For Quick Alerts
ALLOW NOTIFICATIONS  
For Daily Alerts
Oneindia App Download

মরিশাসের ইন্টারনেটে আড়ি পাতার অভিযোগ ভারতের বিরুদ্ধে

  • By Bbc Bengali

সেফ সাবমেরিন কেবলের একটি গুরুত্বপূর্ণ হাব হল মরিশাস
Getty Images
সেফ সাবমেরিন কেবলের একটি গুরুত্বপূর্ণ হাব হল মরিশাস

ভারত মহাসাগরীয় দ্বীপরাষ্ট্র মরিশাসে ইন্টারনেটে 'আড়ি পাতা'র চাঞ্চল্যকর অভিযোগকে কেন্দ্র করে সরকার তুমুল চাপের মুখে পড়েছে, আর এই আড়ি পাতার চেষ্টায় সরাসরি জড়িয়ে গেছে ভারতের নাম।

এই বিতর্কে ভারত অবশ্য আনুষ্ঠানিকভাবে মরিশাসের প্রধানমন্ত্রী প্রভিন্দ জুগানাথের পাশেই দাঁড়িয়েছে। কিন্তু মরিশাসে সঙ্কট থিতোনোর কোনও লক্ষণই দেখা যাচ্ছে না, বরং তা ক্রমেই ঘনীভূত হচ্ছে।

মরিশাসের বিরোধী দলগুলো এখন প্রধানমন্ত্রী জুগানাথের ইস্তফার দাবিতে পার্লামন্টের ভেতরে ও বাইরে তীব্র আন্দোলনও শুরু করেছে। তার বিরুদ্ধে 'চরম দেশদ্রোহে'র অভিযোগ পর্যন্ত আনা হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী জুগানাথের বিরুদ্ধে মূল অভিযোগ হল, একটি আন্তর্জাতিক সাবমেরিন কেবল প্রকল্পে তিনি বেআইনিভাবে ভারতীয় প্রযুক্তিবিদদের একটি 'স্নিফিং ডিভাইস' বা গোপনে নজরদারি চালানোর যন্ত্র বসানোর সুযোগ করে দিতে চেয়েছিলেন।

ওই প্রকল্পটিতে শুধু ভারত বা মরিশাসই নয় - মালয়েশিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা বা ফ্রান্সের রিইউনিয়ন আইল্যান্ডের মতো অন্যান্য দেশও যুক্ত।

নরেন্দ্র মোদী ও প্রভিন্দ জুগানাথ
Getty Images
নরেন্দ্র মোদী ও প্রভিন্দ জুগানাথ

এরই মধ্যে মরিশাসের স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে বেরিয়েছে একজন গোঁফওলা ভারতীয় ব্যক্তির ছবি - আপাতদৃষ্টিতে যাকে মরিশাসে যাওয়া ভারতীয় টেকনিক্যাল টিমের নেতা বলে ধারণা করা হচ্ছে - এবং সে দেশের মিডিয়ায় তাকে 'মুশটাচ ম্যান' বলে বর্ণনা করা হচ্ছে।

এই 'মুশটাচ ম্যান' কীভাবে মরিশাসের অত্যন্ত স্পর্শকাতর একটি ইন্টারনেট ল্যান্ডিং স্টেশনে যেতে পারলেন, তা নিয়েও উঠছে নানা প্রশ্ন।

বিতর্কের সূত্রপাত যেভাবে

গত মাসের ৩০ তারিখ মরিশাস টেলিকমের গত সাত বছরের সিইও শেরি সিং হঠাৎ অপ্রত্যাশিতভাবে তাঁর পদ থেকে ইস্তফা দেন।

শেরি সিং-কে সরকারের খুবই ঘনিষ্ঠ এবং প্রধানমন্ত্রী জুগানাথের আস্থাভাজন বলেই মনে করা হত।

পদত্যাগের সময় তিনি সংস্থার কর্মীদের পাঠানো এক বার্তায় লেখেন, "নিজের মূল্যবোধের সঙ্গে আপস করে আমার পক্ষে কাজ চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়, তাই আমি সরে দাঁড়াতে বাধ্য হলাম।" কিন্তু তখন তিনি এর বেশি আর কিছু ভেঙে বলেননি।

https://twitter.com/svaradarajan/status/1550789994624585728

পরে স্থানীয় একটি রেডিও স্টেশনে ও লাইভ টিভিতে সাক্ষাৎকার দিয়ে শেরি সিং জানান, মরিশাসের 'বেয়-দ্যু-জাকোতে' নামে যে জায়গায় সাবমেরিন কেবলের ল্যান্ডিং স্টেশন আছে এবং যেখানে বাইরের লোকদের প্রবেশ কঠোরভাবে নিষিদ্ধ - সেখানে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে একটি 'বিদেশি টিম'কে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল।

মালয়েশিয়া থেকে দক্ষিণ আফ্রিকা পর্যন্ত বিস্তৃত সাড়ে ১৩ হাজার কিলোমিটার লম্বা 'সাউথ আফ্রিকা ফার ইস্ট' বা 'সেফ' কেবলের খুব গুরুত্বপূর্ণ এই হাব বা ল্যান্ডিং স্টেশনটি মরিশাসে অবস্থিত।

সরাসরি ভারতের নাম না-করলেও ভারতের অনুরোধেই যে প্রধানমন্ত্রী জুগানাথ এই অনুমতি দিয়েছিলেন, শেরি সিং সেই ইঙ্গিতও দেন।

তিনি পরিষ্কার বলেন, "প্রধানমন্ত্রীর মূল উদ্দেশ্য ছিল সেখানে একটি স্নিফিং ডিভাইস বসানো, যাতে মরিশাসের ইন্টারনেট ট্র্যাফিকের ওপর নজরদারি চালানো যায়।"

'মোদীকে আমিই বলেছিলাম'

মরিশাসের বিরোধী দলগুলো পার্লামেন্টে এই ইস্যুতে সরকারকে চেপে ধরে গত ৫ জুলাই।

প্রধানমন্ত্রী প্রভিন্দ জুগানাথ সে দিনই পার্লামেন্টে পরিষ্কার জানিয়ে দেন, মরিশাসের ইন্টারনেট ট্র্যাফিকে 'নজরদারি, আড়ি পাতা, মনিটরিং বা রেকর্ডিংয়ের জন্য' তিনি কখনোই কোনও ডিভাইস বসানোর কথা বলেননি।

কিন্তু তার পর দিনই তিনি আর একটি বিবৃতি দেন, যেটির বক্তব্য কী অভিঘাত বয়ে আনতে পারে সেটা সম্ভবত মি জুগানাথও আন্দাজ করতে পারেননি।

মরিশাসের প্রধানমন্ত্রী প্রভিন্দ জুগানাথ
Getty Images
মরিশাসের প্রধানমন্ত্রী প্রভিন্দ জুগানাথ

ওই বিবৃতিতে তিনি বলেন, "(সাবমেরিন কেবল প্রকল্পে) একটি নিরাপত্তাগত ইস্যু দেখা দেওয়ায় মরিশাসে একটি সার্ভে করার প্রয়োজন হয়ে পড়েছিল। তখন আমি ব্যক্তিগতভাবে শ্রী নরেন্দ্র মোদীকে অনুরোধ করি মরিশাসে এই সার্ভের জন্য একটি সুদক্ষ দল পাঠানোর জন্য।"

তিনি আরও জানান, "এই কাজের জন্য সক্ষম টেকনিক্যাল টিম মরিশাসে ছিল না। আর যদি থাকতও, আমরা চেয়েছিলাম এই কাজের জন্য ভারত থেকেই টেকনিক্যাল দল আসুক।"

মরিশাস টেলিকমের সিইও শেরি সিং এই কাজে তাঁর সঙ্গে সহযোগিতা করেননি, এই ইঙ্গিত দিয়ে প্রধানমন্ত্রী আরও জানান এ জন্য তাঁকে ভারতের কাছে অস্বস্তিতেও পড়তে হয়েছিল।

"আমি ঠিক তার পর দিনই দিল্লি যাচ্ছিলাম। (মরিশাস টিলিকম যদি এরকম করে) তাহলে আমি ভারতে গিয়ে শ্রী নরেন্দ্রকে কী বলতাম বলুন তো?", সরাসরি মন্তব্য করেন প্রভিন্দ জুগানাথ।

নিষিদ্ধ দ্বীপে 'মুশটাচ ম্যান'

এরই মধ্যে মরিশাসের ল'এক্সপ্রেস পত্রিকায় একটি সিসিটিভি ফুটেজের ছবি বেরোয়, যাতে দেখা যায় 'বেয়-দ্যু-জাকোতে' ল্যান্ডিং স্টেশনে জনাকয়েক ভারতীয় প্রযুক্তিবিদ ঘোরাফেরা করছেন।

ওই পত্রিকায় দাবি করা হয়, ছবির গোঁফওলা ব্যক্তিই ভারতীয় টেকনিক্যাল টিমের নেতা কে রাধাকৃষ্ণ।

https://twitter.com/lexpressmaurice/status/1551190668965453829

এরই মধ্যে গত শুক্রবার (২২ জুলাই) রেডিওতে আর একটি ইন্টারভিউ দিয়ে শেরি সিং-ও জানান, ভারতের টেকনিক্যাল টিমের নেতার পরিচয় তাদেরও অজানা ছিল, তবে তাঁর বড় গোঁফ ছিল তিনি ওই ব্যক্তিকে 'মুশটাচ ম্যান' বলেই উল্লেখ করেন।

এরপর থেকে স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে ভারতীয় ওই ব্যক্তিকে ওই নামেই অভিহিত করা হচ্ছে।

এরপর শনিবার থেকেই মরিশাসের বিরোধী দলগুলো সরকারের ওপর চাপ বাড়াতে শুরু করেন - দেশের অন্তত দুজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী মি জুগানাথের পদত্যাগ দাবি করে বিবৃতি দেন।

বিরোধী লেবার পার্টির নেতা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী নভিন রামগুলাম বলেন, "মি জুগানাথ পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে ও সব মরিশাস-বাসীর কাছে মিথ্যা বলেছেন।"

ইন্টারনেট ল্যান্ডিং স্টেশনে 'স্নিফিং ডিভাইস' বসাতে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী দেশের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করেছেন এবং এই কাজ 'চরম দেশদ্রোহিতার সামিল' বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

লেবার পার্টির নেতা নভিন রামগুলাম
Getty Images
লেবার পার্টির নেতা নভিন রামগুলাম

বিরোধী এমএমএম পার্টির নেতা ও আর এক সাবেক প্রধানমন্ত্রী পল বেরেঙ্গারও দাবি জানিয়েছেন, ওরকম একটি স্পর্শকাতর এলাকায় কেন ভারতের টেকনিক্যাল দলকে যেতে দেওয়া হল ও সার্ভে করতে দেওয়া হল - সরকারকে সেই কৈফিয়ত দিতে হবে।

তিনিও প্রধানমন্ত্রী প্রভিন্দ জুগানাথের অবিলম্বে ইস্তফা দাবি করেছেন।

ভারত কী বলছে?

ভারত অবশ্য এই আগাগোড়াই এই বিতর্ককে লঘু করে দেখানোর চেষ্টা করে আসছে।

গত বৃহস্পতিবার (২১ জুলাই) এ বিষয়ে নির্দিষ্ট এক প্রশ্নের জবাবে দিল্লিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচী বলেন, "সত্যি বলতে কী, আমি এ বিষয়ে বিস্তারিত সব জানি তা বলতে পারছি না।"

"তবে এটুকু আমি জানি মরিশাসের প্রধানমন্ত্রী ইতিমধ্যেই একটি বিবৃতি দিয়েছেন। আমাদের দিক থেকে ওটুকুই যথেষ্ঠ, আমার তার সঙ্গে বাড়তি কিছু যোগ করার নেই", বলেন মি বাগচী।

মরিশাসে ভারতীয় সংস্কৃতির চর্চা শত শত বছর ধরে
Getty Images
মরিশাসে ভারতীয় সংস্কৃতির চর্চা শত শত বছর ধরে

ওদিকে মরিশাসের বিরোধী দলগুলো কিন্তু এই বিতর্কে তাদের প্রধানমন্ত্রীর পাশাপাশি ভারতকেও নিশানা করছে।

কেন একজন ভারতীয় নাগরিক, কুমারেসান ইলাঙ্গো-কে মরিশাসের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা নিয়োগ করা হয়েছে তারা এখন সে প্রশ্নও তুলছেন।

ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালিসিস উইং (র) বা ইন্টেলিজেন্স ব্যুরোর কর্মকর্তারাই সাধারণত অবসরের পর মরিশাসে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ পেয়ে থাকেন - এই পরম্পরা সে দেশে বহু বছর ধরে চলে আসছে।

https://twitter.com/mauritius_times/status/1550416520517410817

ভারতের সিনিয়র সাংবাদিক ও ভাষ্যকার সিদ্ধার্থ বরদারাজন লিখেছেন, "মরিশাসে দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি মানুষ ভারতীয় বংশোদ্ভূত এবং ভারতের প্রতি সার্বিকভাবে মরিশিয়ানরা বন্ধুত্বপরায়ণ হলেও এই বিতর্কের একটা বিরূপ প্রভাব দুদেশের সম্পর্কে পড়তেই পারে।"

গোপন নজরদারি চালানোর নামে ভারত যে 'সিকিওরিটি ওভাররিচ' বা নিরাপত্তার বাড়াবাড়ি চালানোর নীতি নিয়েছে, মরিশাসের এই ঘটনা তার বিপদের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করছে বলেও তিনি মনে করছেন।

তবে মরিশাসের ইন্টারনেট ল্যান্ডিং স্টেশনে সত্যিই কোনও স্নিফিং ডিভাইস বসানো হয়েছিল এবং ভারতই তার পেছনে ছিল - এটা কিন্তু এখনও সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়নি, মি বরদারাজন সে কথাও মনে করিয়ে দিয়েছেন।

কিন্তু ভারত ও মরিশাস - দু'দেশের সরকার মিলে গোপনে কোনও বেআইনি কাজে লিপ্ত হয়েছিল - এই অভিযোগকে কেন্দ্র করে মরিশাসের রাজনীতি কিন্তু ক্রমেই উত্তপ্ত হয়ে উঠছে।

English summary
India allegedly snooping in Mauritius internet system?
চটজলদি খবরের আপডেট পান
Enable
x
Notification Settings X
Time Settings
Done
Clear Notification X
Do you want to clear all the notifications from your inbox?
Settings X