মেজর লীতুল গগৈ ছিলেন তাঁর 'ফেসবুক বন্ধু', শুনুন সেই কাশ্মীরি মেয়ের কথা!
মেজর গগৈ যে কাশ্মীরি তরুনীকে নিয়ে রাত কাটাতে চেয়েছিলেন সেই তরুণী এক বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটকে জানান, তিনি আর মেজর 'ফেসবুক বন্ধু' ছিলেন এবং তিনি 'নিজে ইচ্ছায়' মেজরের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন।
তিনি এবং মেজর গগৈ 'ফেসবুক বন্ধু' ছিলেন। 'নিজের ইচ্ছায়' তিনি মেজরের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন। বুধবার আটকের পর কাশ্মীরি মহিলাটি জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে এই বয়ানই দিয়েছেন। মেজর লীতুল গগৈ এর শ্রীনগর কাণ্ডে ফের নতুন তথ্য প্রকাশ্যে এল। যদিও বৃহস্পতিবার এর সাক্ষাতকারে অন্যরকম ইঙ্গিতই দিয়েছিলেন তাঁর মা।
গত বছর কাশ্মীরে পাথর নিক্ষেপকারীদের মোকাবিলায় ফারুক দার নামে এক স্থানীয় ব্যক্তিকে জিপের সামনে 'মানব ঢাল' হিসেবে বেঁধে সংবাদ শিরোনামে এসেছিলেন মেজর লীতুল গগৈ। গত বুধবার এক 'কিশোরী' (এখন জানা যাচ্ছে প্রাপ্তবয়স্কা)-র সঙ্গে রাত কাটাতে গিয়ে পুলিশের হাতে ধরা আটক হন তিনি। এরপর তার পাশাপাশি স্থানীয় ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে নেওয়া হয় ওই মহিলার বয়ানও। সূত্রের খবর সেখানে তিনি বলেন, সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটের মাধ্যমে মেজরের সঙ্গে তাঁর বন্ধুত্ব হয়। তিনি আরও বলেন, তিনি 'নিজের স্বাধীন ইচ্ছায়' হোটেলে গিয়েছিলেন মেজর লীতুল গগৈ-এর সঙ্গে সময় কাটাতে। তিনি এও বলেন, মেজর তাঁর 'পূর্বপরিচিত'।
সাব ডিভিশনাল ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে, তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন এক কাশ্মীরের এসপি (উত্তর) ও এক ডিএসপি পদমর্যাদার অফিসার। তাদেরকে তিনি জানান, এই প্রথম নয়, তিনি এবং মেজর গগৈ তার 'বহুবারই' দেখা করেছেন। একসঙ্গে 'বেড়াতে' গিয়েছেন বিভিন্ন জায়গায়। পাশপাশি তিনি নিজেকে প্রাপ্ত বয়স্ক বলেও দাবি করেছেন। প্রমাণ হিসেবে তিনি ম্যাজিস্ট্রেটকে তাঁর আধার কার্ডও দেখিয়েছেন। আধার কার্ড অনুযায়ী তাঁর জন্ম ১৯৯৯ সালে। বাড়ি বুড়গাম জেলার চেক-ই-কাওয়ুসা গ্রামে। তিনি জানিয়েছেন দশম শ্রেনী অবধি পড়াশোনা করে, আপাতত তিনি একটি স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত আছেন। তবে তাঁর বয়স নিয়ে এখনও ধন্দ আছে পুলিশের মনে। কাশ্মীর পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, 'মহিলা সত্যিই প্রাপ্তবয়স্ক কিনা তা এখনও তদন্ত করতে হবে। অন্যান্য উৎস থেকে যাচাই করা প্রয়োজন।'
কিন্তু একজন সেনা অফিসার, যিনি আবার এলাকায় অত্যন্ত বিতর্কিত এক চরিত্র, তাঁর সঙ্গে এই 'কাশ্মীরি কলি'-র ভাব জমল কীভাবে? মহিলার দাবি, প্রথমে 'আদিল আদনান' নামে একজনের সঙ্গে তাঁর ফেসবুকে আলাপ হয়। আলাপ গড়ায় বন্ধুত্বে। একমাসের মধ্যেই মহিলা জানতে পারেন 'আদিল আদনান' আর কেউ নন, তিনি মানবঢাল খ্যাত সেনা অফিসার মেজর লীতুল গগৈ। আদিল আদনান তাঁর জাল ফেসবুক পরিচয়। তবে মেজর তাঁকে ধোকা দেননি, বলেই তরুনীর দাবি। তিনি ম্যাজিস্ট্রেটকে বলেন মেজর গগৈ নিজেই 'তার আসল পরিচয় প্রকাশ জানিয়েছিলেন'। মেজরের পরিচয় জানার পরই তাঁদের 'বন্ধুত্ব' গাঢ় হয়। পাশাপাশি এই ঘটনার তৃতীয় ব্যক্তি সমীর আহমেদ মালাকে-ও অনেকদিন ধরে চেনেন বলে দাবি করেন। জানান সমীর বুড়গামেরই লোকিপোড়া পোশকার এলাকার বাসিন্দা। যদিও ম্যাজিস্ট্রেট তাঁকে সমীরের বাবা-মার নাম জিজ্ঞাসা করলে সে জবাব দিতে পারেনি। এই সমীরও একজন্ সেনা সদস্য বলে জানা গিয়েছে।
গত বৃহস্পতিবারই ওই কিশেরীর মা নাসিমা বেগম জানিয়েছিলেন, ঘটনার দিন, 'ও (কিশোরী), সকালে বাড়ি থেকে বেড়িয়েছিল ব্যাঙ্কে যাবে বলে। বলেছিল তাড়াতাড়িই ফিরে আসবে। আমরা ক্ষেতে কাজ করতে গিয়েছিলাম। এ বিষয়ে (শ্রীনগরের ঘটনা) কোন ধারণাই ছিল না। অনেক পরে বিকালে গ্রামের অন্যরা আমাদের খবর দেয়।' তাঁর আরও দাবি ছিল, মেজর গগৈ ও সমীর এর আগেও রাতে দু-বার তাদের বাড়িতে এসেছিলেন। কোনও কারণ ছাড়াই তাঁদের মেয়েকে ডেকে নানান কথা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল। দেখা যাচ্ছে মা মেজর গগৈঃএর দিকে আঙুল তুললেও মেয়ে এই বিতর্কিত সেনা অফিসারকে বাঁচেনোর চেষ্টাই করেছে। এ নাটকের আরও কত পর্দা ফাঁস হওয়া বাকি রয়েছে সেটাই দেখার। ঘটনাটি পরই অবশ্য ওই তরুণীকে অনেক দূরের গ্রামে তাঁর এক আত্মীয়ের বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।