কোভিড–১৯ একশোটিরও বেশি দেশে এই তিন রোগের বিরুদ্ধে লড়াইকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে
কোভিড–১৯ একশোটিরও বেশি দেশে এই তিন রোগের বিরুদ্ধে লড়াইকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে
এইচআইভি এইডস, ম্যালেরিয়া ও অন্যান্য মারাত্মক রোগের লড়াইয়ে বিশ্ব দারুণ অগ্রগতি দেখাতে শুরু করেছিল। কিন্তু দু’বছর আগে করোনা ভাইরাস মহামারি এই অগ্রগতিকে আটকে দেয়। শেষ ২৪ মাসে, এই কোভিড–১৯ প্রকোপ শুধুমাত্র যে অগুণিত সংক্রমণ, মৃত্যু, জটিলতা বাড়িয়েছে তাই শুধু নয় বরং তা অন্যান্য রোগের লড়াইয়ের অগ্রগতিকেও ক্ষতি করেছে।
১০০টি দেশে প্রভাব পড়েছে
নতুন এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, এইআইভি, যক্ষ্মা ও ম্যালেরিয়া সম্পর্কিত তথ্যের তুলনা করে দেখা যাচ্ছে যে একশোটি নিম্ন ও নিম্ন-মধ্য আয়যুক্ত দেশে এই মহামারি এই রোগগুলির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বিরাট আঘাত হেনেছে। এইচআইভি, টিভি, ম্যালেরিয়া মোকাবিলার প্রচেষ্টাকে তহবিল প্রদীআনকারী আন্তর্জাতিক সংস্থা গ্লোবাল ফান্ডের রিপোর্টে বলা হয়েছে যে তারা একটি নতুন ও বিবেকবান বাস্তবতার সম্মুখীন হয়েছে। কোভিড-১৯ এই রোগগুলির বিরুদ্ধে আবার কঠিন লড়াইকে ফিরিয়ে দিচ্ছে।
করোনায় ব্যাহত যক্ষ্মা রোগের চিকিৎসা
এই রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০১৯-২০ সালে কোভিড প্রকোপের মধ্যে চিকিৎসারত ড্রাগ-প্রতিরোধী যক্ষ্মাতে আক্রান্ত ব্যক্তিদের সংখ্যা ১৯ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। রিপোর্ট অনুযায়ী, 'কোভিড-১৯ মহামারির প্রভাব বিশ্বজুড়ে যক্ষ্মা রোগের বিরুদ্ধে লড়াইকে ধ্বংস করে দিয়েছে। ২০১৯ ও ২০২০ সালের মধ্যে করোনা ভাইরাসের ফলে যে সব দেশে গ্লোবাল ফান্ড বিনিয়োগ করে সেখানে ড্রাগ-প্রতিরোধী যক্ষ্মাতে আক্রান্ত চিকিৎসারত ব্যক্তিদের সংখ্যা ১৯ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে, যারা ব্যাপকভাবে ওষুধ-প্রতিরোধী যক্ষ্মার চিকিৎসায় রয়েছেন তাদের সংখ্যা ৩৭ শতাংশেরও বেশি হ্রাস পেয়েছে। অন্যদিকে, এইচআইভি পজিটিভ যক্ষ্মা রোগীর সংখ্যা অ্যান্টিরেট্রোভাইরাল চিকিৎসার পাশাপাশি টিবি চিকিৎসায় ১৬ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।' ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২০ সালে দশ লক্ষের কম যক্ষ্মা রোগীর চিকিৎসা চলছে বিশ্বজুড়ে। এই রোগের চিকিৎসা হ্রাস পাওয়ার অন্যতম কারণ হল করোনা ভাইরাস মহামারির জেরে আচমকা লকডাউন, এতে মানুষ বাধ্য হয় ঘরের ভেতর থাকতে এবং হাসপাতালগুলিও সেই সময় করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করার ওপর মনোনিবেশ করে।
এইচআইভি আক্রান্ত মানুষ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত
রিপোর্টে বলা হয়েছে, যে এইচআইভি দ্বারা প্রভাবিত দুর্বল মানুষের জন্য পরীক্ষা এবং প্রতিরোধ পরিষেবা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রিপোর্ট অনুযায়ী, 'কোভিড-১৯ সরবরাহের চেইনকে ব্যাহত করেছে, যার ফলে কন্ডোম, লুব্রিকান্টের মতো জিনিস ঠিকমতো বাজারে উপলব্ধ ছিল না। এআরভির সরবরাহ ব্যাহত হয়। সর্বোপরি কোভিড-১৯ অসমতা বৃদ্ধি মানুষকে এইআইভির দিকে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ করে তোলে।' অন্যদিকে, যেহেতু কোভিড মানুষকে দারিদ্র্যের দিকে ঠেলে দিয়েছিল প্রধান জনসংখ্যা গোষ্ঠীর অনেক লোককে তাদের প্রয়োজনীয় সহায়তা থেকে আরও দূরে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল কারণ লকডাউনে এইচআইভি পরিষেবা এবং স্বাস্থ্য পণ্যগুলি উপলব্ধতে বাধাগ্রস্ত হয়েছিল। রিপোর্ট অনুযায়ী, স্বেচ্ছায় চিকিৎসা করানো পুরুষ রোগীর সংখ্যা ২৭ শতাংশ হ্রাস পেয়েছিল এবং এইচআইভি প্রতিরোধ কর্মসূচিতে যোগ দেওয়া মানুষের সংখ্যা ১১ শতাংশ হ্রাস পেয়েছিল এবং টেস্ট হ্রাস পায় ২২ শতাংশ।
স্থিতিশীল ম্যালেরিয়া
এইচআইভি ও যক্ষ্মা রোগের চেয়ে কিছুটা এগিয়ে ম্যালেরিয়া রোগের অগ্রগতি। এই রোগের চিকিৎসা কিছুটা স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে। কিন্তু জটিল স্বাস্থ্য পণ্যের সরবরাহের ওপর ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। ম্যালেরিয়ার র্যাপিড ডায়গনোস্টিক টেস্টের বাজার ব্যাহত হয় শুধুমাত্র কোভিড টেস্টের চাহিদা বৃদ্ধি ও মহামারির সময় ভেক্টর কন্ট্রোল পণ্যের পরিবহনের সময় দীর্ঘ হওয়ার কারণে। তবে রিপোর্টে বলা হয়েছে, 'বাধা সত্ত্বেও, কমিউনিটি স্বাস্থ্য কর্মী এবং সম্প্রদায়ের অধ্যবসায় এবং উদ্ভাবনের কারণে যেখানে বেশিরভাগ ম্যালেরিয়া প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ হয়, ম্যালেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই কিছুটা স্থিতিশীল ছিল।' রিপোর্টে এও বলা হয়েছে, সন্দেহজনক কেসের টেস্ট ও ম্যালেরিয়া কেসের চিকিৎসার ফলে ম্যালেরিয়ার কেস সামান্যতম কমেছে।