চার বছরে ৫ থেকে বেড়ে ২০ রাজ্য! যেভাবে সারা দেশে ছুটেছে মোদী-শাহের অশ্বমেধের ঘোড়া
২০১৯-এ বিজেপি বনাম সবাই হলেও, বিজেপি মনে করে কর্নাটকের ভোটের ফলে দলের আখেরে লাভ হবে এবং বিজেপি ২০২৯ পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকবে।
আগামী লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির বিরুদ্ধে জোট বাধছে কংগ্রেস সহ বিভিন্ন কেন্দ্রীয় ও আঞ্চলিক দল গুলি। বলা হচ্ছে বিজেপি বনাম সবাই। কিন্তু ২০১৪ সালের আগে ছবিটা বেশ আলাদা ছিল। মাত্র ৫ টি রাজ্যে ক্ষমতায় ছিল গেরুয়া শিবির। সেখান থেকে গত চার বছরের শক্তি বাড়াতে বাড়াতে আজ মোদী-অমিত সাহের নেতৃত্বে বিজেপি দেশের মোট ২০ টি রাজ্যে সরকার চালাচ্ছে। বেশিরভাগ রাজ্যেই একা, আবার কোথাও কোথাও জোট গড়ে।
বিজেপি যেনতেন প্রকারে ক্ষমতা দখল করছে বলে, বিরোধীরা যতই চিৎকার করুক না কেন, এ মুহুর্তে দেশের সম্ভবত সবচেয়ে শক্তিশালী রাজনৈতিক দল তারাই। কর্ণাটকে সরকার গড়তে না পারলেও বিজেপি ১০০ টির বেশি আসন লাভ করেছে। কে ভেবেছিল বাম দুর্গ ত্রিপুরা দখল করবে তারা, কিংবা মেঘালয় ও নাগাল্যান্ড বা অরুণাচলের মতো উত্তরপূর্বের রাজ্যগুলিতে, যেখানে এতদিন বলতে গেলে তাদের কোনও অস্তিত্বই ছিল না, সেসব জায়গায় বিজেপি সরকার গঠন করবে? একনজরে দেখে নেওয়া যাক গত ৪৮ মাসে কিভাবে অদম্য গতিতে সারা দেশে ছুটেছে বিজেপির অশ্বমেধের ঘোড়া।
২০১৪ সালের মে মাসে ক্ষমতায় আসে নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স (এনডিএ)। লোকসভা নির্বাচনে জয়ী হওয়ার আগে, বিজেপির হাতে ছিল মাত্র পাঁচটি রাজ্য - গুজরাট, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড় ও নাগাল্যান্ড। কিন্তু প্রবল জনসমর্থন নিয়ে ক্ষমতা দখলের পর থেকেই বদলাতে থাকে মানচিত্রটা। বিজেপি একা পেয়েছিল, ২৮২ টি আসন। জোটসঙ্গীরা আরও ৫৪ টি আসন যোগ করে। সব মিলিয়ে এনডিএর আসন ছিল ৩৩৬ টি। যাকে অনেকেই বলেছিলেন 'মোদী সুনামি'।
সুনামির ঢেউ একবার আসে, কিছু সময় থেকে সেই বিশাল ঢেউ থিতিয়ে যায়। কিন্তু মোদী সুনামী যেন সাগরের নিয়মিত ঢেউ-এর মতা আছড়ে পড়তে থাকে পরবর্তীতে বিধানসভা নির্বাচনগুলিতে। লোকসভা নির্বাচনের সঙ্গেই সিকিম ও অন্ধ্রে নির্বাচন হয়েছিল। সিকিমে, সিকিম ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (এসডিএফ) ও বিজেপি'র জোট সরকারই ক্ষমতায় বজায় থাকে। অন্ধ্র প্রদেশেও প্রথমে তেলেগু দেশম পার্টি (টিডিপি)-র সঙ্গে জোট সরকার গড়েছিল বিজেপি। পরে অবশ্য চন্দ্রবাবু বিজেপির হাত ছেড়ে দেন।
২০১৪-র লোকসভা নির্বাচনের পাঁচ মাস পরই আসে মহারাষ্ট্রের বিধানসভা নির্বাচন। সেখানে ২৮৮ আসনের মধ্যে বিজেপি পায় ১২২ টি। এনডিএ-সঙ্গী শিবসেনা-এর সঙ্গে নির্বাচন পরবর্তী জোট গড়ে মহারাষ্ট্র সরকার গঠন করে বিজেপি। পশ্চিম থেকে এবার যাত্রা সোজা উত্তরে। ৯০ সদস্যের হরিয়ানা বিধানসভায় ৪৭ টি আসন জিতে ক্ষমতায় আসেন মোদী-শাহ-রা। কদিন বাদেই পূর্বের রাজ্য ঝাড়খন্ডের বিধানসভা নির্বাচনে জোট সঙ্গীর সঙ্গে মিলিত ভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় বিজেপি। জম্মু ও কাশ্মীরেও দ্বিতীয় সেরা দল হিসেবে উঠে আসে বিজেপি। পরে মেহবুবা মুফতির পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টি (পিডিপি)-এর সঙ্গে জোট করে সরকার গড়ে বিজেপি। অর্থাত ২০১৪ শেষ হতে না হতেই ক্ষমতা দ্বিগুনের বেশি বাড়িয়ে দেশের ১১ টি রাজ্যে উড়তে থাকে গেরুয়া পতাকা।
২০১৫-য় এসে বলা যেতে পারে প্রথম থিতিয়ে পড়ে মোদী সুনামি। প্রধানমন্ত্রী ব্যাপক প্রচার চালিয়েছিলেন। কিন্তু হারতে হয় দিল্লি ও বিহারে। ২০১৬-য় অসমে ১৫ বছরের কংগ্রেস শাসনের অবসান ঘটায় বিজেপি। কিন্তু হারতে হয় ওই বছর নির্বাচন হওয়া অন্য তিনটি রাজ্যে - পশ্চিমবঙ্গ, কেরল ও তামিলনাডুতে। তবে, এটাও মাথায় রাখতে হবে এই রাজ্যগুলোতে বিজেপির কোনওদিনই সেরকম শক্তি ছিল না। তাও অনেক জায়গাতেই আগের থেকে শক্তি বেড়েছিল অনেকটাই। একই বছরের সেপ্টেম্বরে নির্বাচন ছাড়াই অরুণাচলের ক্ষমতা পেয়ে যায় বিজেপি। রাজ্যের ৪৭ জন বিধায়ক একসঙ্গে কংগ্রেস ছেড়ে যোগ দেন বিজেপিতে। ফলে উত্তরপূর্বের একেবারে শেষ রাজ্যটিতে কংগ্রেস সরকার পড়ে যায়। আস্থাভোটে জিতে ক্ষমতা দখল করে বিজেপি।
২০১৭ সালে মোদী-অমিত শাহ ঝুটিকে থামানো যায়নি। পরপর জয় আসে উত্তরাখণ্ড ও উত্তর প্রদেশে। উত্তরপ্রদেশে তো বিশাল জনসমর্থন পায় গেরুয়া পার্টি। তবে পাঞ্জাবে জোট সঙ্গী শিরোমনি অকালি দলের সঙ্গে র পরপর দুবার সরকার চালানোর পর হারতে হয়। হারের জন্য অবশ্য় বিজেপির থেকেও দল শিরোমনি অকালি দলের (এসএডি) ব্যর্থতাকেই বেশই দায়ী করেন ভোট বিশ্লষকরা। গোয়া এবং মণিপুরে বিজেপি প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী কংগ্রেসের চেয়ে কম আসন পায়। কিন্তু ও দুটি রাজ্যেই দ্রুত আঞ্চলিক দল ও নির্দল প্রার্থীদের জড়ো করে সরকার গঠনের প্রয়োজনীয় সংখ্যা জুটিয়ে ফেলে বিজেপি। কংগ্রেসকে প্রথম হয়েও বসতে হয় বিরোধী আসনে।
২০১৭
সালে
বিহারের
রাজনীতিতে
হড়
পরিবর্তন
আসে।
লালু
প্রসাদ
যাদবের
রাষ্ট্রীয়
জনতা
দল
(আরজেডি)
এর
সঙ্গে
মহাগোটবন্ধন
ছেড়ে
বেরিয়ে
আসেন
নীতীশ
কুমার।
মুখ্যমন্ত্রী
পদ
থেকে
পদত্যাগ
করেন।
২৪
ঘণ্টার
মধ্যে
বিজেপির
সমর্থন
নিয়ে
মুখ্যমন্ত্রীর
পদে
শপথ
গ্রহণ
করেন
নীতীশ।
আস্থা
ভোটে
তাঁদের
পক্ষে
পড়ে
১৩১
টি
ভোট
আর
বিরুদ্ধে
১০৮টি।
বিহারও
কব্জায়
আসে
মোদী-শাহ-এর।
ডিসেম্বরে
একসঙ্গে
পরীক্ষা
ছিল
দুই
রাজ্যে।
উত্তরের
হিমাচল
প্রদেশ,
আর
পশ্চিমে
মোদী-শাহ-র
নিজের
রাজ্য
গুজরাত।
হিমাচলে
প্রতিষঅঠআন
বিরোধী
ভোটকে
কাজে
লাগিয়ে
সহজেই
ক্ষমতা
দখল
করে
বিজেপি।
য়দীয়
হেরে
যান
তাদের
মুখ্যমন্ত্রী
পদপ্রার্থী
প্রেম
কুমার
ধুমল।
কিন্তু
গুজরাতে
হয়
কঠিন
লড়াই।
কংগ্রেস
রাজ্যে,
বিশেষত
গ্রামাঞ্চলে,
আসন
অনেক
বাড়ায়।
এই
দুই
রাজ্য
মিলে
মোট
দেশের
১৯
টি
রাজ্যে
বিজেপি
ক্ষমতা
দখল
করে।
গুজরাতে জয় এলেও তা ছিল কষ্টার্জিত। বিরোধীরা বিশেষ করে কংগ্রেস বলতে থাকে মোদী হাওয়ায় আর জোড় নেই। কিন্তু এবছর মার্চ মাসে সবাইকে চমকে দিয়ে ত্রিপুরার দার্ঘদিনের বাম জমানার অবসান ঘটিয়ে রাজ্যে প্রথমবার ক্ষমতায় আসে বিজেপি। শূন্য থেকে আসন একবারে বেড়ে হয় ৩৬। পাশাপাশি মেঘালয় এবং নাগাল্যান্ডেও তাদের জোট সরকার গঠিত হয়। মেঘালয়ে মাত্র ২টি আসন পায় বিজেপি। কংগ্রেস পায় ২১টি আসন। কিন্তু কংগ্রেসকে আটকাতে বিজেপি ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি) -কে দ্রুত সমর্থন জানায়। এনপিপি পেয়েছিল ১৯ টি আসন। নাগাল্যান্ডে, নাগাল্যান্ড পিপলস ফ্রন্ট (এনপিএফ)-এর সঙ্গে জোট করে বিজেপি ১২ টি আসনে জয়লাভ করে। কিন্তু ভোটের পরই তারা হাত বদলে যোগ দেয় ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক প্রোগ্রেসিভ পার্টি (এনডিপিপি) এর সঙ্গে। গঠিত হয় বিজেপির জোট সরকার।
এভাবেই এখন দেশের সবচেয়ে শক্তিশালি দল হিসেবে মোট ২০ টি রাজ্যে সরকারে আছে বিজেপি। কর্ণাটকে ধাক্কার পর বিজেপিকে প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার মোকাবিলা করতে হবে মধ্য প্রদেশ, রাজস্থান এবং ছত্তিশগড় - এই তিন রাজ্যে। এছাড়া আছে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মিজোরাম রাজ্যের নির্বাচনও। তারপর ২০১৯।