প্রাণী দ্বারা বহন করা করোনা ভাইরাস লক্ষাধিক মানুষকে আক্রান্ত করতে পারে, বলছে নতুন গবেষণা
প্রাণী দ্বারা বহন করা করোনা ভাইরাস লক্ষাধিক মানুষকে আক্রান্ত করতে পারে
যেসব প্রাণী কোভিড–১৯ এর সঙ্গে সম্পর্কিত করোনা ভাইরাস বহন করে তারা চিন এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া জুড়ে বছরে লক্ষ লক্ষ মানুষকে সংক্রমিত করতে পারে। এমনটাই আশঙ্কার কথা শুনিয়েছে নতুন এক গবেষণা। এই গবেষণায় চলমান মহামারির হুমকির ওপর জোর দিয়ে জানানো হয়েছে যে বছরে গড়ে এ ধরনের ৪ লক্ষ সংক্রমণ হতে পারে।
সহজে মানুষের মধ্যে ছড়ায় না কোভিড–১৯
এই গবেষণা অনুসারে, এই ধরনের সংক্রমণ চোখ এড়িয়ে যাওয়ার কারণ হল আক্রান্তদের উপসর্গ হাল্কা বা কোনও উপসর্গ থাকে না। তাছাড়া করোনা সংক্রমণ সহজে মানুষের মধ্যে ছড়ায় না। ইকো হেল্থ অ্যালায়েন্স ও সিঙ্গাপুর ডিউক-নুস মেডিক্যাল স্কুলের গবেষকরা এই সমীক্ষাটি করেছেন। তাঁরা জানিয়েছেন যে প্রতিটি স্পিলওভার ভাইরাল অভিযোজনের সুযোগের প্রতিনিধিত্ব করে যা কোভিড-এর মতো প্রকোপের দিকে নিয়ে যেতে পারে। যদিও করোনা ভাইরাস প্রকোপ বাড়ার পরই এই ভাইরাসের উৎস ও কীভাবে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে তা নিয়ে গোটা বিশ্বে বিতর্কিত প্রশ্ন উঠতে শুরু করে দেয়। যেখানে বিশ্বজুড়ে কিছু নেতা দাবি করে বসেন যে চিনের উহানের ল্যাব থেকে এই করোনা ভাইরাস গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। যদিও এখনও এর পক্ষে কোনও জোরালো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
বাদুড়ের কাছে থাকা মানুষদের ঝুঁকি বেশি
এই গবেষণায়, যাকে সমর্থন করেছে মার্কিন ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ অ্যালার্জি অ্যান্ড ইনফেকসিয়াস ডিজিস, প্রমাণ গঠন করেছে যে সার্স-কোভ-২-এর মতো ভাইরাস বহন করার প্রধান হোস্ট হল বাদুড় এবং যে সব মানুষ এই বাদুড়দের বসবাসের জায়গার কাছে থাকে তাঁদের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিদ্যার অধ্যাপক এডওয়ার্ড হোমস, যিনি এই গবেষণার অংশ নন, তিনি বলেন, 'এটাই বোধহয় প্রথম চেষ্টা যেখানে বাদুড় থেকে সার্স-সংক্রান্ত করোনা ভাইরাসে কতজন মানুষ আক্রান্ত হতে পারেন, তার পরিসংখ্যান বের করা হবে।' মানুষ ক্রমাগত বাদুড় দ্বারা বহন করা করোনা ভাইরাসের সংস্পর্শে আসছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
এশিয়ায় রয়েছে দু’ডজন বাদুড়ের প্রজাতি
টেক্সাসের চেয়ে ছয়গুণ বেশি বড় এশিয়ার বিভিন্ন এলাকায় করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে এমন প্রায় দু'ডজন বাদুড়ের প্রজাতি বাস করে এবং দক্ষিণ চিন ও মায়ানমারের কিছু অংশ, লাওস, ভিয়েতনাম ও ইন্দোনেশিয়াতে করোনা সংক্রমণ হওয়ার ঝুঁকি বেশি।
ল্যাব থেকে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার তত্ত্ব
এ বছরের অগাস্টে, কোভিড-১৯-এর প্রকৃত ভাইরাস সনাক্তের পরবর্তী দফা নিয়ে আপত্তি তোলে চিন। চিনের পক্ষ থেকে বলা হয় যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) দ্বিতীয় দফার সমীক্ষাতেও ল্যাব থেকে ছড়িয়ে পড়া ভাইরাস তত্ত্বের ওপরই মনোযোগ দিচ্ছে, যা একেবারে অনুচিত। সাম্প্রতিক মাসে, বিডেন প্রশাসন ভাইরাসের প্রকৃত উৎস খোঁজার জন্য নতুন করে তদন্তে চাপ দিয়েছে, আর তখনই ল্যাব থেকে ভাইরাস লিকের বিষয়টি আবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। প্রসঙ্গত, উহানের ল্যাব থেকেই কি করোনা ভাইরাস ছড়িয়েছে ? এব্যাপারে নিশ্চিত হতে দ্বিতীয় দফায় সেখানে পরিদর্শনের পরিকল্পনা করেছিল হু। কিন্তু, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সেই ইচ্ছায় সম্মতি দেয়নি চিন। হু-এর পরিকল্পনা খারিজ করে দেওয়া হয়। প্রসঙ্গত, এই ভাইরাস প্রথমে উহানে এবং সেখান থেকে পরে গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ার অভিযোগ উঠলেও চিন সেই রিপোর্ট খারিজ করে দিয়েছে।
চিন থেকে করোনা ছড়িয়ে পড়ে গোটা বিশ্বে
২০১৯ সালের শেষের দিকে বিশ্বের মধ্যে প্রথম চিনে করোনার হদিশ পাওয়া যায়। এরপর তা ছড়িয়ে পড়ে সারা বিশ্বে। আমেরিকা সহ বিশ্বের ক্ষমতাশালী দেশগুলি চিনের দিকে আঙুল তুলতে শুরু করে। উহান ল্যাব থেকে তা ছড়িয়ে পড়ার অভিযোগ ওঠে। যদিও চিন বলছে, উহানে ভাইরাসের সন্ধান পাওয়া গিয়েছিল। কিন্তু কোথা থেকে এবং কীভাবে উৎপত্তি হয়েছে তা জানা আবশ্যিক নয়।
করোনার দৈনিক সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে, গত ২৪ ঘণ্টায় মৃতের সংখ্যা ও সক্রিয় কমায় স্বস্তি