কানহাইয়া কুমার কেন কংগ্রেসের দিকে ঝুঁকতে শুরু করছেন, নেপথ্য কারণ নিয়ে জোর চর্চা
কানহাইয়া কুমার কেন কংগ্রেসের দিকে ঝুঁকতে শুরু করছেন, নেপথ্য কারণ নিয়ে জোর চর্চা
ছাত্রজীবন থেকেই বামপন্থাকে জীবনের ধ্রুবতারা করেছিলেন কানহাইয়া কুমার। কিন্তু এই মুহূর্তে দেশের জনপ্রিয় তরুণ নেতাদের মধ্যে অন্যতম কানহাইয়া কুমার এখন বামপন্থা ছেড়ে দক্ষিণপন্থার দিকে ঝুঁকতে শুরু করেছেন। সম্প্রতি রাহুল গান্ধীর সঙ্গে তাঁর সাক্ষাতে জাতীয় রাজনীতিতে শুরু হয়েছে তুমুল জল্পনা। সেইসঙ্গে প্রশ্ন কেন কানহাইয়া কুমার কংগ্রেসের দিকে ঝুঁকছেন?
আদর্শ ছেড়ে ভোট রাজনীতিকেই বেশি গুরুত্ব কানহাইয়ার?
কানহাইয়া কুমারের কংগ্রেস-যোগের জল্পনার পিছনেই যে কারণ সর্বাগ্রে উঠে আসছে, তা হল- ভোট রাজনীতি। কানহাইয়া কুমারকে কী আদর্শ ছেড়ে ভোট রাজনীতিকেই তাহলে বেশি গুরুত্ব দিতে শুরু করলেন? না, কানহাইয়া কুমার স্পষ্ট করে বলেননি সে কথা। বরং তিনি বেগুসরাইয়ে বিজেপির কাছে হেরে বলছিলেন, নির্বাচনে হেরে আমি দুঃখিত নই।
কেন কংগ্রেসের দিকে ঝুঁকতে শুরু করেছেন কানহাইয়া
কানহাইয়া কুমার বলেছিলেন, আমার লড়াই ছিল ধনী ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে। সেই লড়াইয়ের জন্য আমি জনগমের সমর্থন পেয়েছি। একজন অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীর পুত্র হিসেবে ভোট লড়তে পেরেছি তাতেই আমি খুশি। ঠিক এখানেই প্রশ্ন তাহলে তিনি কেন কংগ্রেসের দিকে ঝুঁকতে শুরু করেছেন। বামপন্থীরা যখন দেশজুড়ে চরম সংকটে, তখন তাঁর মতো তরুণ তুর্কি নেতা কেন সরে যাচ্ছেন দল থেকে?
বিহার রাজনীতিতে কংগ্রেসের অক্সিজেন হয়ে উঠতে পারেন কানহাইয়া
২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে যদি কানহাইয়া কুমার কংগ্রেসের দিকে ঝুঁকতে শুরু করেন, তবে সেই প্রশ্নও উঠবে, চরম বামপন্থী নেতা হয়ে তিনি কি পারবেন কংগ্রেসের আদর্শের সঙ্গে মানিয়ে নিতে। কানহাইয়া কুমারের মতো জনপ্রিয় মুখকে দলে পেয়ে কংগ্রেস লাভবান হবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। আর বিহার রাজনীতিতে কংগ্রেসের অক্সিজেন হয়ে উঠতে পারেন তিনি।
কানহাইয়া বিজেপি বিরোধিতায় আরও মাইলেজ পাবেন কংগ্রেসে এলে
কানহাইয়া কুমার মোদী বিরোধী মুখ হয়ে উঠেছিলেন ২০১৯ সালের আগে। যদিও নির্বাচনে তিনি কেন্দ্রীয়মন্ত্রী গিরিরাজ সিংয়ের বিরুদ্ধে হেরে গিয়েছিলেন, কিন্তু তিনি যে বিজেপি বিরোধিতায় বামেদের বড় অস্ত্র হয়ে উঠেছিলেন, তা সবার মুখে মুখেই ফিরত। এমনকী এমন কথাও রাজনৈতিক মহলে শোনা গিয়েছে, কানহাইয়া কুমার কংগ্রেস শিবিরে থাকলে বিজেপি বিরোধিতায় আরও মাইলেজ পেতেন।
রাহুল গান্ধীর সঙ্গে সাক্ষাতের পর কানহাইয়ার কংগ্রেসে যোগ-জল্পনা
২০১৯-এর পরবর্তী লোকসভা নির্বাচন ২০২৪-এর প্রাক্কালে এসে সেই সম্ভাবনই জোরদার হতে শুরু করেছে। রাহুল গান্ধীর সঙ্গে সাক্ষাতের পর কানহাইয়ার কংগ্রেসে যোগ সময়ের অপেক্ষা বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। কানহাইয়াকে নিয়ে বিহার কংগ্রেস অক্সিজেন পেতে চাইছে, সেইসঙ্গে কানহাইয়ার চাঁছাছোলা বক্তব্যকে ভর করে কংগ্রেস ২০২৪-এর আগে মোদী বিরোধিতায় ঝড় তুলতে চাইছে দেশজুড়ে।
প্রশান্ত কিশোরের সাক্ষাতেই কি তবে মনবদল কানহাইয়া কুমারের
রাহুল গান্ধীর সঙ্গে কানহাইয়া কুমারের সাক্ষাতের আগে আরও একটি সাক্ষাৎকার নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছিল। কানহাইয়া কুমার সাক্ষাৎ করেছিলেন প্রশান্ত কিশোরের সঙ্গে। ভোট কৌশলী প্রশান্ত কিশোরের সাক্ষাতেই কি তবে মনবদল হয়েছে তাঁর। তিনি বামপন্থা ছেড়ে দক্ষিণপন্থার দিকে ঝুঁকতে শুরু করেছেন!
কংগ্রেসে যোগ দিলেও বিজেপি বিরোধী মহাজোটের পক্ষেই কানহাইয়া
বিহার রাজনীতিতে সমীকরণ সে অর্থে বদলাবে না। কেননা বিহারে আরজেডি বা রাষ্ট্রী জনতা দল ও বামদলগুলির সঙ্গে কংগ্রেসের মহাজোট রয়েছে। বিজেপি বিরোধী শক্তির সঙ্গেই ছিলেন কানহাইয়া কুমার। বামপন্থী দল সিপিআই ছেড়ে তিনি কংগ্রেসে যোগ দিলেও তিনি বিজেপি বিরোধী মহাজোটের পক্ষেই থাকবেন। তবে কংগ্রেস আগের থেকে শক্তিশালী হবে কানহাইয়া কুমারের মতো একজন তরুণ মুখকে পেয়ে।
কানহাইয়ার দলবদলে মহাজোট আরও শক্তিশালী হবে বিহারে
রাজনৈতিক মহলের একাংশ মনে করছে, কানহাইয়া কুমার যদি সিপিআই ছেড়ে কংগ্রেসে আসেন, তবে বিজেপি তথা এনডিএ বিরোধী মহাজোট আরও শক্তিশালী হবে। তবে ২০২০-র শেষে বিহারে বিধানসভা নির্বাচনে হয়েছে, পরবর্তী নির্বাচন এখনও চার বছর বাকি। কংগ্রেস কানহাইয়া কুমারকে চাইছে ২০২৪-এর আগে পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে রয়েছে। সেই নির্বাচনে কানহাইয়া কুমারকে ব্যবহার করতে।
চিরকালীন বিশ্বাস, নাকি ভোটের রাজনীতির পথে কানহাইয়া কুমার?
রাজনৈতিক মহলের ব্যাখ্যা, ভোট কৌশলী প্রশান্ত কিশোরের পরামর্শেই কানহাইয়া কুমারকে পেতে চাইছে কংগ্রেস। কানহাইয়া কুমারের মোদী বিরোধিতা ও বিজেপি বিরোধিতায় যুক্তিসংগত বক্তব্য তারা সারা দেশে প্রচারে কাজে লাগাতে চায়। কানহাইয়া কুমার কংগ্রেসে যোগ দেওয়া মানে তিনি জাতীয় রাজনীতিতেও এক গুরুত্বপূর্ণ মুখ হয়ে উঠতে পারেন। এখন দেখার কানহাইয়া কুমার কোন পথে পা বাড়ান। চিরকালীন বিশ্বাস, নাকি ভোটের রাজনীতি!