সংরক্ষণ সংস্কার আন্দোলনে অগ্নিগর্ভ বাংলাদেশ, আজ সিদ্ধান্ত জানাবে আন্দোলনকারীরা
সংরক্ষণ আন্দোলনকে ঘিরে উত্তাল ঢাকা। দিন কয়েক ধরেই পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘাত চলছে। রবিবার থেকে এই সংঘাত আরও চরমে পৌঁছেছে।
সংরক্ষণ আন্দোলনকে ঘিরে উত্তাল ঢাকা। দিন কয়েক ধরেই পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘাত চলছে। রবিবার থেকে এই সংঘাত আরও চরমে পৌঁছেছে। আগুনে ঘি ঢালার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বুধবার বিকেলে। কারণ, সংরক্ষণ আন্দোলনে বিরক্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংরক্ষণ তুলে দেওয়ার কথা বলেছেন। এরপর থেকে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে।
এই আন্দোলনে মূলত শরিক 'ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ'-এর যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল হক নূর জানিয়েছেন, 'প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য আমরা শুনেছি। রাতে বসে আমরা কেন্দ্রীয় কমিটি এই বক্তব্যের গ্রহণযোগ্যতা, আইন, ন্যায়নীতি বিশ্লেষণ করে রাজু ভাস্কর্যের সামনে সিদ্ধান্ত জানানো হবে।'
বর্তমানে বাংলাদেশে সরকারি চাকরির ৫ শতাংশ সংরক্ষিত আছে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জন্য। আর প্রতিবন্ধীদের জন্য ১ শতাংশ, মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানের জন্য ৩০ শতাংশ, নারী ও জেলা কোটা ১০ শতাংশ করে সংরক্ষিত রয়েছে। সবমিলিয়ে কোটার জন্য বরাদ্দ ৫৬শতাংশ। ফলে যারা কোনও শ্রেণিতে পড়েন না, তাদের প্রতিযোগিতা করতে হচ্ছে বাকি ৪৪ শতাংশের জন্য। এই ৫৬ শতাংশ সংরক্ষণ অন্তত ১০ শতাংশ কমিয়ে দেওয়ার দাবিতে আন্দোলন শুরু করেছে সংরক্ষণের বাইরে থাকারা। তাঁদের দাবি, সংরক্ষণের যোগ্য প্রার্থী না পেলে শূন্যপদে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ হোক। সংরক্ষণে কোনও ধরনের বিশেষ নিয়োগ পরীক্ষা না নেওয়া, সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে অভিন্ন বয়সসীমা, নিয়োগপরীক্ষায় একাধিকবার সংরক্ষণের সুবিধা ব্যবহার না করা-র মতো দাবি রেখেছে আন্দোলনকারীরা।
রবিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সহ একাধিক স্থানে পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের দফায় দফায় সংঘর্ষে সোমবার পরিস্থিতি যথেষ্টই উত্তপ্ত ছিল। সোমবার সমঝোতায় আসতে সচিবালয়ে আন্দোলনকারীদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এই প্রতিশ্রুতিতে শিক্ষার্থী প্রতিনিধিরা ৭ মে পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। এই নিয়েও আন্দোলনকারীদের মধ্য়ে বিভেদ তৈরি হয়। কিন্তু, মন্ত্রীদের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধরনের বক্তব্যে সরকারের রাখা প্রস্তাব নিয়ে আন্দোলনকারী ছাত্রদের মধ্যে ধোঁয়াশা তৈরি হয়। এরপরই মঙ্গলবার রাতে ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের পক্ষ থেকে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার কথা ঘোষণা করা হয়।
এর ফলে বুধবার সকাল থেকে অচল হয়ে যায় রাজধানী ঢাকার রাজপথ। ছাত্র-ছাত্রীরা কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে ক্লাস বয়কট করে হাতে প্ল্য়াকার্ড নিয়ে রাস্তায় নেমে পড়ে। কিন্তু, বিকেলে সংসদে সংরক্ষণ সংস্কার আন্দোলনের প্রসঙ্গ উত্থাপিত হতেই ক্ষিপ্ত হয়ে পড়েন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রশ্নোত্তর পর্বে তিনি জানিয়ে দেন, 'সংরক্ষণ নিয়ে যখন এতকিছু তখন কোনও সংরক্ষণ-ই রাখা হবে না।'
শেখ হাসিনা বলেন 'সংরক্ষণ থাকলেই সংস্কার। না সংস্কারের দরকারই নেই। আন্দোলন হলে সময় নষ্ট হবে।' যদিও, শেখ হাসিনার মন্তব্যে জটিলতা আরও বেড়ে যায়, কারণ আন্দোলনকারীদের পক্ষে 'ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ'-এর যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ খান বলেন, 'সংরক্ষণ পুরোপুরি তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হলে সেটাও তারা মেনে নেবেন না।' রাশেদের যুক্তি ছিল 'দেশে এখনও অনগ্রসর যারা আছে তাদের জন্য সংরক্ষণ ব্যবস্থা রাখতে হবে।' আর সব মিলিয়ে সংরক্ষণের পরিমাণ ১০ শতাংশ হলে তা যোক্তিক হবে বলেও মনে করছেন এই আন্দোলনকারী।
এদিকে সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য নির্ধারিত সংরক্ষণে সংস্কার আনলে আন্দোলনে নামার হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছে মুক্তিযুদ্ধ সংসদ সন্তান কমান্ড। সংগঠনটির সভাপতি মেহেদি হাসান বলেছেন, 'সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান-নাতিদের জন্য নির্ধারিত সংরক্ষণে কোনও ধরনের সংস্কার মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা মেনে নেবে না। শহিদদের রক্তের সঙ্গে কোনও বেআইমানি চলবে না।'