সনিয়া গান্ধীর কথা শুনলে তিনি রাষ্ট্রপতি হতেন না, আত্মজীবনীতে বিস্ফোরক প্রণব
২০১২ সালে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে বাল ঠাকরের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাতে খুব একটা খুশি হননি কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গান্ধী। প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের আত্মজীবনীর তৃতীয় খণ্ডে এমনই তথ্য প্রকাশ পেল
২০১২ সালে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে বাল ঠাকরের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাতে খুব একটা খুশি হননি কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গান্ধী। প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের আত্মজীবনীর তৃতীয় খণ্ডে এমনই তথ্য প্রকাশ পেল। প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি লিখেছেন, কংগ্রেসের শরিকদল এনসিপি ও সদ্য ইউপিএ ছেড়ে দেওয়া তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে সম্পর্ক ভাল রাখতে এই উদ্যোগ নিয়েছিলেন তিনি।
[আরও পড়ুন:সাক্ষাৎকার চলাকালীন প্রাক্তন রাষ্ট্রপতির কাছে বকুনি, ক্ষমা চাইলেন রাজদীপ সরদেশাই]
কোয়ালিশন ইয়ার্স: ১৯৯৬-২০১২ শীর্ষক আত্মজীবনীতে প্রণব লিখেছেন, এনডিএ শরিক হলেও ২০১২ সালে ইউপিএ মনোনিত প্রার্থী প্রণব মুখোপাধ্যায়কেই সমর্থনের আশ্বাস দিয়েছিলেন তৎকালীন শিবসেনা প্রধান বাল ঠাকরে। সেসময় প্রচারে মহারাষ্ট্রে গিয়ে বাল ঠাকরের সঙ্গে দেখা করবেন কিনা, তা সনিয়া গান্ধী ও শরদ পাওয়ারকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন প্রণব। বাল ঠাকরে নিজেও তাঁর সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সনিয়া গান্ধী এই সাক্ষাৎ নিয়ে খুব একটা উৎসাহী ছিলেন না, বরং এই সাক্ষাৎ এড়িয়ে যাওয়ার পক্ষেই ছিলেন সনিয়া।
কিন্তু শরদ পাওয়ারের মত একেবারেই ভিন্ন ছিল। তিনি নিজে চাইছিলেন যে প্রণব যেন বাল ঠাকরের সঙ্গে দেখা করুন। বাল ঠাকরের বাসভবন মাতোশি-তে প্রণবকে স্বাগত জানাতে ব্যাপক আয়োজন করা হয়েছিল। শরদ পাওয়ারের মতে , প্রণব যদি ঠাকরের সঙ্গে দেখা না করেন, তাহলে তাঁকে অসম্মান করা হত। আত্মজীবনীতে প্রণব লিখেছেন, 'সেসময়ে আমি সনিয়ার আপত্তি সত্ত্বেও বাল ঠাকরের সঙ্গে দেখা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, কারণ একজন রাজনৈতিক ব্যক্তি নিজের জোটের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে গিয়ে আমাকে সমর্থন করতে চেয়েছিলেন। ফলে কোনও অবস্থাতেই তাঁকে অসম্মানিত করার কোনও যুক্তি ছিল না।'
বাল ঠাকরের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ খুবই আন্তরিক ছিল বলে জানিয়েছেন প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি। বাল ঠাকরে তাঁকে বলেছিলেন, মারাঠা বাঘ রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারকে সমর্থন করবে সেটাই তো স্বাভাবিক। কিন্তু দিল্লি ফেরার পর তাঁকে বলা হয়, সনিয়া গান্ধী ও আহমেদ প্যাটেল এই সাক্ষাৎ নিয়ে অখুশি। প্রণব লিখেছেন, তিনি অসন্তোষের কারণ বুঝলেও তাঁর যেটা ঠিক মনে হয়েছে, তিনি সেটাই করেছেন। তাঁর কাছে শরদ পাওয়ারের পরামর্শ খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কারণ মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায়ের নেতৃত্বে তৃণমূল কংগ্রেস তখন ইউপি মনোনিত প্রার্থীর তুমুল বিরোধিতা করছে, এরইমধ্যে যদি শরদ পাওয়ারও চটে যান, তাহলে ইউপিএ-২ মনোনিত রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থীর কাছে লড়াইটা আরও কঠিন হয়ে যেত।
প্রণব লিখেছেন, 'আমি ঠিক করি এই বিষয়টা সনিয়া ও আহমেদ প্যাটেলের সামনে আর তুলব না, এবং বিষয়টি সেখানেই আমি শেষ করে দিই।' একইভাবে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারও এনডিএ-তে থাকলেও তাঁকেই সমর্থনের কথা জানিয়েছিলেন। সেইসঙ্গে প্রণব যাতে বিহারে না আসেন, সেই অনুরোধও করেছিলেন নীতীশ। কারণ বিমানবন্দরে প্রণবকে স্বাগত জানানো ও তাঁর সঙ্গে বৈঠক করলে তা বিজেপি ভালভাবে নেবে না বলেই প্রণবকে অনুরোধ করেছিলেন নীতীশ।