আফগানিস্তানে প্রসূতি ওয়ার্ডে 'পাশবিক' জঙ্গি হামলায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ২৪
আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলের হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগে জঙ্গি হামলার ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৪ জনে। শুধু মঙ্গলবার দেশটিতে একাধিক হামলায় মারা গেছে ৬০ জনের বেশি মানুষ।
সতর্কতা: এই প্রতিবেদনের কিছু ছবি আপনার অস্বস্তিকর মনে হতে পারে
আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলের হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগে জঙ্গি হামলার ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৪ জনে।
মারা যাওয়াদের সবাই নতুন সন্তান হওয়া মা, হাসপাতালের নার্স এবং নবজাতক। দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে ঐ ঘটনায় অন্তত ১৬ জন আহত হয়েছে।
মঙ্গলবারে কাবুলে হওয়া ঐ হামলার দায় স্বীকার করেনি কোনো গোষ্ঠী।
একইদিন আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলের নানগরহর এলাকায় এক শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে আত্মঘাতী বোমা হামলায় অন্তত ৩২ জন মারা যায়।
নানগরহরে এক পুলিশ কর্মকর্তার শেষকৃত্যের ঘটনার দায় স্বীকার করেছে ইসলামিক স্টেট গোষ্ঠী।
তবে কাবুলের দাশত-এ-বারচি হাসপাতালের হামলা কারা ঘটিয়েছে, তা এখনো পরিস্কার নয়। তালেবান ঐ হামলার দায় অস্বীকার করেছে।
ঐ হামলার পর ১৯টি শিশুকে আরেকটি শিশু হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে তাদের অনেকের মা হামলায় মারা গেছে।
নিউ ইয়র্ক টাইমসের তথ্য অনুযায়ী, মঙ্গলবার আফগানিস্তানে সহিংসতার বিচ্ছিন্ন ঘটনায় আনুমানিক ১০০ জন মারা গেছে।
কয়েক দশক ধরে যুদ্ধ চলা দেশটিতে গত কয়েকমাস ধরে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আলোচনার চেষ্টা করা হলেও সাম্প্রতিক হামলায় তা অনেকটাই ম্লান হয়ে গেছে বলে মনে করা হচ্ছে।
মঙ্গলবারের হামলায় আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোসহ নিন্দা জানিয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ।
আরো পড়তে পারেন:
আফগান যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রকে কতটা মূল্য দিতে হয়েছে?
আফগান যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রকে কতটা মূল্য দিতে হয়েছে?
আফগানিস্তানে কেনো এতো দীর্ঘ যুদ্ধ হচ্ছে?
আফগানিস্তানে কিভাবে ঢুকেছিল সোভিয়েত বাহিনী
হাসপতালে কী হয়েছিল?
হাসপাতালে উপস্থিত থাকা প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায় মঙ্গলবার স্থানীয় সময় সকাল ১০টায় শুরুতে দু'টি বিস্ফোরণ ও গুলির শব্দ শুনতে পায় তারা।
হাসপাতাল থেকে পালাতে সক্ষম হওয়া এক ডাক্তরি বিবিসি'কে বলেন সেসময় প্রায় ১৪০ জন ছিলেন হাসপাতালের ভেতরে।
সেখানকার প্রসূতি বিভাগটি পরিচালনা করে আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য দাতব্য সংস্থা মেদিস সাঁ ফ্রঁতিয়ে (এমএসএফ)। সেখানে তখন কয়েকজন বিদেশি নাগরিকও কাজ করছিলেন।
সংবাদ সংস্থা এএফপি'কে ঐ চিকিৎসক জানান, যখন হামলা শুরু হয়, তখন 'তীব্র আতঙ্ক' ছড়িয়ে পড়ে হাসপাতালের ভেতর।
এমএসএফ'এর বরাত দিয়ে এএফপি জানায়, যখন হামলা হচ্ছিল তখন এক নারী সন্তান জন্ম দিচ্ছিলেন।
রয়টার্স জানায়, জয়নব নামের আরেক নারী হামলার কিছুক্ষণ আগে সন্তান প্রসব করেন। বিভিন্ন জটিলতা থাকায় সন্তান জন্ম দিতে সাত বছর অপেক্ষা করতে হয়।
মঙ্গলবার সদ্যভূমিষ্ঠ সন্তানকে রেখে জয়নব যখন বাথরুমে গিয়েছিলেন, তখনই বাইরে ব্যাপক গণ্ডগোলের আওয়াজ শুনে তড়িঘড়ি বের হয়ে আসেন।
ফিরে এসে তার চার ঘণ্টা বয়সী সন্তানকে মৃত দেখতে পান।
ঘটনাস্থল থেকে আফগানিস্তানের স্পেশাস ফোর্স তিনজন বিদেশি সহ প্রায় ১০০ জন নারী ও শিশুকে উদ্ধার করে বলে জানায় কর্তৃপক্ষ।
পুলিশের পোশাক পরে হাসপাতালে প্রবেশ করা তিন হামলাকারীই গোলাহুলিতে মারা গেছে বলে জানানো হয়।
এর আগে কি হাসপাতালে হামলা হয়েছিল?
অতীতে কাবুলের শিয়া অধ্যূষিত এলাকাগুলোতে এই ধরণের হামলা হয়েছে।
২০১৭ সালে আইএস'এর এক বন্দুকধারী মেডিকেল স্টাফের বেশে কাবুলের প্রধান সেনা হাসপাতালে হামলা চালায়। ঐ ঘটনায় আনুমানিক ৫০ জন মারা গিয়েছিল।
গত সেপ্টেম্বরে দক্ষিণাঞ্চলের জাবুল প্রদেশে এক হাসপাতালের বাইরে ট্রাক বোমা বিস্ফোরণে ২০ জন মারা যায়।
মঙ্গলবার এই ঘটনার পর আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি তালেবান ও অন্যান্য সন্ত্রাসী গ্রুপের বিরুদ্ধে নিরাপত্তা রক্ষীদের কঠোর অভিযান চালানোর ঘোষণা দেন।