কিম জং-আনের উপস্থিতিতে হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার দাবি উত্তর কোরিয়ার
উত্তর কোরিয়া বলছে যে তারা আরো একটি হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছে এবং এই পরীক্ষা তাদের নেতা কিম জং-আন প্রত্যক্ষ করেছেন।
রাষ্ট্রীয় মাধ্যমে বলা হয়েছে ক্ষেপণাস্ত্রটি নিক্ষেপ করা হয় মঙ্গলবার এবং সমুদ্রে প্রায় ১,০০০ কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার আগে এটি তার দিক পরিবর্তন করতেও সক্ষম হয়।
বলা হচ্ছে, এটি উত্তর কোরিয়ার তৃতীয় হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা।
হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র এমন এক প্রযুক্তি যা খুব সহজে শনাক্ত করা যায় না। এটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের চাইতেও বেশি সময় নজর এড়িয়ে চলতে পারে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, মি. কিমের উপস্থিতিতে এই পরীক্ষা চালানোর অর্থ হচ্ছে ক্ষেপণাস্ত্রের বিষয়ে দেশটির প্রযুক্তির উন্নতি হয়েছে।
সবশেষ এই পরীক্ষার মাত্র কয়েকদিন আগে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং-আন তার দেশের প্রতিরক্ষা ক্ষমতা আরো শক্তিশালী করার কথা ঘোষণা দিয়েছিলেন।
গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রসহ ছ'টি দেশ এক যৌথ বিবৃতিতে উত্তর কোরিয়ার চালানো আরো একটি ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার নিন্দা করে এবং এই অঞ্চলকে "অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে এরকম কর্মকাণ্ড" থেকে বিরত থাকার আহবান জানায়।
দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক বাহিনী উত্তর কোরিয়ার তৃতীয় এই হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষাকে প্রাথমিকভাবে ততোটা গুরুত্ব দেয়নি। তবে পরে তারা বলে যে এই পরীক্ষা থেকে বোঝা যায় আগেরগুলোর তুলনায় এই প্রযুক্তি "উন্নত" হয়েছে।
দক্ষিণ কোরিয়ার সংবাদ ওয়েবসাইট ইওনহ্যাপে এই মন্তব্য করা হয়েছে।
উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদ মাধ্যম কেসিএনএ এই পরীক্ষার প্রশংসা করে বলা হয়েছে হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রটি "পরিচালনার ক্ষেত্রে বড় ধরনের" উন্নতি হয়েছে যা "চূড়ান্ত এই পরীক্ষার মাধ্যমে সফলভাবে যাচাই করে দেখা হয়েছে।"
তাদের রিপোর্টে দাবি করা হয় ইঞ্জিনবিহীন এই ক্ষেপণাস্ত্রটি লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করার আগে ৬০০ কিলোমিটার দূরে "উপরের দিকে উঠে" যায় এবং আরো ২৪০ কিলোমিটার দূরে "স্ক্রুর মতো ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে" সামনের দিকে অগ্রসর হয়।
ধারণা করা হয় যে উত্তর কোরিয়া ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে প্রথমবারের মতো হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালায়।
কেন এতো উদ্বেগ
হাইপারসনিক গ্লাইড মিসাইল বেশ কিছু কারণে বিপদজনক।
এই মিসাইল ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের মত নির্দিষ্ট অধি-বৃত্তাকার গতিপথে চলে না, তার পক্ষে প্রতিরক্ষা ব্যূহকে এড়িয়ে এঁকে-বেঁকে চলা সম্ভব, আর এগুলোকে ট্র্যাকিং বা চিহ্নিত করাও কঠিন।
এছাড়াও হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র খুব অল্প সময়ের মধ্যে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে।
শব্দের চেয়েও পাঁচগুণ বেশি গতিতে ছুটতে পারে হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র। এই গতি ঘণ্টায় প্রায় ৬,২০০ কিলোমিটার।
বলা হচ্ছে এই মিসাইল প্রতি সেকেন্ডে পাঁচ মাইল পর্যন্ত গতিতে ছুটতে পারে, উপগ্রহ থেকে আসা সতর্ক সংকেতকে বোকা বানাতে পারে, একে মাঝপথে বাধা দেয়ার মতো প্রতিপক্ষের কোন যন্ত্র বা ক্ষেপণাস্ত্রকেও ফাঁকি দিতে পারে।
তাই আকস্মিক আক্রমণের জন্য এগুলো হবে খুবই উপযোগী।
বিবিসির নিরাপত্তা বিষয়ক সংবাদদাতা ফ্র্যাঙ্ক গার্ডনার বলছেন, এসব হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ে উদ্বেগের কারণ হচ্ছে, এর সঙ্গে ওয়ারহেড হিসেবে শক্তিশালী বিস্ফোরক অথবা পরমাণু বোমাও যুক্ত করা সম্ভব।
উত্তর কোরিয়া ছাড়াও আরো কিছু দেশ হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করার চেষ্টা করছে যাদের মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র এবং চীন।
কিম জং-আনের উপস্থিতি
দক্ষিণ কোরিয়ার সংবাদ মাধ্যমে বলা হচ্ছে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং-আন ক্ষেপণাস্ত্র পরিদর্শনে গিয়ে বলেছেন তার দেশের "কৌশলগত সামরিক শক্তি সংখ্যা এবং গুণগত মানে বাড়াতে হবে।"
বলা হচ্ছে ২০২০ সালের মার্চ মাসের পর মি. কিম এই প্রথম এধরনের ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার সময় উপস্থিত ছিলেন। বিশ্লেষকরা বলছেন, তার এই উপস্থিতি সম্পর্কে যে ধরনের প্রচারণা চালানো হচ্ছে সেটাও তাৎপর্যপূর্ণ।
"মি. কিম হয়তো অন্যান্য পরীক্ষাগুলোতে আনুষ্ঠানিকভাবে উপস্থিত ছিলেন না। তবে এবারের পরীক্ষায় তার উপস্থিতি সংবাদপত্রে যেভাবে তুলে ধরা হচ্ছে সেটা গুরুত্বপূর্ণ," বলেন চ্যাড ও'ক্যারল, কোরিয়া রিস্ক গ্রুপের প্রধান নির্বাহী। এই গ্রুপটি উত্তর কোরিয়ার কর্মকাণ্ডের ওপর নজর রাখে।
সম্পর্কিত খবর:
চীন, রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র - সবাই কেন 'হাইপারসনিক' মিসাইল পেতে চাইছে
হাইপারসনিক মিসাইল পরীক্ষা চালানোর দাবি উত্তর কোরিয়ার
চীনের হাইপারসোনিক পরীক্ষা কি নতুন অস্ত্র প্রতিযোগিতার ইঙ্গিত?
"এর অর্থ হচ্ছে তিনি যে এধরনের নতুন প্রযুক্তির সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে জড়িত সেটা নিয়ে তার মধ্যে কোনো উদ্বেগ নেই, এবং যুক্তরাষ্ট্র এই ঘটনাকে কিভাবে দেখছে সেটাকেও তিনি খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছেন না," বলেন তিনি।
এধরনের পরীক্ষা বন্ধ করার জন্য এর আগে যুক্তরাষ্ট্র ও জাতিসংঘের পক্ষ থেকে উত্তর কোরিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে, কিন্তু কিম জং-আন তাতে কখনোই কর্ণপাত করেন নি।