For Quick Alerts
ALLOW NOTIFICATIONS  
For Daily Alerts
Oneindia App Download

জলবায়ুর পরিবর্তনে কতোটা ভূমিকা রাখছে বিমান

  • By Bbc Bengali

স্কিফোল বিমানবন্দরে পরিবেশবাদীদের অবস্থান।
Getty Images
স্কিফোল বিমানবন্দরে পরিবেশবাদীদের অবস্থান।

জলবায়ুর পরিবর্তন মোকাবেলায় মিশরে যে কপ-টুয়েন্টি সেভেন সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতিনিধিদের বিমানে করে সেখানে যোগ দেওয়ার সমালোচনা হচ্ছে সোশাল মিডিয়ায়। কারণ এসব বিমান প্রচুর পরিমাণে গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গত করে থাকে যা বায়ুমণ্ডল উত্তপ্ত হয়ে ওঠার জন্য দায়ী।

সম্মেলন শুরু হওয়ার একদিন আগে কয়েকশ' পরিবেশ আন্দোলনকারী আমস্টারডামের স্কিফোল বিমানবন্দরে জড়ো হয়ে ব্যক্তিগত বিমানের উড়ান বন্ধ করে দেয়ার চেষ্টা করে। এসময় তারা প্রাইভেট জেটের চাকার সামনে বসে থাকে এবং রানওয়েতে সাইকেল চালাতে শুরু করে।

ফ্লাইট রাডার টুয়েন্টি ফোর ওয়েবসাইট থেকে সংগৃহীত তথ্যে দেখা যায় সম্মেলন শুরু হওয়ার আগে ৪ থেকে ৬ নভেম্বর ৩৬টি ব্যক্তিগত বিমান শারম আল শেখে অবতরণ করেছে যেখানে বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

এছাড়াও আরো ৬৪টি বিমান উড়ে গেছে কায়রোতে।

এসব ফ্লাইট গেছে যুক্তরাজ্য, ইটালি, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস এবং যুক্তরাষ্ট্র থেকে। বলা হচ্ছে সম্মেলন শুরু হওয়ার আগে বিশ্বের ৪০টিরও বেশি বিমানবন্দর থেকে এসব প্রাইভেট জেট মিশরে গেছে।

ফ্লাইট রাডার টুয়েন্টি ফোর বলছে হয়তো এর চেয়েও আরো বেশি সংখ্যক ব্যক্তিগত বিমান মিশরে গেছে যা তারা ট্র্যাক করতে পারেনি।

তবে ধারণা করা হচ্ছে গত বছর যুক্তরাজ্যের গ্লাসগোতে অনুষ্ঠিত কপ-টুয়েন্টি সিক্স সম্মেলনে যতো প্রাইভেট জেট গিয়েছিল এবারের সংখ্যা তার চেয়ে কম।

এর একটা কারণ হতে পারে যে এবার তুলনামূলকভাবে কম বিশ্বনেতা শারম আল শেখের সম্মেলনে যোগ দিচ্ছেন।

বিজ্ঞানীরা বলছেন এক কিলোমিটার পথ উড়তে একটি বিমান অন্য যে কোনো পরিবহনের চেয়ে সবচেয়ে বেশি গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গত করে। তবে এই গ্যাসের পরিমাণ কতো তা বেশ কিছু বিষয়ের ওপর নির্ভর করে। যেমন বিমানের আকার, আরোহীর সংখ্যা কতো, ইঞ্জিন কতোটা দক্ষ ইত্যাদি।

যুক্তরাষ্ট্রে ইউনিভার্সিটি অব সাউথ ক্যারোলাইনার শিক্ষক ড. তানভীর ফারুক, যিনি বিমান উড্ডয়নের প্রযুক্তি নিয়ে গবেষণা করছেন, তিনি বলছেন, বিমান চলাচল জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরশীল হওয়ার কারণে এই পরিবহন জলবায়ুর পরিবর্তনে বড় ধরনের ভূমিকা রাখছে।

"বাণিজ্যিক বিমানগুলো মূলত জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার করে তাদের ইঞ্জিন চালনা করে যার ফলে এসব বিমান প্রচুর গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গত করে থাকে। এসব গ্যাসের মধ্যে রয়েছে কার্বন ডাই অক্সাইড, কার্বন মনোক্সাইড, ভোলাটাইল অর্গানিক কম্পাউন্ড, পলি এরোমেটিক হাইড্রোকার্বন ইত্যাদি। তবে কার্বন ডাইঅক্সাইডের পরিমাণই থাকে সবচেয়ে বেশি, প্রায় ৭০ শতাংশ।"

তিনি বলেন, এছাড়াও বিমান থেকে জলীয় বাষ্প নির্গত হয়। ৩০ থেকে ৪০ হাজার ফুট উঁচুতে এই জলীয় বাষ্প ঠাণ্ডা তাপমাত্রার কারণে সেখানে ঘনীভূত হয়। ফলে সেখানে কৃত্রিম মেঘ তৈরি হয়। এই মেঘ সেখানে থার্মাল প্রাচীর তৈরি করে যা বায়ুমণ্ডল উত্তপ্ত হয়ে ওঠার অন্যতম একটি কারণ।

যুক্তরাষ্ট্রে ৯/১১ হামলার পর যখন সব বাণিজ্যিক বিমানের চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল তখন ক্যালিফোর্নিয়ায় চালানো এক গবেষণায় দেখা গিয়েছিল যে সেখানে কৃত্রিম মেঘ তৈরি হচ্ছে না। তার ফলে সেখানকার তাপমাত্রা এক থেকে দুই ডিগ্রি কমে গিয়েছিল।

বিজ্ঞানীরা বলছেন মাথাপিছু যাত্রীর হিসেবে বাণিজ্যিক ফ্লাইটের তুলনায় ব্যক্তিগত বিমান অনেক বেশি গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গত করে।

এসব প্রাইভেট জেটের রয়েছে বিভিন্ন ধরনের মডেল। তবে কপ-টুয়েন্টি সেভেন সম্মেলনে যেসব ব্যক্তিগত বিমান উড়ে গেছে সেগুলোর বেশিরভাগই গাল্ফস্ট্রিম G650 যা ঘণ্টায় ৫০০ গ্যালন জ্বালানি ব্যবহার করে।

্আমস্টারডাম বিমানবন্দরে অভিনব অবস্থান কর্মসূচি
Getty Images
্আমস্টারডাম বিমানবন্দরে অভিনব অবস্থান কর্মসূচি

আমস্টার্ডাম থেকে একটি প্রাইভেট জেটের শারম আল শেখে যেতে সময় লাগে পাঁচ ঘণ্টা এবং এর জন্য প্রয়োজন হবে আড়াই হাজার গ্যালন জ্বালানির।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, প্রতি লিটার জ্বালানি থেকে নির্গত হয় আড়াই কেজি কার্বন ডাই অক্সাইড এবং এই হিসেবে আমস্টার্ডাম থেকে শারম আল শেখে ব্যক্তিগত বিমানের একটি ফ্লাইটে নির্গত হবে প্রায় ২৪ টন কার্বন ডাই অক্সাইড।

তবে বিজ্ঞানীরা বলছেন, জলবায়ুর ওপর এসব ফ্লাইটের কী প্রভাব পড়ে তা হিসেব করতে তাদের নির্গত কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণকে দুই দিয়ে গুণ করতে হবে।

কারণ এসময় কার্বন ডাই অক্সাইড ছাড়াও আরো কিছু গ্যাস নির্গত হয় যা উষ্ণতা বৃদ্ধির জন্য দায়ী। এই হিসেবে আর্মস্টার্ডাম থেকে শারম আল শেখের এই ফ্লাইটে নির্গত গ্রিনহাউজ গ্যাসের পরিমাণ দাঁড়াবে প্রায় ৪৫ টন।

ড. ফারুক বলছেন একটি প্রাইভেট জেট যে কোনো বাণিজ্যিক ফ্লাইটের চেয়ে ১৫ গুণ বেশি কার্বন ডাই অক্সাইড নিঃসরণ করে থাকে।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, জলবায়ু সম্মেলনের প্রতিনিধিরা যদি বাণিজ্যিক বিমানে করে মিশরে যেতেন, তাহলে মাথাপিছু আরো অনেক কম গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গত হতো।

কারণ বাণিজ্যিক ফ্লাইট বেশি জ্বালানি ব্যবহার করলেও, এসব বিমান প্রাইভেট জেটের তুলনায় অনেক বেশি যাত্রী বহন করে থাকে। ফলে বাণিজ্যিক ফ্লাইটে মাথাপিছু নিঃসরণের পরিমাণও কম হয়।

"প্রাইভেট জেটে হাতেগোনা কয়েকজন লোক ভ্রমণ করছে। কিন্তু বাণিজ্যিক ফ্লাইটে ৩০০ থেকে ৪০০ জনের মতো যাত্রী থাকে। তার ফলে প্রাইভেট জেটে যাত্রীর মাথাপিছু নিঃসরণ বা ফুট-প্রিন্ট অনেক বেশি হয়ে যায়," বলেন তানভীর ফারুক।

কিন্তু মানুষকে তো বিমানে করেই এক দেশ থেকে আরেক দেশে যেতে হবে, তাহলে এর বিকল্প কী? গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণ না ঘটিয়ে কি বিমানে চলাচল করা সম্ভব?

ইউনিভার্সিটি অব সাউথ ক্যরোলাইনার বিজ্ঞানী ড. ফারুক বলছেন, আন্তর্জাতিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ আইএটিএ এখন এবিষয়টির উপর জোর দিচ্ছে।

"তারা এখন টেকসই এভিয়েশন জ্বালানির কথা বলছে। তারা বলছে, আমাদেরকে ধীরে ধীরে এধরনের জ্বালানির ব্যবহার শুরু করতে হবে। বায়োমাস থেকে এই টেকসই এভিয়েশন জ্বালানি উৎপাদন করা সম্ভব," বলেন তিনি।

ইলেকট্রিক গাড়ির মতো ব্যাটারি দিয়ে কি ভবিষ্যতে বিমান চালানো যাবে?

ড. ফারুক বলছেন, "বৈদ্যুতিক ব্যাটারি দিয়ে হয়তো এক-দু'জন আরোহী নিয়ে চলতে পারে এমন প্রপেলার-চালিত এয়ারক্রাফট চালানো যেতে পারে। রোলস রয়েস এরকমটা করে দেখিয়েছে। কিন্তু বাণিজ্যিক বিমান চালানোর জন্য আসলে জেট ইঞ্জিনের কোনো বিকল্প নেই।"

"আরেকটা সমস্যা হচ্ছে- আপনি যদি ১০০ যাত্রীকে ১০০টি ব্যাটারি চালিত বিমান দেন, এসব ব্যাটারি তো চার্জ করতে হবে অন্য কোনো শক্তির উৎস থেকে। ওই শক্তির উৎস যদি হয় জীবাশ্ম জ্বালানি, তাহলে কার্বন ডাই অক্সাইডের নিঃসরণ বিমানের পরিবর্তে হবে বিদ্যুৎ কেন্দ্রে। ঘটনা কিন্তু আসলে একই," বলেন ড. তানভীর ফারুক।

(এবিষয়ে রেডিওতে বিস্তারিত শুনতে পাবেন বুধবার, ১৬ই নভেম্বর, বিজ্ঞানের আসরে। প্রচারিত হবে বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে দশটায়)

English summary
How flights are impacting climate
চটজলদি খবরের আপডেট পান
Enable
x
Notification Settings X
Time Settings
Done
Clear Notification X
Do you want to clear all the notifications from your inbox?
Settings X