বাংলাদেশে চলছে তীব্র তাপপ্রবাহ, সুস্থ থাকতে যেসব সতর্কতা অবলম্বন করবেন
বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, এই মূহুর্তে দেশে চলছে একটি তীব্র তাপপ্রবাহ, যা আরো অন্তত দুইদিন চলবে। বৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত এই তাপদাহ কমবে না। এই তাপ্রবাহের মধ্যে নিজেকে সুস্থ রাখতে কী সতর্কতা দরকার?
বাংলাদেশে এই মূহুর্তে চলছে একটি তীব্র তাপপ্রবাহ। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, এটি আরো অন্তত দুইদিন চলবে। বৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত এই তাপদাহ কমবে না।
আবহাওয়াবিদ মোঃ শাহীনুল ইসলাম বলেছেন, ২৯শে এপ্রিলের আগে বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই। "২৯শে এপ্রিল দেশের কিছু কিছু জায়গায় বৃষ্টি হবে, কিন্তু সেটি একযোগে শুরু হওয়ার সম্ভাবনা কম।"
ফলে শীঘ্রই গরমের তীব্রতা কমছে না বলে মনে করেন এই আবহাওয়াবিদ।
বাংলাদেশে ২০২১ সালের এপ্রিলে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪১ দশমিক দুই ডিগ্রি পর্যন্ত পৌঁছে তার আগের ২৬ বছরের রেকর্ড ভেঙেছিল।
কিন্তু গতকাল বাংলাদেশের রাজশাহী, পাবনা এবং চুয়াডাঙ্গা এই তিনটি জেলায় তাপমাত্রা ছিল ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
তীব্র তাপপ্রবাহ কখন হয়?
আবহাওয়া অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, কোন এলাকায় যদি তাপমাত্রা ৪০ থেকে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকে তাহলে তাকে বলে তীব্র তাপপ্রবাহ।
* গরমে অসুস্থতা থেকে রক্ষা পাওয়ার ১০ উপায়
* তীব্র দাবদাহ যেভাবে মৃত্যুরও কারণ হতে পারে
* তীব্র দাবদাহের মধ্যে যেভাবে নিজেকে সুস্থ রাখবেন
তাপমাত্রা যখন ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকে তাকে বলে মাঝারি তাপপ্রবাহ এবং তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকলে সেটিকে মৃদু তাপপ্রবাহ বলে।
বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার মতে, কোন জায়গার দৈনিক যে গড় তাপমাত্রা সেটি পাঁচ ডিগ্রি বেড়ে গেলে এবং পরপর পাঁচদিন তা চলমান থাকলে তাকে হিটওয়েভ বা তাপপ্রবাহ বলা হয়।
অনেক দেশ এ সংজ্ঞা নিজের দেশের পরিস্থিতি অনুযায়ী ঠিক করে।
তবে সার্বিকভাবে তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রির ওপরে উঠলে শরীর নিজেকে ঠাণ্ডা করার যে প্রক্রিয়া সেটি বন্ধ করে দেয়।
যে কারণে এর বেশি তাপমাত্রা হলে তা যেকোন স্বাস্থ্যবান লোকের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে।
'বিছানা আসবাব সব গরম হয়ে আছে'
চুয়াডাঙ্গায় গত তিনদিন ধরেই তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে।
চুয়াডাঙ্গা শহরের একজন বাসিন্দা উম্মে রোমানা।
তিনি বলছেন, গত তিন-চারদিন ধরেই তাপমাত্রা বেশি, এর মধ্যে গত দুইদিনে সে তীব্রতা অনেক বেড়েছে।
তিনি বলেন, "ভয়াবহ গরম। ঘরের বিছানা-বালিশ, আসবাবপত্র সব গরম হয়ে আছে। ঘরের যত ফ্যান আছে, সিলিং ফ্যান, টেবিল ফ্যান সব চালিয়েও আমরা একটু ঠাণ্ডা হতে পারছি না।"
"আমার বাবা-মা রোজা রাখছিলেন, কিন্তু বাবা গরমের কারণে এখন দুইদিন ধরে রোজা রাখতে পারছেন না। এমনি সময় উনি দিনের বেলায় বাইরে যেতেন, কিন্তু এখন এই তীব্র গরমে সেটা যাচ্ছেন না," বলেন মিজ রোমানা।
তিনি আরো বলেছেন, বাড়ির সবাই শরীর জ্বালাপোড়া থেকে শুরু করে পানিশূণ্যতাজনিত বিভিন্ন শারীরিক সমস্যার মুখে পড়েছেন।
একই অবস্থা রাজশাহী, পাবনা এবং যশোরেও।
তীব্র তাপপ্রবাহ নিয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস
বাংলাদেশে ২৪শে এপ্রিল থেকে তীব্র তাপপ্রবাহ চলছে বলে বলছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
রাজশাহী, পাবনা এবং চুয়াডাঙ্গা জেলার বাইরে যশোরেও তীব্র তাপপ্রবাহ চলছে।
এর মধ্যে ২৪শে এপ্রিল যশোরের তাপমাত্রা ছিল ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা গতকাল ৪০ দশমিক দুই ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে এসেছে।
আবহাওয়াবিদ মি. ইসলাম বলেছেন, বাংলাদেশে সাধারণত মার্চ থেকে মে মাসকে বছরের উষ্ণতম সময় ধরা হয়, এর মধ্যে এপ্রিল মাসেই তাপমাত্রা সবচেয়ে বেশি থাকে।
"ফলে এই সময়ে এই তাপমাত্রা একটু বেশিই থাকে, কিন্তু এ বছর দেখা যাচ্ছে তাপমাত্রা কিছুটা বেশি এবং সেটি আরো কয়েকদিন চলবে," বলেন তিনি।
এই চরমভাবাপন্ন আবহাওয়ার জন্য মূলত জলবায়ু পরিবর্তনকে দায়ী করেন আবহাওয়াবিদেরা।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস বলছে, বরিশাল, পটুয়াখালী, দিনাজপুর, নীলফামারী ও রাঙ্গামাটি অঞ্চলসহ ঢাকা বিভাগ, রাজশাহী এবং খুলনা বিভাগের বাকি অংশের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং সেটি অব্যাহত থাকতে পারে।
ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস বলা হয়েছে, যদিও আর্দ্রতার কারণে বাস্তবে গরম ছিল আরো বেশি।
ঢাকা বিভাগের মধ্যে গোপালগঞ্জ জেলায় তাপমাত্রা থাকবে ৩৭ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
সাধারণত এরকম সময়ে দিনের তাপমাত্রা রাতে কিছুটা কমে আসে, কিন্তু আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস বলছে, আপাতত সে সম্ভাবনা নেই। রাতেও তাপমাত্রা উষ্ণই থাকবে।
এ সময়ে বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ ৮৫ শতাংশ থাকবে বলে বলা হচ্ছে।
মূলত বাতাসে আর্দ্রতা বেশি থাকলে গরম বেশি অনুভূত হয়।
পরবর্তী তিনদিনেও আবহাওয়া সামান্যই পরিবর্তন হবে।
পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, সিলেট এবং ময়মনসিংহ বিভাগের দুয়েকটি জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।
এছাড়া দেশের অন্যত্র আংশিক মেঘলা আকাশ দেখা গেলেও আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকবে।
তাপপ্রবাহে সতর্কতা
বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি, জার্মান রেড ক্রস এবং বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর যৌথভাবে ২০২১ সালে একটি গবেষণা পরিচালনা করে, যার ফলাফলে দেখা গেছে ঢাকায় হিটওয়েভ বা তাপপ্রবাহের প্রবণতা বেড়েই চলেছে।
আর হিটওয়েভের কারণে বাড়ছে স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়াসহ নানা ধরণের স্বাস্থ্য ঝুঁকি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে বয়ষ্ক মানুষ, শিশু, গর্ভবতী, খেলোয়াড় এবং যারা বাইরে কায়িক পরিশ্রমের পেশার সাথে জড়িত তারা সবচাইতে বেশি স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে থাকেন তাপপ্রবাহের সময়।
সরাসরি সূর্যের নিচে যাদের কাজ করতে হয় তাদের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। তাই তাপপ্রবাহের সময় যেসব সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে:
- বেলা ১১টা থেকে ৩টা পর্যন্ত সময় যখন তাপমাত্রা সবচেয়ে বেশি থাকে সেই সময়টাতে বাইরের কাজ কমিয়ে আনার চেষ্টা করতে হবে।
- ঘরের ভেতরে বা ছায়া আছে এমন জায়গায় থাকার চেষ্টা করতে হবে।
- প্রচুর পানি এবং পানি জাতীয় পানীয়, যেমন শরবত, ডাব, ফলের রস পান করতে হবে।
- যতবার সম্ভব গোসল করুন।
- বারবার মুখ ও শরীরে পানির ঝাপটা দিন।
- যথেষ্ট বিশ্রাম নিতে হবে।
- ঢিলেঢালা এবং বাতাস পরিবহনকারী পোশাক পরুন।
- ঘরের বাইরে সানগ্লাস ব্যবহার করুন।
বিবিসি বাংলায় অন্যান্য খবর:
৪৪ বিলিয়ন ডলারে টুইটার কিনতে যাচ্ছেন এলন মাস্ক
অনুমতি ছাড়া ছবি-ভিডিও আপলোড যেসব ঝামেলা ডেকে আনতে পারে
আমেরিকা কি চাইছে ইউক্রেন যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হোক?
বাংলাদেশে প্রথমবারের মত সিজোফ্রেনিয়ার চিকিৎসার গাইডলাইন