এই আইনের গেরোয় আটকে মাদার টেরিজার সংস্থা! কী এই Foreign Contribution (Regulation) Act
এই আইনের গেরোয় আটকে মাদার টেরিজার সংস্থা! কী এই Foreign Contribution (Regulation) Act
গোটা বিশ্বজুড়ে সুখ্যাতি রয়েছে মিশনারিজ অব চ্যারিটিজের। মাদার টেরিসার হাত ধরে এই প্রতিষ্ঠানের জন্ম। বছরের পর বছর মানুষের সেবায় কাজ করে যায় এই সংস্থা। দেশ-বিদেশের নজরে এই সংস্থা। দেশ তো বটেই, বিশ্বের বিভিন্ন জায়গা থেকে ব্যাপক অনুদান পায় মিশনারিজ অব চ্যারিটিজ। বড়দিনে নাকি সেই সমস্ত অ্যাকাউন্ট ব্লক করে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। আর সেই অভিযোগ ঘিরেই শুরু বিতর্ক। কিন্তু বিষয়টি স্পষ্ট হয় কেন্দ্রের বিবৃতিতে। তবে বিদেশি মুদ্রা নেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় কেন্দ্রীয় অনুমোদন দেওয়া হয়নি মিশনারিজ অব চ্যারিটিকে। সেটা কিছু শর্ত পূরণ না হওয়ার জন্য বলে জানানো হয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের তরফে। আর সেখানে উঠে আসে Foreign Contribution (Regulation) Act-এর বিষয়টি। কিন্তু কি এই আইন?
Foreign Contribution (Regulation) Act আসলে কি?
FCRA-এর মাধ্যমে বিদেশী অনুদানকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। আর এর মাধ্যমেই সুনিশ্চত করা হয় যে এই অনুদান আভ্যন্তরীণ নিরাপত্তাকে কোথায় লঙ্ঘন করছে না তো। ১৯৭৬ সালে Foreign Contribution (Regulation) Act-কে প্রথমবারের জন্যে কার্যকর করা হয়েছিল। কিন্তু ২০১০ সালে বিদেশী অনুদানের ক্ষেত্রে নতু উপায় কার্যকর করার জন্যে এই আইনকে বেশ কয়েকটি জায়গাতে সংশোধন করা হয়। FCRA-এর মাধ্যমে বিদেশী অনুদান প্রাপ্ত সমস্ত সঙ্ঘ (Associations), গোষ্ঠী (Groups) সমূহ এবং এনজিও (NGO)-এর উপর লাঘু হয়ে থাকে। এমন সমস্ত সংগঠন, এনজিও গুলিকে সরকারের FCRA-এর মাধ্যমে রেজিস্টার করতে হয়। এটা বাধ্যতামূলক একটি পদক্ষেপ। প্রথমে এই রেজিস্ট্রেশন পাঁচ বছরের জন্যে বৈধ হয়েছিল। এরপর সমস্ত নিয়ম নীতি মানা হচ্ছে তা দেখার পরেই ফের একবার রিনিউ করা হতো। এক্ষেত্রে সরকারের কিছু মাপকাঠি আছে। সেটাও মানতে হয়। এই রেজিস্ট্রেশনের পর সঙ্ঘ (Associations), গোষ্ঠী (Groups) সমূহ এবং এনজিও (NGO)- ছাড়াও ধার্মিক, আর্থিক এবং সাংস্কৃতিক বিভিন্ন সংগঠন বিদেশি অনুদান নিতে পারে। কিন্তু ২০১৫ সালে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের তরফে দেওয়া একটি বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, এনজিও গুলিকে একটি শপথ-পত্র প্রস্তুত করতে বলা হয়। যেখানে উল্লেখ করাটা বাধ্যতামূলক করা হয় যে, বিদেশী টাকা কোনও ভাবে খারাপ কাজের জন্যে ব্যবহার করা হবে না। এছাড়াও আরও বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট রয়েছে সেখানে। বিদেশী এই অনুদান পেতে হলে সংশ্লিষ্ট এনজিওগুলিকে রাষ্ট্রীয় ব্যাঙ্কেই অ্যাকাউন্ট খোলার নির্দেশ দেওয়া হয়। বর্তমানে ওই সমস্ত অ্যাকাউন্ট আধার যুক্ত করা হয়েছে।
বিদেশী অনুদান পাওয়ার কি নিয়ম রয়েছে
বিদেশী অনুদান পাওয়ার ক্ষেত্রে বেশ কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে। Foreign Contribution (Regulation) Act-এ এই বিষয়ে বিস্তারিত ভাবে বলা হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী কোনও বিধায়ক, পলিটিক্যাল পার্টি, সরকারি আধিকারিক, বিচারপতি কিংবা মিডিয়ার সঙ্গে যুক্ত কর্মীরা কোনও ভাবে বিদেশী অনুদান নিতে পারবে না। তবে ২০১৭ সালে অর্থ বিষয়ক মাধ্যমে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক ১৯৭৬ সালের FCRA আইনে বেশ কিছু সংশোধন করে। যেখানে রাজনৈতিক দলগুলিকে, এক বিদেশী কোম্পানি ভারতের সহায়ক কোম্পানি কিংবা ৫০ শতাংশ অথবা এর থেকে বেশি অধিক ভারতীয় শেয়ার রয়েছে কোনও বিদেশী কোম্পানি থেকে টাকা পাওয়ার ক্ষেত্রে কোনও অসুবিধা থাকবে না। অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্রেটিক রিফোর্মস (ADR), ২০১৩ সালে দিল্লি উচ্চ আদালতের একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়। যেখানে ভারতীয় জনতা পার্টি কিংবা কংগ্রেস দলের বিরুদ্ধে বেশ কিছু অভিযোগ ওঠে।
কখন রেজিস্ট্রেশন সাসপেন্ড কিংবা বাতিল হতে পারে-
কড়া ভাবে এই আইনকে মানা হয়ে থাকে। ছোট ভুলেই বাতিল করা হতে পারে সংগঠনের রেজিস্ট্রেশন। বিদেশী অনুদান প্রাপ্ত অ্যাকাউন্টে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের তরফে নজরদারি চালানো হয়। কোনও সঙ্ঘ কিংবা সংগঠনের কাজের বিরুদ্ধে কোনও ধরনের তথ্য প্রাথমিক ভাবে সেই সংস্থার রেজিস্ট্রেশন ১৮০ দিনের জন্যে সাসপেন্ড করে দেওয়া হয়। যতক্ষণ না পর্যন্ত কোনও সিদ্ধান্তে আসা হচ্ছে ততখন সংশ্লিষ্ট ওই সংগঠন কোনও ধরনের বিদেশী অনুদান নিতে পারবে না। এমনকি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের অনুমতি ছাড়া রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্টে জমা টাকা ব্যবহার করতে পারা যাবে না। খুব প্রয়োজনে মাত্র ২৫ শতাংশ ব্যবহার করা যাবে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক এমন সংগঠনের রেজিস্ট্রেশন বাতিল করার ক্ষমতা রাখে।