ব্রাজিলে হোয়াটসঅ্যাপে পাওয়া যাচ্ছে গর্ভপাতের পিল
ব্রাজিলে গর্ভপাতের আইনগত বাধা বিপত্তি এড়াতে অনেক মেয়েরা এখন ঝুঁকছেন হোয়াটসঅ্যাপের মত প্রযুক্তির দিকে। যেখানে গোপনে চলছে কেনা-বেচা।
গত দশকে বিশ্বজুড়ে ইন্টারনেটে অ্যাবরশন বা গর্ভপাতের পিল খোঁজার হার দ্বিগুণ ছাড়িয়ে গেছে।
বিবিসির বিশ্লেষণ সেই তথ্য দিচ্ছে। যেসব দেশে গর্ভপাত আইন বেশি কঠোর, সেসব দেশে গর্ভপাত পিল সম্পর্কে আগ্রহ আরও বেশি।
আইনগত বাধা বিপত্তি এড়াতে অনেক মেয়েরা এখন এই পিল কিনতে এবং সম্পর্কে তথ্যের জন্য ঝুঁকছেন হোয়াটসঅ্যাপের মত প্রযুক্তির দিকে।
ব্রাজিলে গর্ভপাত অপরাধ। ধর্ষণের কিছু ব্যতিক্রম ঘটনার ক্ষেত্রে তা গ্রহণযোগ্য, অবৈধ ধর্ষণের দায়ে দুই বা তিন বছরের জেল হতে পারে।
কিন্তু তারপরও কি থেমে আছে গর্ভপাতের ঘটনা?
ব্রাজিলে গর্ভপাত সংক্রান্ত আইন কঠোর হওয়ায় এখন সেখানে অনেক মেয়ে এখন এনক্রিপটেড হোয়াটসঅ্যাপ ফর্মের মাধ্যমে এ বিষয়ে তথ্য শেয়ার করছেন। এখানেই চলছে গোপনে কেনা-বেচা।
ক্লোজড গ্রুপে তারা পেয়ে যাচ্ছে গর্ভপাত পিল। ব্যাংক ট্রান্সফারে অর্থ পাঠালে ঠিকানায় পৌঁছে যাবে এই পিল। ভার্চুয়াল মিড ওয়াইফরা সাহায্য করবেন পুরো পদ্ধতিতে।
এই হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ তৈরি করেছেন ৫ জন নারী মিলে। তিন বছরে তাদের সদস্য তিনশোর বেশি।
বহু কাঠখড় পুড়িয়ে মাসের পর মাস লেগে থেকে অবশেষে তাদের একজন বিগেল-এর সাথে (ছদ্মনাম) যোগাযোগ করতে পারেন বিবিসির প্রতিবেদক। জানা যায়, তার নিজের জীবনের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা ।
"২০১৩ সালের অক্টোবর মাসে আমাকে অপহরণ করা হয় এবং ধর্ষণ করা হয়। এর ফলে আমি প্রেগন্যান্ট হয়ে যাই। কিন্তু বৈধভাবে গর্ভপাত ঘটানো সম্ভব হয়নি। কারণ ওই ব্যক্তি একজন সাবেক পুলিশ অফিসার হওয়ায় সে ছিল খুবই প্রভাবশালী।"
রিও ডি জেনিরোতে গোপন এক স্থানে কথা হয় গ্রুপটির এই অ্যাডমিন সদস্যের সাথে।
"আমার সেসময় মনে হল যেন আমার সারাজীবন সামনে পড়ে আছে আর তা আমার কাছ থেকে সে কেড়ে নিয়ে গেছে। তখন আমার মাথায় আসলো এই হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ তৈরির কথা।"
বিবিসি বাংলায় আরো পড়তে পারেন:
ক্যান্সারে কেমোথেরাপি কতটা কাজে লাগে?
পি সি সরকারের যে জাদু আতংকিত করেছিল ব্রিটিশদের
বাংলাদেশে ইয়াবাসেবী এক নারীর গল্প
তবে ব্রাজিলের রক্ষণশীল সমাজে যারা গর্ভপাতের বিপক্ষে তারাও এখন কেউ কেউ বাধ্য হচ্ছেন গর্ভপাতকে মেনে নিতে। যেমনটা বলছিলেন অ্যাঞ্জেলা নামে এক নারী, যিনি নিজের মেয়ের জন্য বাধ্য হয়েছেন অবৈধ ক্লিনিকে যেতে।
"সে খুবই হতাশ হয়ে পড়েছিল। সে আমাকে জানায় যে, তার এরই মধ্যে দুটি মেয়ে আছে এবং আরও একটি সন্তান নেয়ার মতো অবস্থা তার এখন নেই। "
কিন্তু তার মেয়ের মৃত্যু হয় মাত্র ২৭ বছর বয়সে গর্ভপাতের প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাওয়ার সময়।
সরকারি হিসেবে প্রতিদিন চারজন নারীর মৃত্যু হয় গর্ভপাত ঘটাতে গিয়ে।
প্রসূতিবিদ্যার চিকিৎসক এলিসান্দা যোভে নিনি জানান, অনেক মেয়েরাই নানা জটিলতা সত্ত্বেও হাসপাতালে যেতে চায় না। পরে যখন তারা আসে ততক্ষণে তাদের অবস্থা মারাত্মক।
চিকিৎসকরা বলছেন, অনিরাপদ গর্ভপাতের ফলে অনেক মেয়েরা ইনফেকশন নিয়ে আসে এমনকি যোনী পথে মারাত্মক ক্ষত থাকে যা তাদের মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিতে পারে।
এই রিপোর্ট তৈরির জন্য ব্রাজিলে যেসব মেয়েদের অভিজ্ঞতার চিত্র উঠে আসে তারা প্রত্যেকেই খুবই অল্পবয়সী এবং তাদের একেকজনের অভিজ্ঞতা ভয়াবহ ।
তবে এই হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে সদস্যরা বলছেন, তাদের তিনশোর বেশি সদস্য এবং কারো ক্ষেত্রে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি। তবে আইনগত ঝুঁকি সীমাহীন। ধরা পড়লে জেলে যেতে হবে।
কিন্তু যখন কোনও মেয়ে সংকটে পড়ে তাদের কাছে সহায়তা চায় এবং তারা সেই সুবিধা পৌঁছে দিতে পারছেন, তখন নানা ঝুঁকি সত্ত্বেও সেটাই তাদের কাজে উৎসাহ যোগাচ্ছে।