ইংল্যান্ডের বিশ্বকাপ জয় দেখিয়ে দিল যে ব্রেক্সিট-এর মতো সংকীর্ণতা নয়, বহুত্ববাদেই জাতির সাফল্য আসে
রবিবার, ১৪ জুলাই, লর্ডসে রোমহর্ষক ফাইনালে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে প্রথমবার ক্রিকেটে বিশ্বকাপ জেতে ইংল্যান্ড।
রবিবার, ১৪ জুলাই, লর্ডসে রোমহর্ষক ফাইনালে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে প্রথমবার ক্রিকেটে বিশ্বকাপ জেতে ইংল্যান্ড। যদিও তাদের জয় নিয়ে সন্দিহান অনেকেই, তবুও ইতিহাসের পাতায় ক্রিকেট বিশ্বকাপের নবতম চ্যাম্পিয়ন হিসেবে ইংল্যান্ডের নামই নথিভুক্ত থাকবে। আর সেই সঙ্গে আরও একটি শিক্ষাও তোলা থাকবে রাজনীতিবিদদের জন্যে, তা হল নিজেদের সংকীর্ণ স্বার্থান্বেষণের জারণে তাঁরা যে "ব্রেক্সিট, ব্রেক্সিট" বলে ধুয়ো তুলছেন তা আসলে ফাঁপা বুলি। প্রকৃত জীবনে, বহুত্ববাদের মধ্যে দিয়েই একটি জাতির উত্থান সম্ভব।
লোক-হাসানো মন্তব্য ব্রেক্সিট সমর্থক জেকব রিস-মগের
এই শিক্ষাটি দরকার ছিল ব্রেক্সিট-এর অন্যতম বড় সমর্থক জেকব রিস-মগ-এর। ইংল্যান্ড বিশ্বকাপ জেতার পরে ৫০-বছর বয়সী এক কনসার্ভেটিভ পার্টির সদস্য একটি বিতর্কিত মন্তব্য করে বলেন: "বিশ্বকাপ জয় দেখিয়ে দিল যে জেতার জন্যে ইংল্যান্ডের বাকি ইউরোপকে দরকার নেই।" অতি অন্তঃসারশূন্য একটি মন্তব্য। আর পাঁচটি লোককে ভুল বোঝানো রাজনীতিবিদের মতোই রিস-মগ এই উক্তিটি করেন, বিশ্বকাপ জয়কে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত করে জাতীয়তাবাদী সুড়সুড়ি দিয়ে ব্রেক্সিট-এর পক্ষে হওয়ার মুখ ঘোরাতে।
বিশ্বজয়ী ইংল্যান্ড দলে একাধিক খেলোয়াড়ের জন্ম অন্য দেশে
কিন্তু রিস-মগের দিকে উড়ে আসে দেদার সমালোচনা কারণ এবারের শিরোপা জয়ী ইংল্যান্ড দলের অনেক সদস্যই হয় অ-ইংরেজ অথবা অন্য দেশের বংশোদ্ভূত। ইংল্যান্ডের অধিনায়ক আয়ন মর্গ্যান জন্মসূত্রে আয়ারল্যান্ডের মানুষ। যেই বেন স্টোকস ইংল্যান্ডকে জেতাতে এক বড় ভূমিকা নিলেন ফাইনালে, তাঁর জন্ম নিউজিল্যান্ডে। জোফরা আর্চার নামক প্রতিভাবান পেস বোলার, যাঁকে এবারের বিশ্বকাপে খেলাতে ইংল্যান্ড মরিয়া ছিল এবং নাগরিকত্ব নীতিতেও বদল আনে তাঁকে খেলানোর জন্য, তিনি আদতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের লোক। এছাড়াও জেসন রায় এবং টম কুরানের জন্ম দক্ষিণ আফ্রিকায়। এমনকি, ইং;ল্যান্ড দলের দুই মুসলমান খেলোয়াড় আদিল রশিদ এবং মঈন আলির জন্ম ইংল্যান্ডে হলেও তাঁদের পূর্বপুরুষরা পাকিস্তানি অভিবাসী।
খেলার মাঠে সাফল্যের পরেও রাজনীতিবিদদের লজ্জাকর অবস্থান
যেখানে ইংল্যান্ড দলের মধ্যে বহুত্ববাদের সাফল্যের উদাহরণ জ্বলজ্বল করছে, সেখানে রিস-মগের ঐরকম জাতীয়তাবাদীকেন্দ্রিক বক্তব্যটি চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় যে আজকের ব্রিটেনে রাজনীতিবিদরা কতটা নেতির দ্বারা প্রভাবিত। বহুত্ববাদের অবদানেই ব্রিটেন বা আমেরিকার মতো দেশগুলি আজকে সারা দুনিয়ার কাছে সমাদৃত কিন্তু বর্তমান সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যেমন ডোনাল্ড ট্রাম্প, তেমনই ব্রিটেনে ব্রেক্সিট আন্দোলনের উত্থানে বোঝা যায় যে জাতীয়তাবাদী অজগর আজ কতটা গভীরে গিলেছে এই স্বনামধন্য গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাগুলিকেও। ইংল্যান্ডের বিশ্বকাপ জয়ের পরে ব্রেক্সিটের সমর্থকদের চিন্তাভাবনা না বদলালেও ব্রেক্সিট-বিরোধীদের তূণীরে অন্তত বহুত্ববাদের পক্ষে একটি যুক্তির সংযোজন হতেই পারে।