৬০০ কিমি হেঁটে ফিরেছেন, সফরকালে কেউ জলও দেয়নি, জানালেন পাঞ্জাবের কৃষকরা
৬০০ কিমি হেঁটে ফিরেছেন, সফরকালে কেউ জলও দেয়নি, জানালেন পাঞ্জাবের কৃষকরা
লকডাউউনের সময় বহু মানুষই পায়ে হেঁটে এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে পাড়ি দিয়েছেন। সেই সফরের অভিজ্ঞতা মনে করলেই গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে অনেকের। তেমনই এএস সুখদেব। ২১ দিন কোয়ারান্টাইনে থাকার পর রবিবার সকালে প্রথম বাড়ির বাইরে এলেন। তিনি এখনও তাঁর ৯দিনের সফর মনে রেখেছেন, রাজস্থানের জয়সলমির থেকে পাঞ্জাবের মুক্তসার পর্যন্ত।
রাজস্থানের মরুর ওপর দিয়েই পাঞ্জাবে ফিরেছেন ২১ জনের দল
২১ বছরের যুবক ২১জনের দলের সঙ্গে ছিলেন, লকডাউনের কড়াকড়ি হওয়ার জন্য তিনটি পরিবার প্রধান রাস্তা ছেড়ে বালিময় মরুভূমি অতিক্রম করেছেন। ১৬ এপ্রিল পায়ে হেঁটে সফর শুরু করে সুখদেব এবং ২৫ এপ্রিল তা শেষ হয়, তারপর থেকে ঘরের মধ্যেই ছিলেন তিনি। প্রত্যেক বছরের মতো এ বছরের মার্চেও এই দলটি মুক্তসারের গান্দার গ্রাম থেকে জয়সলমিরের সুথার মান্ডিতে সবুজ ছোলা ফলাতে গিয়েছিল। কিন্তু লকডাউনের কারণে কাজ বন্ধ হয়ে যায় এবং দ্বিতীয় লকডাউনের মেয়াদ শুরু হওয়ার পরই তাঁরা পায়ে হেঁটে বাড়ি ফেরার সিদ্ধান্ত নেন।
সেচঁনালা থেকে জল খেতে দেওয়া হয়নি
নির্মম সেই সফরের কথা স্মরণ করে সুখদেব বলেন, ‘১৬ এপ্রিল সেখানে কড়াভাবে কার্ফু জারি করা ছিল এবং মূল রাস্তায় পুলিশের হাত থেকে বাঁচতে আমরা মরুভূমির ওপর দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলাম। সুথার মান্ডি থেকে আমাদের গ্রামের দুরত্ব প্রায় ৬০২ কিমি, কিন্তু আমাদের মনে হয় আমরা বেশি হেঁটেছি। কেউ আমাদের সাহায্য করেনি এই সফরে এবং এমনকি কেউ আমাদের সেচ-নালা থেকে জল খেতে দেয়নি। গ্রামবাসারা আমাদের দেখে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছিলেন যে আমরা তাঁদের জলকে সংক্রমিত করে দিতে পারি।' ওই দলে মহিলা ও শিশুরাও ছিল।
গুরদেব সিং তাঁর সন্তানসম্ভবা স্ত্রী, নসীব কউর এবং ওই দম্পতির ৬ বছরের কন্যাকে নিয়ে হাঁটছিলেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের এমনকী কোনও গ্রামেও প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি, আমরা চেয়েছিলাম যে সফরের ফাঁকে গাছের ছায়ায় বিশ্রাম নিয়ে নেব। আমার সঙ্গে আমার স্ত্রী ও ৬ বছরের মেয়ে ছিল। বীরপাল কউরেরও স্ত্রী সন্তানসম্ভবা, তাই বাড়ি ফিরে যাচ্ছিলেন এবং অন্য একটি পরিবারের ৩ মাসের শিশুকন্যা ছিল।
শিশুরা থাকা সত্ত্বেও কেউ সাহায্য করেনি
সুখদেব বলেন, ‘আমরা পেছনে তাকিয়ে দেখি বহু পাঞ্জাবি পায়ে হেঁটে ফিরছেন। আমরা দেখলাম একজন ব্যক্তি জল না পেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়লেন এবং মারা গেলেন। আমরা জানিওনা যে তাঁর মৃতদেহ নিয়ে কি করে গ্রামে পৌছানো সম্ভব হয়েছিল।' ওই দলের কাছে খাবার বলতে গমের আটা, গুড়, ছোলা ও দুধের গুঁড়ো ছিল। সুখদেব বলেন, ‘আমরা শুকনো ডাল-পাতা দিয়ে আগুন ধরিয়ে রুটি তৈরি করতাম। গুড়ো দুধ দিয়ে শিশুদের দুধ ও চা তৈরি হত। আমাদের এটা ভেবে দুঃখ লাগত যে আমাদের সঙ্গে শিশুরা রয়েছে দেখেও কেউ আমাদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়ায়নি।' বেদনাদায়ক সফর ও কোয়ারান্টাইন শেষ হওয়ার পর কৃষকদের দলের এখন চিন্তা কি করে পরিবারের পেটে ভাত জোটাবে।
কৃষকদের দুর্দশার কথাও চিন্তা করুক সরকার
সুখদেব বলেন, ‘তুলা বপনের সঙ্গে যুক্ত না হয়ে আমরা এখন ধান বপনের মরশুমের ওপর অপেক্ষা করছি। অভিবাসী শ্রমিকদের মতো আমাদের কৃষকদেরও কথা চিন্তা করা হোক। আমরাও কৃষিক্ষেত্রের শ্রমিক এবং আমাদেরও অর্থের প্রয়োজন রয়েছে।' আর এক কৃষক গুরুদেব সিং বলেন, ‘২১ মার্চের পর আমরা আর কাজ করতে পারিনি। আমরা কিছুদিন গ্রামেই অপেক্ষা করি ও তারপর ১৬ এপ্রিল রওনা দিই।'
লকডাউন ৪.০: আধণ্টা অন্তর চলবে বাস, প্রতিশ্রুতিই সার,যাত্রী দুর্ভোগে শিকেয় সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং