পাঁচ রাজ্যের ফলাফল ১০ মার্চ, তার আগে জেনে নিন কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচন ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। আগামী ১০ মার্চ উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, পাঞ্জাব, মণিপুর এবং গোয়ার সরকার কারা করবে সেই ফলাফল প্রকাশিত হবে। একেকটি রাজ্যে এক এক ধরনের লড়াই। তবে সব রাজ্য মিলিয়ে মূল লড়াই বিজেপি বনাম কংগ্রেসের।
পাঁচটি রাজ্যের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নিঃসন্দেহে উত্তরপ্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল। কারণ এই রাজ্যে যাঁরা সরকার গড়বেন তাঁদের ক্ষেত্রে আগামী লোকসভা নির্বাচনে এগিয়ে থাকার একটা সুযোগ নিঃসন্দেহে থাকছে। বিশেষ করে বিজেপির কাছে এই রাজ্যের লড়াই নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ। অন্যদিকে সমাজবাদী পার্টি অথবা কংগ্রেসের কাছে এবারের নির্বাচন আগামী ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই।
উত্তরপ্রদেশে মোট ৪০৩ টি আসন আছে। সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজন ২০২টি আসন। উত্তরপ্রদেশে এর আগে কংগ্রেস, সমাজবাদী পার্টি, বহুজন সমাজ পার্টি হয়ে বিজেপি সরকারের এসেছে। এমনকী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও উত্তরপ্রদেশের বারাণসী লোকসভা আসন থেকেই জয়ী হয়ে দ্বিতীয়বার সংসদে গিয়েছেন।
সাধারণভাবে বলা হয়ে থাকে, উত্তরপ্রদেশে যে দল জিতবে তারাই লোকসভা ভোটে জয়ের ক্ষেত্রে এগিয়ে থাকে। ফলে বিজেপি নিঃসন্দেহে এই রাজ্যে লড়াইকে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দিয়েছে। অন্যদিকে আগামী নির্বাচনগুলিতে যদি নিজেদেরকে প্রাসঙ্গিক করতে হয় তাহলে এবারের ভোটে ছাপ ফেলা প্রয়োজন। সেটা অনুভব করেই সমাজবাদী পার্টি, কংগ্রেস অথবা বহুজন সমাজ পার্টি নিজেদের সর্বশক্তি লাগিয়ে দিয়েছে ভোটে।
পাঞ্জাব পাকিস্তানের সঙ্গে সীমান্ত ভাগ করে চলেছে। যার ফলে ওই রাজ্যের রাজনীতি অন্য বেশকিছু রাজ্যের থেকে আলাদা। এখানে শস্য উৎপাদন যেমন খুব ভালো হয়, তেমনই সীমান্তবর্তী নানা অপরাধ এবং মাদকের সমস্যা রয়েছে। পাঞ্জাবে মোট ১১৭ টি আসন। এই মুহূর্তে রাজ্য কংগ্রেসের দখলে থাকলেও অন্য দলগুলোও এখানে রাজত্ব করেছে। কংগ্রেসের নিজস্ব অন্তর্দ্বন্দ্ব রয়েছে। একদিকে রয়েছেন চরণজিৎ সিং চান্নি, অন্যদিকে রয়েছেন নভজোৎ সিং সিধু। ফলে একদিকে যেমন বিপক্ষের সঙ্গে লড়াই করতে হয়েছে কংগ্রেসকে, তেমনই কয়েক মাস ধরে দলীয় অন্তর্দ্বন্দ্ব সামলাতে হয়েছে। সেখান থেকে কংগ্রেস ঘুরে দাঁড়াতে পারে কিনা সেটাই এখন দেখার।
স্বাধীনতার আগে পাঞ্জাব ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে বিস্তৃত ছিল। পরে দেশভাগের পর হিমাচল এবং হরিয়ানা থেকে আলাদা হয়ে নিজস্ব স্বতন্ত্র পরিচয় তৈরি করে। এখানে রাজনীতি কেন্দ্রের কারণে নানাভাবে নানা সময়ে প্রভাবিত হয়েছে। এখন দেখার এবছর কেমন ফল হয়।
উত্তর ভারতের রাজ্য উত্তরাখণ্ড বিজেপি অনেকদিন শাসন করেছে। দুই দশকের কিছু সময় আগে এই রাজ্যটি উত্তরপ্রদেশ থেকে আলাদা হয়। এইটুকু সময়ের মধ্যেই দশজন মুখ্যমন্ত্রী এরাজ্যে শপথ গ্রহণ করেছেন। গত কয়েক বছরের মধ্যে অনেকবার মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ার হাতবদল হয়েছে। এই মুহূর্তে বিজেপি সরকারের থাকলেও কংগ্রেস সরকার গড়ার বিষয়ে আশাবাদী। অন্যদিকে আম আদমি পার্টিও এখানে জোরদার প্রচার সেরেছে। ফলে তাদেরও শক্তিকে কোনওভাবে অস্বীকার করা যায় না।
গোয়ায় বিজেপি ও কংগ্রেসের সেয়ানে সেয়ানে লড়াই হয়। আগের ভোটে কংগ্রেস এগিয়ে থাকলেও বাকি দলগুলোকে নিয়ে বিজেপি সরকার গঠন করে ফেলেছিল। এবছর নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস সেখানে গিয়ে প্রচার করে। তবে ভোটে তার খুব বেশি প্রভাব পড়েছে কিনা তা ফলাফল প্রকাশ হলেই বোঝা যাবে। আগে নির্বাচনে ফলাফল ঘোষণার পরে বিজেপি গোয়া ফরওয়ার্ড পার্টি, গোমন্তক পার্টিকে সঙ্গে নিয়ে সরকার গঠন করেছিল। এবছর ফলাফল ঘোষণার পর একই সমীকরণ দাঁড়ায় সেটা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। গোয়ার জনসংখ্যার দুই-তৃতীয়াংশ হিন্দু, এক-চতুর্থাংশ খ্রিষ্টান। এই অবস্থায় ভোটের ফলাফল কোন দিকে যায় সেটাই এখন দেখার।
মণিপুর দেশের অন্যতম ছোট রাজ্য। উত্তর-পূর্ব ভারতের এই রাজ্যে আসন সংখ্যা মাত্র ৬০। সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে গেলে ৩১টি আসন প্রয়োজন। এরাজ্যে ক্ষমতায় রয়েছে বিজেপি। তাদের জোটসঙ্গী ন্যাশনাল পিপলস্ পার্টি এবং নাগাল্যান্ড পিপলস ফ্রন্ট। এরাজ্যে হিন্দু এবং খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের বাস বেশি। উত্তর পূর্ব ভারত জুড়ে বিজেপি গত কয়েক বছরে দারুণ সাফল্য পেয়েছে। তার প্রভাব পড়েছে মণিপুরেও। এই রাজ্যের স্থানীয় সমস্যাগুলির মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল আফস্পা আইন। এই আইন ভোটে কতটা প্রভাব ফেলে সেটাই এখন দেখার।