'টাইম-বোমা'র কাউন্টডাউন শুরু, FATF-এর মার্কসের উপর নির্ভর করছে ইমরানের ভবিষ্যৎ
ইমরান খানের বিরুদ্ধে সুর চড়াচ্ছে পাকিস্তানের ১১টি বিরোধী দলের একটি সম্মিলিত জোট। এবং এহেন পরিস্থিতিতে পাকিস্তানি সেনার সমর্থনও হারানোর পথে ইমরান খানের সরকার। যেই পাকিস্তানি সেনার সমর্থনের উপর ভর করে দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন ইমরান, সেই সেনার হাত তাঁর মাথার উপর থেকে সরে যাওয়ার মূল কারণ কী? রাষ্ট্রসংঘের অধীনে থাকা ফিন্যানশিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্সের চোখ রাঙানি। এবং চলতি মাসেই পাকিস্তানের মার্কসশিট পেশ করে এফএটিএফ জানাবে যে পাকিস্তান কোন তালিকায় স্থান পাবে। এবং এর সঙ্গেই ঝুলে রয়েছে পাকিস্তানে ইমরানের ভাগ্য।
প্রধানমন্ত্রীর টেবিলে গোপন রিপোর্ট জমা পড়তেই লাদাখে সেনার গতিবিধি বদল
এফএটিএফ-এর তালিকায় কালো তালিকাভুক্ত হওয়ার সম্মুখীন
গত বছর থেকেই পাকিস্তান এফএটিএফ-এর তালিকায় কালো তালিকাভুক্ত হওয়ার সম্মুখীন। তবে প্রতিটি বৈঠকেই কোনও ভাবে সেই খাদের ধারে দাঁড়িয়ে থেকে বেঁচে যাচ্ছে ইমরানের সরকার। তবে এই মুহূর্তেও পাকিস্তান ধূসর তালিকায় রয়েছে। তবে পাকিস্তানি সেনা এই বিষয়টিকে ভালো চোখে দেখছে না।
হাক্কানি-তালিবানদের উপর প্রভাবকে কাজে লাগাতে চাইছে
বর্তমান পরিস্থিতিতে ইমরান খান চাইছেন যে হাক্কানি এবং তালিবানদের উপর তাদের প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে আফগানিস্তানে সংঘর্ষ বিরতি চুক্তি স্থাপন করে কিছু পয়েন্ট জোগাড় করতে। যার বদলে এফএটিএফ-এ তারা কিছুটা হলেও 'গুড বুক'-এ যায়, এবং কালো তালিকার চোখ রাঙানির থেকে মুক্তি পায়।
ভারতকে দোষ দেয় পাকিস্তান
পাকিস্তানের বরাবরের অভিযোগ, এফএটিএফ-কে রাজনৈতিক ভাবে চালিত করে পাকিস্তান বিরোধী করে তুলছে ভারত। তবে এই অভিযোগ পুরো মিথ্য়া। সন্ত্রাসবাদ দমনের ক্ষেত্রে পাকিস্তানের ভূমিকায় ক্ষুব্ধ গোটা এশিয়া প্যাসিফিক গ্রুপ৷ বিভিন্ন মহলের দাবি, তারা সন্ত্রাসে মদত দিচ্ছে। রাষ্ট্রসংঘ যখন জইশ-ই-মহম্মদ প্রধান মাসুদ আজহারকে বিশ্বের অন্যতম সন্ত্রাসবাদীর তকমা দেয় তখনই ভারতের পক্ষ থেকে এফএটিএফ-র কাছে আর্জি জানানো হয়, পাকিস্তানকেও কালো তালিকাভুক্ত দেশগুলোর আওতায় আনা হোক।
পাকিস্তানের অজুহাত
জঙ্গিনেতা হাফিজ সইদ ও আজহার মাসুদের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ দায়ের হয়নি পাকিস্তানে৷ যদিও ইসলামাবাদের দাবি, লস্কর-ই-তইবা, জামাত-উদ্-দাওয়া, জইশ-ই-মহম্মদের প্রায় ৭০০র বেশি সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেছে তারা৷ পাকিস্তানের যুক্তি, তারা আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলির সঙ্গে এই বিষয়ে সংযোগরক্ষা করে চলছে ৷ এ নিয়ে কী অগ্রগতি হচ্ছে তারও তথ্য ভাণ্ডার তৈরি করছে৷
একের পর এক আল্টিমেটাম
সন্ত্রাসবাদে অর্থ জোগান রুখতে, অর্থনৈতিক তছরুপ ও বিশ্ব অর্থনীতিতে নানা সংকটজনক পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে ১৯৮৯ সালে এফএটিএফ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল৷ ২০১৮ সালের জুনে প্যারিসের এই নজরদারি সংস্থাটি পাকিস্তানকে ধূসর তালিকাভুক্ত করে৷ এরপর থেকেই তারা সন্ত্রাসবাদ রুখতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করার জন্য একের পর এক আল্টিমেটাম দিয়ে আসছে ইমরান খানের সরকারকে।
কালো তালিকাভুক্ত করা হতে পারে পাকিস্তানকে
পাশাপাশি সতর্কবার্তা ছিল, পাকিস্তান যদি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করতে না পারে তাহলে ইরান এবং উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে সে দেশকে কালো তালিকাভুক্ত করা হতে পারে৷ কালো তালিকা এবং ধূসর তালিকার মাঝামাঝি অবস্থান অতিধূসর তালিকা। যার অর্থ দেশটির প্রতি একটি কড়া সতর্কবার্তা জারি করা, যাতে ওই দেশ নিজেদের অবস্থানের উন্নতির শেষ সুযোগ পায়৷ পাকিস্তানকে সেই বিভাগেও রাখা হতে পারে বর্তমান পরিস্থিতিতে।
আর্থিক সহায়তা পাওয়া খুব কঠিন হয়ে দাঁড়াবে
পাকিস্তান যদি ধূসর তালিকাতেই থাকে বা অতিধূসর তালিকার অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায় সেক্ষেত্রে আইএমএফ, বিশ্বব্যাঙ্ক বা ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে আর্থিক সহায়তা পাওয়া খুব কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। একেই পাকিস্তানে অর্থনীতির দশা বেহাল৷ এরপর এফএটিএফ একঘরে করে দিলে মারাত্মক চাপে পড়তে চলেছে ইমরান খানের সরকার৷
বিরোধী শিবিরে তৎপরতা
এদিকে এহেন পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়া এবং আইএসআই প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল ফৈজ হামেদ সম্প্রতি সেদেশের বিরোধী দলগুলির প্রধান নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন বলে খবর পাওয়া গিয়েছে। আর এরপরই জল্পনা শুরু হয়েছে। যেই ইমরান খানের সরকারকে গদিতে বসাতে উৎসুক ছিল সেদেশের সেনা, সেই ইমরানের উপর কি তবে মোহভঙ্গ হল তাদের।
তৈরি হয়েছে নতুন এক জোট
ইমরানকে হটাতে পাকিস্তানের বিরোধী দলগুলিকে নিয়ে ইতিমধ্যেই তৈরি হয়েছে নতুন এক জোট। পাকিস্তানি ডেমোক্রেটিক মুভমেন্ট বা পিডিএম নামক ওই জোটে সামিল হয়েছেন সেদেশের প্রায় সমস্ত বিরোধী দলগুলি। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের পদত্যাগের দাবিতে আগামী কয়েক মাসের জন্য তিন পর্যায়ে আন্দোলনের কর্মসূচি হাতে নিয়েছেন তাঁরা। এরই মধ্যে এফএটিএফ-এর মার্কস শিটের উপর নির্ভর করবে ইমরানের ভবিষ্যৎ।