মারাত্মক বায়ু দূষণ দিল্লি বাসিন্দাদের গড় আয়ু কমতে পারে প্রায় ১৭ বছর, বলছে গবেষণা
বর্তমানে সহ্যসীমা থেকে প্রায় ২৫ গুণ বেশি বিষাক্ত বায়ুতে শ্বাস নিচ্ছেন দিল্লির বাসিন্দারা
প্রতি বছরের মতো এই বছরও দীপাবলির পর মারাত্মক বায়ুদূষণের কবলে পড়ে জেরবার দিল্লি বাসী। দূষিত ধোঁয়াশার চাদরে ঢাকা পড়েছে দেশের রাজধানী। সম্প্রতি প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে বায়ুর গুণগত মান খারাপ হওয়ার কারণে দিল্লির প্রায় ৪০শতাংশের বেশি বাসিন্দা বাসস্থান পরিবর্তনের ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন।
গড় আয়ু কমতে পারে ১৭ বছর পর্যন্ত
এমতাবস্থায় অপর একটি সমীক্ষায় দেখা গেল প্রতি বছর মারাত্মক বায়ুদূষণের কারণে দিল্লির বাসিন্দাদের গড় আয়ু প্রায় ১৭ বছর পর্যন্ত কমে যেতে পারে। এর জন্য বাতাসে ভাসমান সবথেকে দূষিত বালুকণা পিএম ২.৫কে কাঠগড়ায় তুলেছেন বিশেষজ্ঞরা। অন্যদিকে ১৯ নভেম্বর পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য যাচাই করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে বর্তমানে দিল্লির বাসিন্দারা সহ্যসীমা থেকে প্রায় ২৫ গুণ বেশি বিষাক্ত বায়ুতে শ্বাস নিচ্ছেন প্রতিনিয়ত।
পিএম ২.৫ মানব শরীরের জন্য বয়ে আনছে ক্ষতিকর প্রভাব
পরিবেশ বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, বাতাসে ভাসমান পিএম ২.৫ নামক আণুবীক্ষণিক বায়ুকণাটিই সবথেকে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে মানব শরীরে। পিএম ২.৫ এর সঙ্গে বিষাক্ত কার্সিনোজেনিক কণা মিশে গিয়ে মানব শরীরের জন্য ডেকে আনছে মারাত্মক সব রোগ। বর্তমানে দিল্লির বায়ুমান সূচকের সঙ্গে পিএম ২.৫ -র উপস্থিতিও যাচাই করেন বিশেষজ্ঞরা। তারপরই চোখ কপালে ওঠে তাদের।
অন্যদিকে জাতীয় বায়ু গুন সূচকের একটি তথ্য অনুযায়ী বাতাসে বাতাসে পিএম ২.৫ বেহাল অবস্থার ফলে মানুষের স্বাভাবিক শ্বাসপ্রশ্বাস যেমন বিঘ্নিত হয় তেমনই এর প্রভাবে শ্বাসকষ্ট জনিত একাধিক সমস্যাও ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পায় বলে জানা যায়।
পিএম ২.৫ এর প্রভাবে মৃত্যু প্রায় ৩০ লক্ষ মানুষের
রক্ত চলাচল রোধ সহ হার্ট অ্যাটাক ও ব্রেন ডেথের ক্ষেত্রেও অগ্রণী ভূমিকা রাখে মানুষের চুলের মাত্র ৩ শতাংশ ব্যাসার্ধের সমপরিমাণ এই মারাত্মক দূষিত বালুকণা। গত ২০ দিনে দিল্লির বাতাসে পিএম ২.৫ এর গড় উপস্থিতি ছিল ২৫৪-র আশেপাশে। ২০১৮ সালের তুলনায় যা প্রায় ৩০ পয়েন্ট বেশি। ২০১৭ সালে সাড়া বিশ্বে প্রায় ৩০ লক্ষ মানুষের মৃত্যু সুনিশ্চিত করে এই কুখ্যাত বালুকণা। যার অর্ধেকেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয় চীন এবং ভারতে।
মার্কিন গবেষণাতেও উঠে এল নতুন তথ্য
এবার আমেরিকার একটি গবেষণাতেও উঠে এল প্রায় একই তথ্য। মাইকেল গ্রিনস্টোন এবং শিকাগো ইউনিভার্সিটির এনার্জি পলিসি ইন্সটিটিউটের ক্লেয়ার কিং ফ্যান ২০১৬ সালের দিল্লির বাতাসে উপস্থিত পিএম ২.৫-র তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখেন। ওই গবেষণার পরও দেখা যায় মারাত্মক বায়ুদূষণের কারণে দিল্লির বাসিন্দাদের গড় জীবনকাল প্রায় ১০ বছর পর্যন্ত কমে যেতে পারে। যেখানে তারা বেইজিং এবং লস অ্যাঞ্জেলসে থাকলে তাদের সাধারণ জীবনকালের থেকে যথাক্রমে গড়ে প্রায় ছয় এবং এক বছর কম বাঁচবেন।
সম্প্রতি, বায়ুদূষণের বাড়বাড়ন্তের জেরে জনস্বাস্থ্যে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে দিল্লি সরকার। তাপ বিদ্যুৎ শিল্প, ভারী যানবাহনের অত্যধিক ব্যবহার এবং উত্তর ভারতে কৃষকদের যথেচ্ছ হারে খড় পোড়ানোর কারণেই রাজধানীতে বিগত কয়েক বছর ধরে বায়ু দূষণের এই বাড়বাড়ন্ত বলে মনে করছেন পরিবেশবিদরা।