'বদল' চাইছে তামিলনাড়ু! দ্রাবিড় রাজনীতিতে পদ্মের কাঁটা উপড়ে কমল উত্থান কি আদৌ সম্ভব?
প্রায় এক বছর ধরেই শোনা যাচ্ছিল যে রাজনীতিতে পা রাখতে চলেছেন রজনীকান্ত। ৩১ ডিসেম্বর নতুন দল ঘোষণা করার কথাও ছিল তাঁর। কিন্তু সব জল্পনার অবসান ঘটিয়ে শরীরের কথা মাথায় রেখে রাজনীতিতে পা রাখবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছিলেন রজনীকান্ত। তবে রজনীকান্ত সরে গেলেও জমি আকড়ে এখনও তামিল রাজনীতিতে দাগ কাঁটার চেষ্টা করে চলেছেন আরও এক দক্ষিণী সুপারস্টার কমল হাসান। হননি মাক্কাল নিধি মইয়ামের প্রধান চেয়েছিলেন রজনীর সঙ্গে মিলে তামিল রাজনীতিতে ঝড় বইয়ে দেবেন। তবে তা সম্ভব হচ্ছে না। তবে পিছু হটতে নারাজ কমল।
সাম্প্রদায়িক রাজনীতির বিরোধিতা
তামিল রাজনীতিতে দুই প্রতিষ্ঠিত দল ডিএমকে এবং এআইএডিএমকেরে সরিয়ে তামিল রাজনীতির আঙিনায় নতুন নায়ক হয়ে ওঠার স্বপ্ন দেখছেন কমল হাসান। সেই স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করতেই দুই রাজনৈতিক দলকেই ক্রমাগত আক্রমণ করে চলেছেন কম হাসান। এদিকে বিজেপির হাত ধরার কোনও ইঙ্গিত তিনি দেননি। বরং বিজেপির সাম্প্রদায়িক রাজনীতির বিরোধিতা করতেই দেখা গিয়েছে।
দ্রাবিড় মসনদে বদল?
চলতি বছরে অনুষ্ঠিত হতে চলা তামিল নির্বাচনে দুই প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী হল ডিএমকে এবং এআইএডিএমকে। এদের হাত ধরে তামিল রাজনীতিতে ফের প্রাসঙ্গিকতা ফিরে পেতে মরিয়া হয়েছে কংগ্রেস। বিগত কয়েক দশক ধরে তামিল রাজনীতিতে অস্তিত্ব বজায় রাখলেও পুরোনো বিক্রমে ফিরতে পারেনি কংগ্রেস। তবে এবার ডিএমকের হাত ধরে সেই কংগ্রেস ফেরার রূপরেখা তৈরি করছে দ্রাবিড় মসনদে।
সমীকরণের ছড়াছড়ি
এদিকে এআইএডিএমকের হাত ধরে বিজেপি দ্রাবিড় রাজনীতিতে নিজেদের ছাপ ফেলতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। অমিত শাহ যেভাবে তামিলনাড়ু সফরে যাওয়ার বিষয়ে উদগ্রীব, সেখানে তামিল রাজনীতিতে এই প্রথমবার 'হিন্দুত্ববাদ'-এর উত্থান দেখা যেতে পারে। তবে বিজেপির সেই উত্থানকে ভালো চোখে দেখছে না তাদেরই জোট সঙ্গী এডিএমকে। এরই মাঝে তামিল রাজনীতিতে ঢুকতে চাইছে আসাদউদ্দিন ওয়েইসির এআইএমআইএম।
মাথা উঁচিয়ে দাঁড়াতে চাইছেন কমল হাসান
এসব রাজনৈতিক সমীকরণের মাঝেই এবার মাথা উঁচিয়ে দাঁড়াতে চাইছেন কমল হাসান। নিজের সুপারস্টার সত্তাকে দূরে সরিয়ে কমল হাসান হয়ে উঠতে চাইছেন জননেতা। অবশ্য দক্ষিণী রাজনীতিতে অভিনেতাদের রাজনৈতিক হয়ে ওঠা নতুন না। তামিল রাজনীতির আম্মা (জয়ললীতা) এটার সব থেকে বড় উদাহরণ। তবে কমল হাসান কি পারবেন? এই নির্বাচনে ক্ষমতা দখল সম্ভব না হলেও কমল হাসানের কাছে এই নির্বাচনে আগামীর জমি তৈর করার লড়াই লড়তে হবে কমলকে। আর সেখানে তাঁর মূল প্রতিপক্ষ আসলে বিজেপি। কারণ বিজেপিও ধীরে ধীরে তামিল মনে তাঁদের ব্র্যান্ডের রাজনীতি ছড়িয়ে দিতে চাইছে।
জননেতা হয়ে ওঠার চেষ্টা
জননেতা হয়ে ওঠার লক্ষ্যে কমল হাসান চাইছেন স্থানীয় ইস্যুগুলি তুলে ধরে তামিল জনগণের মনে জায়গা করে নিতে। তাঁর বক্তব্য, ২০২১-এ ঐতিহাসিক মুহূর্ত গড়ে তোলার সুযোগ রয়েছে মানুষের হাতে। গতানুগতিক দুর্নীতিগ্রস্থ রাজনীতিকে দূরে ঠেলে স্বচ্ছ রাজনীতিকে আপন করে নেওয়ার সুযোগকে লুফে নিতে তাঁর দলকে নির্বাচিত করার আবেদন রেখেছেন কমল।
মানুষের মন জয় করতে পারবেন কমল?
নারী সুরক্ষা থেকে স্থানীয় ইস্যু নিয়ে মানুষের কাছে যাওয়ার চেষ্টা করছেন কমল হাসান। এবং সেই লক্ষ্যে তিনি তামিল গৃহবধুদের সঙ্গ পেয়েছেন ভালো পরিমাণে। তামিলনাড়ুর পুনর্গঠনের ডাক দিয়েছেন কমল হাসান। যা ধারাবাহিক দ্রাবিড় রাজনীতি থেকে অনেকটাই আলাদা। বহু বছর ধরে দুই রাজনৈতিক সত্তার মাঝে আটকে থাকা তামিল জনগণ তাই কমল হাসানের প্রতি আকৃষ্ট হতেও পারেন। তবে সেই আকৃষ্ট হওয়াটা ভোটে পরিণত হবে কা না, তা বলে দেবে সময়ই।