ডোকলামের পরে চিনের বার্তায় মোদী কাঁপতে কাঁপতে সমঝোতা করেছেন, সাক্ষাৎকারে দাবি রাহুল গান্ধীর
কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী এবারের লোকশিভা নির্বাচন চলাকালীন একের পর এক সাক্ষাৎকার দিয়ে চলেছেন। সম্প্রতি তিনি 'দ্য কুইন্ট' ওয়েবসাইটকে একটি সাক্ষাৎকার দেন।
কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী এবারের লোকসভা নির্বাচন চলাকালীন সংবাদমাধ্যমে একের পর এক সাক্ষাৎকার দিয়ে চলেছেন। সম্প্রতি তিনি 'দ্য কুইন্ট' ওয়েবসাইটকে একটি সাক্ষাৎকার দেন। জনসাধারণের মাঝে, খোলা আকাশের নীচে রাহুল কথা বলেন কুইন্ট-এর দুই বর্ষীয়ান সাংবাদিক রাঘব বেহল এবং সঞ্জয় পুগালিয়ার সঙ্গে।
অনেক বিষয়ের উপরেই নজরপাত করেন রাহুল এবং বিশেষ করে বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মেয়াদকালে ভারতের বিদেশনীতির উপরে। কুইন্ট-এর তরফ থেকে যখন তাঁকে মোদীর সময়ে নয়াদিল্লির বিদেশনীতি নিয়ে প্রশ্ন করা হয় তখন সরাসরি প্রধানমন্ত্রীকে একহাত নেন রাহুল গান্ধী।
সাম্প্রতিক সময়ে ডোকলামে ভারত ও চিনের মধ্যে কূটনৈতিক সঙ্কটের প্রসঙ্গে রাহুল চাঁছাছোলা ভাষায় মোদীকে আক্রমণ করে বলেন যে ওই সময়ে মোদী কাঁপতে কাঁপতে চিনের সঙ্গে রফা করেন এবং দেশের হয়ে মাথা নোয়ান। এখানে উল্লেখ্য যে ২০১৭ সালে প্রায় আড়াই মাসব্যাপী ডোকলাম সঙ্কটের পরে গতবছর এপ্রিল মাসে মোদী চিনের উহানে গিয়ে সেদেশের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং-এর সঙ্গে দেখা করেন। বলা হয়, দু'দেশের মধ্যে শৈত্য কাটাতেই এই উদ্যোগ নেওয়া হয় এবং মোদী ও জিনপিং একটি সম্পূর্ণ আড্ডার মেজাজের বাতাবরণে কথা বলেন ডোকলাম-পরবর্তী সময়ে সম্পর্ক ফের চাঙ্গা করতে।
কুইন্ট-এর প্রশ্ন ছিল মোদীর সময়ে ভারতের বিদেশনীতি পেশির আস্ফালনে বিশ্বাসী হয়ে উঠেছে কি না। রাহুলের সপাট জবাব "না"। "ডোকলাম নিয়ে চিন মোদীকে সরাসরি বার্তা দেয় এবং তিনি ওখানে গিয়ে ওদের সামনে মাথা ঝোঁকান। চিনের সঙ্গে কথায় মোদীর কোনও এজেন্ডাই ছিল না অথচ যেখানে ডোকলামের মতো অত গম্ভীর একটি ইস্যু সামনে রয়েছে। আমার মতে, এটা সম্পূর্ণ আত্মসমর্পণ।"
প্রধানমন্ত্রী বিশেষজ্ঞদের মতামত নেওয়ার প্রয়োজন বোধ করেন না, বললেন রাহুল
মোদীকে বিদেশনীতি সংক্রান্ত আরও নিশানা করেন রাহুল। বলেন, প্রধানমন্ত্রী ভাবেন তিনিই সব জানেন এবং বিশেষজ্ঞদের মতামত নেওয়ার প্রয়োজন বোধ করেন না। "আমাদের সময়েও সার্জিক্যাল স্ট্রাইক হয়েছিল কিন্তু সেটা তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং একা করেননি। তাঁর সঙ্গে ছিল সেনা এবং দেশের কৌশলগত বিশেষজ্ঞরাও। মোদীর সময়ে সেটা দেখা যায় না। তিনি নিজেই বিমানচালকদের বলে দিচ্ছেন মেঘ থাকলে শত্রু আমাদের প্লেন দেখতে পারবে না। মানে? এটা কি ইয়ার্কি হচ্ছে?" বলেন রাহুল।
কংগ্রেস সভাপতি বলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী পুরো কৌশলগত বিষয়টিকেই সার্কাসে পরিণত করেছেন। "কৌশলগত বিষয়ে অনেক চিন্তাভাবনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হয় এবং কৌশলগত পদক্ষেপ সবসময়ে জনসমক্ষে আনার প্রয়োজন নেই। আমরা সেটা করিনি," বলেন রাহুল।
চিন নিয়ে প্রপিতামহ নেহরুর অপমানের বদলা নেওয়ার সুযোগ ছাড়লেন না রাহুল
চিনের ব্যাপারে রাহুলের এই পাল্টা যেন সময়ের অপেক্ষাই ছিল। তাঁর প্রপিতামহ জওহরলাল নেহরুর আমলে চিনের হাতে ভারতের পর্যুদস্ত হওয়ার ঘটনাটিকে আজও কংগ্রেস-বিরোধীরা দেশের বিদেশনীতির সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা বলে মনে করে। মোদীরাও তাঁর ব্যতিক্রম নন। আজকে ডোকলামের পরে কংগ্রেস চিনের প্রতি ভারতের নীতি নিয়ে এনডিএ সরকারকে পাল্টা কটাক্ষ করার সুযোগ পেলে রাহুলও সেই সুযোগ হাতছাড়া করেননি।