সুরাতের 'নকল' শাড়ি নাকি বারাণসীর হাতে বোনা শাড়ি, দ্বিধায় নরেন্দ্র মোদী
দ্বিধা কেন? কারণ, বারাণসীর তন্তুবায় সম্প্রদায়ের একটা বড় অংশেই তাদের শহরের তন্তু শিল্প ধ্বংসের মুখে পড়ার জন্য সুরাতকে দায়ী করেন। তাঁদের জীবিকার স্থায়িত্ব দিলে তবেই ভোট পাবেন বিজেপি প্রার্থী। 'আপনার রাজ্যের শাড়ি শিল্পের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করার জন্য কী আপনি আমাদের সাহায্য করবেন?' মদনপুরার মানুষরা মোদী সামনে পেলে তাই এ প্রশ্নই করার জন্য মুখিয়ে রয়েছে।
সুরাতে যে শুধু বেনারসি তন্তু শাড়ির নকল বানিয়ে সস্তায় তা বিক্রি করা হয় তাই নয়, বারাণসীর ভাল, সুপটু শাড়ি কারিগরদের সুরাতে নিয়ে যাওয়া হয়। ফলে সুরাতের শাড়ি বাজারের রমরমা আর বারাণসীর বয়নশিল্পের বাজার পড়ে যাওয়া প্রায় সমান্তরাল সময়ে হয়েছে বলেই দাবী মদনপুরার বয়ন কারিগরদের। শুধু মদনপুরা না কয়লাবাজার,রেভারি তালাব, বজরদিহা,বাদি বাজারের বয়ন কারিগরদের মুখেও একই কথা শোনা যাচ্ছে।
'বারাণসীর ঐতিহ্যশালী হাতে বোনা শাড়ি শিল্প ধ্বংসের মুখে পড়ার জন্য দায়ী সুরাতই'
স্থানীয় তন্তুবায়দের মতে, ঐতিহ্যশালী হাতে বোনা কাপড়ের নক্সা নকল করে উন্নত কৌশলে বের করে সুরাত। ফলে হাতে বোনা শাড়ির নকল করে সস্তায় তা বিক্রি করে সুরাতেু ব্যবসায়ীরা। একই শাড়ি সস্তায় মিলছে বলে সাধারণ মানুষ সুরাতের শাড়ির দিকেই ঝুঁকছে। ফলে মার খাচ্ছে বারাণসীর আসল হাতে বোনা শাড়ির ব্যবসা।
এছাড়াও হাতে বুনতে একটা শাড়ি যত সময় লাগে তার থেকে অনেক কম সময়ে মেশিনে অনেক বেশি সংখ্যক শাড়ি তৈরি করা যায়। ফলে সুরাত শাড়ির যোগানও বারণসী শাড়ির থেকে বেশি হয়। বেনারসি শাড়ি যেখানে ১০,০০০টাকা থেকে দাম শুরু সেখানে সুরাতের 'নকল শাড়ির' দাম এর প্রায় পাঁচগুণ কম।
মন্দার বাজারে ৯০এর দশকে অনেক কারিগরই সুরাতে চলে যেতে বাধ্য হন। যারা এখানে রয়ে গিয়েছিলেন। তাদের মধ্যেও অনেকে জীবিকা নির্বাহের জন্য জামা-কাপড়, ঘর সাজানোর জিনিস বানানোর দিকেই ঝুঁকেছেন।
বারাণসীর শাড়ি বিক্রেতাদের কথায়, কেন্দ্রীয় বস্ত্র মন্ত্রকের মন্ত্রীরা বেশিরভাগই নয় দক্ষিণ নয় পশ্চিমের রাজ্যগুলি থেকে। তার ফলে এমন নীতি প্রণয়ন করা হয়েছে যা এই রাজ্যগুলিকেই সহায়তা করবে। কাঞ্জিভরম, হায়দ্রাবাদের উপাড়া,মহারাষ্ট্রের পৈঠানি,গুজরাতের পাটান পাটোলার জন্য রেশমকীটে ভরতুকি দেওয়া হয়। তাই বারাণসীর তন্তুবায় সমবায়ের ভোট পেতে হলে যে তাদের দাবীর একটা বড় তালিকার প্রত্যাশা মোদীকে পূর্ণ করতে হবে।
যদিও অর্থনীতিবিদদের একাংশ মনে করেন, শিল্পের উন্নয়নের জন্য বিদ্যুৎ একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তবে তা রাজ্য সরকারের হাতে। কিন্তু মোদী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে অনেক এগিয়ে। তিনি যদি প্রধানমন্ত্রী হন তাহলে স্থানীয় তন্তুবায়দের প্রত্যাশাপূরণে তিনি বারণসী শাড়ি শিল্পকে বিশেষ মর্যাদা দিতে পারবেন।
নরেন্দ্র মোদীর দ্বিধা দূর হবে কী করে, তা তো সময়ই বলবে।