মাদক সিগারেট খেতেন সুশান্ত, ১৪ জুন বাক্স ফাঁকা ছিল, চাঞ্চল্যকর দাবি অভিনেতার হাউসকিপারের
মাদক সিগারেট খেতেন সুশান্ত, ১৪ জুন বাক্স ফাঁকা ছিল, চাঞ্চল্যকর দাবি অভিনেতার হাউসকিপারের
সুশান্ত কাণ্ডে চাঞ্চল্যকর অভিযোগ উঠে আসল। প্রয়াত অভিনেতার হাউসকিপার নিরাজ সিং দাবি করেছেন যে সুশান্ত মারিজুয়ানা সিগারেট খেতেন। মুম্বই পুলিশের কাছে দেওয়া নিরাজের বিবৃতি অনুযায়ী, সুশান্তের মৃত্যুর দু’দিন আগে তিনি নিজে অভিনেতাকে মারিজুয়ানা সিগারেটে মুড়িয়ে দিয়েছিলেন। ১৪ জুন অভিনেতার মৃত্যুর পর যখন মারিজুয়ানার বাক্সটি খুলে নিরাজ দেখেন যে ওটা ফাঁকা পড়ে রয়েছে।
মুম্বই পুলিশের মতে, সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যু আত্মহত্যা। মুম্বই পুলিশের কাছে দেওয়া নিরজের তিন পাতার বিবৃতি হাতে এসেছে এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমের হাতে। সেই বিবৃতিতে বলা হয়েছে, '২০১৯ সালের এপ্রিল মাসে আমি হাউসকিপিং কর্মী হিসাবে কাজ করছিলাম। সুশান্ত সিং স্যারের এক চেনা পরিচিতর মাধ্যমে আমি এই কাজটি পাই। আমি এখানেই কাজ করছিলাম। আমি এরপর অসুস্থ হওয়ায় কাজ ছেড়ে দিই তারপর কিছুদিন পর ফের কাজে যোগ দিই। ওই বছরের মে মাসে সুশান্তের ম্যানেজার স্যামুয়েল মিরান্ডা আমায় ফোন করেন এবং কাজে যোগ দেওয়ার জন্য বলেন।’ তিনি বলেন, 'আমি কেপ্রি হাইটস পালি মার্কেট রেসিডেন্টে কাজ শুরু করি। আমার কাজ ছিল, ঘর পরিস্কার, কুকুরকে ঘুরতে নিয়ে যাওয়া, খাবার ও চা পরিবেশ করা সহ সুশান্তের অন্যান্য কাজ। আমি যখন তাঁদের সঙ্গে কাজ শুরু করি তখন রজত মেওয়াতি, সিদ্ধার্থ পিঠানি, আয়ুষ, স্যামুয়েল মিরান্ডা, আনন্দি, স্যামুয়েল হাওকিপ, অশোক খাসু ও কেশব কাজ করতেন সুশান্তের জন্য। এরপর ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে বান্দ্রার জগার্স পার্কের মাউন্ট ব্ল্যাঙ্ক আবাসনে চলে আসেন।’
শোওয়ার ঘরের চাবি কোথায় থাকে কেন কেউ জানত না
নিরজের বিবৃতি থেকে জানা গিয়েছে, ‘আমি রোজ ঘর পরিস্কার করতাম এবং সুশান্ত স্যারের শোওয়ার ঘরও নিয়মিতভাবে পরিস্কার করা হত। অনেক সময়ই সুশান্ত স্যার কাজে বেড়িয়ে যাওয়ার পর আমি ঘর পরিস্কার করতাম। এর আগে আমরা যখন কেপ্রি হাইটসে থাকতাম তখন সুশান্ত স্যার মুম্বইয়ের বাইরে গেলেও শোওয়ার ঘরের চাবি রান্নাঘরে রেখে যেতেন। কিন্তু যখন থেকে বান্দ্রায় এসেছি, থকন কেবলমাত্র সুশান্ত স্যার যখন পোশাক বদলাতেন অথবা রিয়া ম্যাম ভেতরে থাকলে শোওয়ার ঘরের দরজা বন্ধ থাকত। এছাড়া কখনই ওই ঘরের দরজা বন্ধ থাকতে দেখিনি। এটার কারণেই আমি জানি না যে শোওয়ার ঘরের চাবি আসলে কোথায়।'
সুশান্তের মৃত্যুর পর মারিজুয়ানার জয়েন্ট বাক্স ফাঁকা ছিল
সুশান্ত স্যার সপ্তাহে একবার কী দু'বার আনন্দী, রিয়া ও আয়ুশকে নিয়ে বাড়িতে পার্টি করতেন। এই পার্টিতে সুশান্ত মদ্যপান করতেন এবং সিগারেটের সঙ্গে মারিজুয়ানা সেবন করতন। স্যামুয়েল জ্যাকব মারিজুয়ানা সিগারেট তৈরি করে দিতেন সুশান্তের জন। কখনও কখনও আমি করে দিতাম। সুশান্ত স্যারের আত্মহত্যার আগে তিনদিন ধরে আমি সুশান্ত স্যারকে মারিজুয়ানা সিগারেট তৈরি করে দিয়েছি। সিঁড়ির কাছেই কাপবোর্ডেই সিগারেট কেসটা থাকত। সুশান্ত স্যারের আত্মহত্যার পর আমি গিয়ে দেখি ওই সিগারেট কেসটা ফাঁকা।'
ইউরোপ সফল ও অসুস্থতা
‘২০১৯ সালের অক্টোবর মাসে রিয়া এবং সুশান্ত স্যার ইউরোপ সফরে যান। যখন ফিরে আসেন তখন সুশান্ত স্যার রিয়া ম্যামের বাড়িএতই ছিলেন এবং ওখানেই দিওয়ালি পালন করেন। পরে তিনি কেপ্রি হাইটস রেসিডেন্টে আসেন এবং খুবই দুর্বল হয়ে পড়েন। তাঁকে খুবই দুর্বল লাগছিল। স্যার সেই সময় নতুন বাড়ি খুঁজছিলেন। ওই সময়ই তিনি রিয়ার বাড়িতে ছিলেন এবং একই সময়ে স্যামুয়েল স্যার আমায় জানিয়েছিলেন যে স্যারকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। দেড়মাস পর মাউন্ট ব্ল্যাঙ্ক হাউস ভাড়া দেওয়া হয় এবং আমরা পাওনা ফার্ম হাউসে থাকতে শুরু করি। আমি স্যামুয়েল মিরান্ডার বাড়িও পরিস্কার করতাম। মাউন্ট ব্ল্যাঙ্কে আসার আগে সুশান্ত স্যার রিয়া ম্যামের বাড়িতে থাকতেন। আমি যখন স্যারকে দেখি স্যার খুবই দুর্বল হয়ে গিয়েছিলেন।তিনি আমায় জানান যে তিনি অসুস্থ এবং তাঁর চিকিৎসা চলছে। এরপর তিনি অধিকাংশ সময় বাড়িতে থাকতেন এবং শুধুমাত্র জিমে যেতেন। এরপর রিয়া ম্যাম সুশান্ত স্যারের সঙ্গে লকডাউন শুরু হোয়ার পর থাকতে চলে আসেন।'
৮ জুন
‘এদিন কেশব সকলের জন্য রাতের খাবার তৈরি করে। আমরা সুশান্ত স্যার ও রিয়া ম।আডামের জন্য টেবিল প্রস্তুত করছিলাম। আচমকাই রায়া ম।আম আমায় ডেকে পাঠান এবং তাঁর ব্যাগ প্যাক করতে বলেন। রিয়া ম্যাম সেই সময় খুব রেগে ছিলেন। এরপর তিনি ব্যাগ গুছিয়ে চলে যান, রাতের খাবারও খান না। তিনি তাঁর ভাই শৌভিক চক্রবর্তীর সঙ্গে বাড়ি চল যান। সেই সময় সুশান্ত স্যার তাঁর ঘরে বসেছিলেন। ওইদিন রাতেই সুশান্ত স্যারের বোন মিতু সিং আসেন।'
১২ জুন
‘১২ জুন মিতু দিদি চলে যান এবং যাওয়ার সময় আমায় বলে যান যে তিনি দুই-তিনদিন পর ফিরে আসবেনএবং আমায় স্যারের দেখভালের জন্য বলে যান। মিতু দিদি যাওয়ার পর স্যার ছাদে চলে যান এবং আমার স্যারের ঘর পরিস্কারের জন্য বলেন।'
১৩ জুন
‘এদিন সুশান্ত স্যার সাতটার সময় ওঠেন। আমি তাঁর কুকুরকে নিয়ে হাঁটতে যাই। আমি ন'টার সময় ফিরে দেখি সুশান্ত স্যার তাঁর ঘরে বসে। আমি যখন ঘর পরিস্কার করতে যাই তিনি আমায় পরে করতে বলেন। দুপুরে আমি খিচুড়ি রান্না করি এবং স্যারকে দিই। সন্ধ্যায় স্যার ঘর থেকে বেড়িয়ে ছাদে যান এবং কিছুক্ষণ পর নেমে আসেন। তিনি রাতের খাবার না খেয়ে শুধু ম্যাঙ্গো শেক খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েন।'
১৪ জুন
‘১৪ জুন আমি সকাল সাড়ে ছ'টায় উঠি এবং অন্যদিনের মতো কুকুরকে হাঁটতে নিয়ে যাই। আটটা নাগাদ ফিরে আসি। এরপর আমি ওপরের ঘরগুলি পরিস্কার করি। সুশান্ত স্যার ঘর থেকে বেড়িয়ে আমায় ঠাণ্ডা জল দিতে বলেন। আমি জল দিলে তা ওখানে দাঁড়িয়েই খান তিনি। তিনি এরপর আমায় জিজ্ঞাসা করেন যে হলঘর পরিস্কার হয়েছে কিনা এবং হেসে চলে যান। এরপর সাড়ে ন'টা নাগাদ আমি হলঘর পরিস্কার করছিলাম, তখন আমি দেখি কেশব স্যারের ঘরে কলা, ডাবের জল ও জুস নিয়ে যাচ্ছে। কেশব ফিরে এসে জানান যে স্যার শুধু ডাবের জল ও জুস খেয়েছেন। সাড়ে দশটা নাগাদ কেশব আবার স্যারের ঘরে জিজ্ঞাসা করতে যায় যে দুপুরে স্যার কী খাবেন। কেশব শোওয়ার ঘরের দরজায় ঘা দেয় কিন্তু ঘর ভেতর থেকে বন্ধ ছিল এবং কোনও সাড়া পাওয়া যাচ্ছিল না। কেশব ভাবে যে স্যারঘুমোচ্ছে তাই ফিরে আসে। কেশব তা নীচে নেমে দীপেশ ও সিদ্ধার্থকে জানায়। তাঁরাও সুশান্তের ঘরে গিয়ে তাঁকে ডাকতে শুরু করেন। অনেকক্ষণ দরজা না খোলায় তাঁরা স্যারকে ফোন করেন কিন্তু তাতেও কোনও ফল হয় না। আমরা ঘরের চাবি খুঁজতে থাকি কিন্তু পাই না। এরপর মিতু দিদি আমাদের বলেন যে দরজা খুলতেই হবে এবং তিনিও রাস্তায় রয়েছেন। সিদ্ধার্থ এরপর চাবিওয়ালাকে ডেকে পাঠান।
চাবিওয়ালা আসে
প্রায় দেড়টা নাগাদ দু'জন চাবিওয়ালা আসেন এবং দরজার চাবি তৈরির চেষ্টা করেন। কিন্তু তাঁরা অনেকটা সময় লাগিয়ে দেন। তাই সিদ্ধার্থ তাঁদের বলেন যে দরজা ভেঙে দিতে। পাঁচ থেকে দশ মিনিটের মধ্যে দরজা ভেঙে ফেলা হয়।'
সুশান্ত কাণ্ডে রিয়ার বিরুদ্ধে ক্ষোভ, বাঙালি মেয়েদের টার্গেট টুইটারে