দ্বিতীয় ইনিংসে মোদী নেমন্তন্ন করলেন বিমসটেককে; পাকিস্তান, চিনকে বার্তা দিলেন তিনি?
দ্বিতীয় দফায় প্রধানমন্ত্রী হয়ে নরেন্দ্র মোদী ফের পাঁচ বছর আগের মতোই সূচনা করলেন। আগামী ৩০ মে মোদীর শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে নয়াদিল্লি বঙ্গোপসাগরের সন্নিহিত অঞ্চলের বিমসটেক (বে অফ বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টি
দ্বিতীয় দফায় প্রধানমন্ত্রী হয়ে নরেন্দ্র মোদী ফের পাঁচ বছর আগের মতোই সূচনা করলেন। আগামী ৩০ মে মোদীর শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে নয়াদিল্লি বঙ্গোপসাগরের সন্নিহিত অঞ্চলের বিমসটেক (বে অফ বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টি-সেক্টরাল টেকনিক্যাল এন্ড ইকোনোমিক কো-অপারেশন) দেশগুলিকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। বিমসটেক-এর মধ্যে ভারত ছাড়াও রয়েছে বাংলাদেশ, মিয়ানমার, শ্রীলঙ্কা, তাইল্যান্ড, ভুটান এবং নেপাল। এছাড়াও মরিশাসের প্রধানমন্ত্রী এবং এই মুহূর্তে সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন-এর পৌরোহিত্য থাকা কিরগিস্তানের রাষ্ট্রপতিকেও আমন্ত্রণ পাঠানো হয়েছে অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার জন্যে। বিদেশমন্ত্রকের তরফে জানানো হয়েছে যে এই আমন্ত্রণগুলি পাঠানো হয়েছে ভারত সরকারের 'প্রতিবেশী সর্বপ্রথমে' নীতির উপরে ভিত্তি করেই।
আগেরবার পাকিস্তানকে আমন্ত্রণ জানিয়ে দীর্ঘ মেয়াদে লাভ হয়নি
উল্লেখ্য, সম্প্রতি দেশের সপ্তদশ সাধারণ নির্বাচনে মোদীর বিজেপি নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক এলায়েন্স ৫৪৩টি লোকসভা আসনের মধ্যে ৩৫৩টি পেয়ে বিপুল জনাদেশে নিয়ে ক্ষমতায় আসে। সংখ্যার পরিপ্রেক্ষিতে যা ২০১৪-র ঐতিহাসিক জয়ের চেয়েও বড়।
২০১৪-র জয়ের পরে মোদী আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক গোষ্ঠী সার্ক-এর সদস্য রাষ্ট্রগুলিকে যার মধ্যে পাকিস্তানও ছিল। সেদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফকে আমন্ত্রণ জানিয়ে মোদী বেশ কূটনৈতিক দৃষ্টান্ত খাড়া করেন সেবারে। যদিও দীর্ঘ মেয়াদে মোদীর সেই শান্তিমূলক বার্তা কার্যকরী হয়নি এবং নয়াদিল্লি এবং ইসলামাবাদের মধ্যে সম্পর্কের আরও অবনতি ঘটেছে।
দ্বিতীয় ইনিংসে মোদী পাকিস্তানের প্রতি খুব সদয় হবেন না বোধহয়
এবারে তাই সার্ক-কে অবজ্ঞা করে মোদী প্রশাসন ডাকল বিমসটেক-এর দেশগুলিকে। এর মধ্যে দিয়ে দু'টি জিনিস পরিষ্কার। এক, ইমরান খানের পাকিস্তানকে সরাসরি উপেক্ষার বার্তা দেওয়া যার অর্থ তাঁর দ্বিতীয় মেয়াদে মোদীর ইসলামাবাদ নীতিতে নরমপন্থা বিশেষ দেখা যাবে না। পাকিস্তানের কাছে হয়তো এটা প্রতীকী বিরোধিতাই মনে হবে কিন্তু মোদী শপথ নেওয়ার আগেই বুঝিয়ে দিলেন যে পাকিস্তান প্রসঙ্গে তিনি দ্বিতীয়বার নিঃশর্ত ভদ্রতা দেখাতে রাজি নন; বিশেষ করে পুলওয়ামা-বালাকোটের পরে তো আরওই নয়।
সার্কের কি তবে ছুটি হয়ে গেল মোদীর এই পদক্ষেপে?
দ্বিতীয়ত, বিমসটেক-এর দেশগুলিকে ডেকে মোদী সার্ক-এর মোটামুটি মৃত্যুঘন্টা বাজিয়ে দিলেন এবং এটাও প্রমাণিত হল যে ভারত-পাক বৈরী কাছে সংগঠনবাদও ঠুনকো। সার্কের জন্মলগ্নে ভারতের নেতৃত্বে ছিলেন প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী; অতএব সার্ককে অবজ্ঞার মধ্যে দিয়ে মোদী কংগ্রেসি বিদেশনীতির কফিনেও আরেকটি পেরেক পুঁতে দিলেন।
পাশাপাশি, বিমসটেক-কে আমন্ত্রণ করে মোদীর নয়া সরকার এটাও বোঝাতে চাইল যে "প্রতিবেশী সর্বপ্রথমে" এবং "পূবে বন্ধু বাড়াও" নীতির সংমিশ্রনে ভারত এখন বিদেশনীতির একটি বড় অধ্যায় তৈরী করতে চাইছে। বিমসটেক-এর দেশগুলির বেশিরভাগই উন্নতিশীল অর্থনীতি এবং এদের সংস্পর্শে এসে ভারত বড় ধরনের লাভ পেতে পারে।
চিনের বেল্ট এন্ড রোড প্রকল্পকেও বার্তা?
বিমসটেক দেশগুলিকে ডাকার আরেকটি কারণ হচ্ছে চিনের প্রতি একটি পরোক্ষ বার্তা। দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশকে চিন নিজের বেল্ট এন্ড রোড ইনিশিয়েটিভ-এর মাধ্যমে নিজের প্রভাবে নিয়ে আসার মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে। ভারতের পক্ষে এটা মোটেই সুখবর নয় আর তাই এই অঞ্চলের দেশগুলিকে ডেকে চিনকে পাল্টা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন পূনর্নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী।
পূর্ব ভারতে উন্নয়ন এলে বিজেপি-বিরোধীরা আরও কোনঠাসা হতে পারেন
তবে, মোদীর এই আমন্ত্রণের কূটনীতির একটি ভালো দিক রয়েছে। যদি বিমসটেক-এর দেশগুলির সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক আরও দৃঢ় হয় এবং অর্থনৈতিক খাতে দেশ মুনাফা লোটে, তাহলে ভৌগোলিক কারণেই উপকৃত হবে দেশের পূর্ব ক্ষেত্র যার উন্নয়ন নিয়ে মোদী এর আগে অনেকবার গলা চড়িয়েছেন। যদি এই নীতির ফলে কলকাতার নামযশ বাড়ে এবং এই অঞ্চলে অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষণ দেখা যায়, তাহলে কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ সহ বেশ কিছু রাজ্যে বিজেপির প্রভাব আরও বাড়বে।
বিরোধীরা তৈরী আছেন তো?