রাষ্ট্রসংঘে প্যালেস্টাইনের বিরোধিতা করে ইজরায়েলকে সমর্থন করল ভারত; বিদেশনীতিতে বড় বদল
নরেন্দ্র মোদীর প্রধানমন্ত্রীত্বে ভারতের বিদেশনীতিতে যে বড়সড় বদল অবশ্যম্ভাবী, তা ক্রমেই পরিষ্কার হচ্ছে। ইজরায়েল এবং প্যালেস্টাইনের বিষয়ে নয়াদিল্লি এতদিন দু-নৌকাতে পা দিয়ে চললেও এবারে তারা পরিষ্কার ইজরা
নরেন্দ্র মোদীর প্রধানমন্ত্রীত্বে ভারতের বিদেশনীতিতে যে বড়সড় বদল অবশ্যম্ভাবী, তা ক্রমেই পরিষ্কার হচ্ছে। ইজরায়েল এবং প্যালেস্টাইনের বিষয়ে নয়াদিল্লি এতদিন দু-নৌকাতে পা দিয়ে চললেও এবারে তারা পরিষ্কার ইজরায়েলের পক্ষে ঝুঁকে পড়ল।
ভারত ইজরায়েলের পক্ষে ভোট দিল; পাক, চিন, রাশিয়া বিপক্ষে
গত সপ্তাহে রাষ্ট্রসংঘে ভারত প্যালেস্টাইনের মানবাধিকার-সম্পর্কিত এনজিও 'শাহেদ'-এর রাষ্ট্রসংঘের ইকোনোমিক এন্ড সোশ্যাল কাউন্সিল-এ পর্যবেক্ষক হিসেবে অন্তর্ভুক্তির বিরোধিতা করে। এই বিষয়ে ইজরায়েলের একটি বিরোধী প্রস্তাবনার পক্ষে সায় দেয় ভারত এবং ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বিনিয়ামিন নেতানিয়াহু ভারতকে ধন্যবাদও জানান। ইজরায়েলের দাবি মুখে ওই প্যালেস্তিনীয় গোষ্ঠীটি মানবাধিকার সম্পর্কে কাজ করার কথা বললেও আসলে সেটি একটি জঙ্গি সংগঠন যাকে ইজরায়েল ইতিমধ্যে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। ইজরায়েলের মতে, 'শাহেদ' আসলে তাদের এক নম্বর দুশমন হামাস-এর একটি অঙ্গ।
পাকিস্তান, চিন ও রাশিয়া ইজরায়েলের প্রস্তাবের বিরোধিতা করে। যদিও শেষ পর্যন্ত প্রস্তাবের পক্ষে ২৮টি ভোট এবং বিপক্ষে ১৫টি ভোট পড়ে।
১৯৯২ সালে প্রথম ইজরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক হয় ভারতের
১৯৯২ সালে প্রথম ইজরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক তৈরী হয় ভারতের; কেন্দ্রে শেষ সময়ে পি ভি নরসিংহ রাও-এর সরকার। এরপরের সময়ে ইজরায়েলের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক আরও দৃঢ় হয়েছে, সামরিক এবং রাজনৈতিক নিরিখে। নয়াদিল্লির তরফ থেকে ইজরায়েল এবং প্যালেস্টাইন ইস্যু দু'টিকে আলাদা করে দেখা শুরু হয়েছে। বিগত কয়েক বছরে ভারতের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি ইজরায়েলে গেলেও প্যালেস্টাইনে যাননি, এমন হতে দেখা গিয়েছে এবং তখনই পরিষ্কার হয়েছে যে সময় বদলাচ্ছে।
হিন্দুত্ববাদী ভারতের দৃষ্টিভঙ্গি এখন বদলেছে; ইজরায়েল তার বিশেষ বন্ধু
অতীতের সাম্রাজ্যবিরোধী ইতিহাসের দরুন ভারত এক সময়ে প্যালেস্টাইনের সমর্থন এবং ইজরায়েলের বিরোধিতা করে। ভারতের প্রথম নেতৃত্ব মনে করতেন ইজরায়েল আসলে পশ্চিমি সাম্রাজ্যবাদ এবং সম্প্রদায়গত জাতিবাদেরই প্রতীক এবং আরব বিশ্বের অন্যান্য মুসলমান-প্রধান দেশগুলির সঙ্গে যাতে সম্পর্ক খারাপ না হয়, তাই ইজরায়েলের সঙ্গে সম্পর্কটি দ্বিতীয় সারিতেই থাকত। মনে করা হত, উদারবাদী এবং ধর্মনিরপেক্ষ গণতন্ত্রের পক্ষে ইজরায়েল মোটেই স্বাস্থ্যকর নয়।
কিন্তু মোদীর আমলে সেই বিশ্বাস বদলেছে আমূল। এখন হিন্দুত্ববাদী এবং সংখ্যালঘু-বিদ্বেষী রাজনৈতিক শক্তি ভারতের শাসনযন্ত্র দখল করেছে বিপুল ভোটে জিতে এবং তা ফল দেখা যাচ্ছে চোখের সামনেই।
যদিও ইজরায়েলের সঙ্গে সুসম্পর্কের কারণ যে শুধু জাতিগত তা নয়। আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে এবং সামরিক ও অন্যান্য বাণিজ্যের ব্যাপারেও ইজরায়েল ভারতের যথেষ্ট কাছাকাছি এখন। কিন্তু মৌলিকভাবে যে দুই দেশের মধ্যে মতাদর্শগত মিত্রতা এখন অনেক বেশি, তা নিয়ে কোনও দ্বিমত নেই।