইমরান তিনচি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। বলেছেন একটি সার্বভৌম বিদেশ নীতি গঠনের কথা। বলেছেন পাকিস্তানকে ইসলামী কল্যান রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলার কথা। এবং চিন মডেলে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটানোর কথা। কিন্তু এই প্রতিশ্রুতিগুলি কিভাবে সম্পন্ন করবেন তাঁর কোনও বিস্তারিত পরিকল্পনা তাঁর হাতে নেই।
ফলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন পাকিস্তানীদের সামনে ভোট দেওয়ার বিকল্পের সবকটাই খারাপ হলেও সবচেয়ে খারাপ ইমরান খানই। তবে এবারের নির্বাচনে সবচেয়ে সুবিধাজনক অবস্থায় রয়েছেন ইমরানই। কারণ পিএমএল(এন) ও পিপিপি - পাকিস্তানের দুই প্রধান দলের মুখ্য নেতারাই এখন দুর্নীতি মামলায় জড়িয়ে হাজতবাস করছেন। এই অবস্থায় ইমরাণ অন্তত তাঁর দুর্নীতিমুক্ত স্বচ্ছ ভাবমূর্তিটি ধরে রেখেছেন।