বিলম্বিত বর্ষা, কপালে ভাঁজ চাষিদের, দেশের অর্থনীতিতে সংকট বাড়বে
কেরলেই নির্ধারিত সময়ের থেকে দেরিতে ঢুকেছে বর্ষা। এখনও গোটা দেশে বর্ষার বৃষ্টির তেমন দেখা নেই। দক্ষিণ ভারতে শুরু হয়েছে তীব্র জলকষ্ট। আর উত্তর ভারতে চলছে তাপ প্রবাহ। ভারতের মত কৃষি নির্ভর দেশে বর্ষার উপরেই নির্ভর করে বার্ষিক আয়। সেকারণেই বর্ষা কেমন হবে সেটার দিকেই তাকিয়ে থাকেন দেশের অর্থনীতিবিদরা। এবার স্বাভাবিক বর্ষার ইঙ্গিত দিয়েছিলে হাওয়া অফিস। যদিও অন্যান্য বেসরকারি আবহাওয়া সংস্থা জানিয়েছিল এবার দেশে বর্ষা হবে স্বাভাবিকের থেকে কম।

গতি শ্লথ
স্বাভাবিক বর্ষা বলতে ৯৬ থেকে ১০৪ শতাংশ বৃষ্টি। কিন্তু জুন মাস প্রায় শেষের পথে এখনও যে গতিতে এগোচ্ছে বর্ষা তাতে চাষীদের কপালে ভাঁজ পড়তে শুরু করেছে। আর বেশি দিন দেরি হলে জমির ফসল শুকোতে শুরু করবে। গত বছরে অতিবর্ষায় জমি ভেসে গিয়ে ফসল নষ্ট হয়েছিল প্রচুর। যার জেরে বিপুল বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয়েছিল মোদী সরকারকে। কৃষিঋণ মকুবের দাবিতে কৃষকরা মহারাষ্ট্র থেকে দিল্লি পর্যন্ত মিছিল করেছিলেন। তামিলনাড়ুর কৃষকরা তো কৃষিঋণে জর্জরিত আত্মঘাতী কৃষকদের মাথার খুলি নিয়ে রাজধানীর রাজপথে মিছিল করেছিলেন। এই কৃষি ঋণ মকুব না করার জন্যই রাজস্থান, ছত্তীশগড় এবং মধ্য প্রদেশ হাতছাড়া হয়েছিল বিজেপির।
তাই বর্ষা ভীষণভাবে দেশের অর্থনীতি এবং একই সঙ্গে রাজনীতিতেও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

জুনে দেরিতে বর্ষা
সধারণ ১ জুনেই দক্ষিণ পশ্চিম মৌসুমী বায়ু কেরলে প্রবেশ করে। এটাই বর্ষার আনুষ্ঠানিক ভারতে প্রবেশের দিন। কিন্তু এবার ১ থেকে সেই দিন গড়িয়ে হিয়েছে ৮-এ। অর্থাৎ প্রায় ১এক সপ্তাহ দেরি। এখনও পর্যন্ত গোটা দেশে ছড়িয়ে পড়তে পারেনি দক্ষিণ পশ্চিম মৌসুমী বায়ু। এরই মধ্যে সময়ে বর্ষা আসছে আঁচ করেই ধান, আঁখ, গম জমিতে রোয়া হয়ে গিয়েছে চাষিদের। তাপ প্রবাহ আর জল সংকটে সেই ফসল রক্ষা করাই এখন বড় দায় হয়ে উঠেছে তাঁদের কাছে। তার উপর যদি বর্ষার বৃষ্টি শুরুই না হয় তাহলে জমিতেই শুকিয়ে যাবে সব ফসল। আবার নতুন করে কৃষক বিক্ষোভের পারদ চড়বে দেশে।

সারা দেশের বিভিন্ন অংশে জলসঙ্কট
এদিকে মোদী দ্বিতীয়বার প্রধানমন্ত্রী পদে শপথ নেওয়ার পরেই জানিয়েছেন, আগামী ৫ বছরে কৃষকদের আয় দ্বিগুণ করবেন। বর্ষার এই গতি প্রকৃতি হলে দ্বিগুণ তো দূরের কথা একগুণও কৃষকদের আয় বাড়বে কিনা সন্দেহ। ইতিমধ্যেই দক্ষিণ ভারতের অধিকাংশ রাজ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে তীব্র জলসংকট। চেন্নাই, হায়দরাবাদ, মুম্বই সহ একাধিক বড় শহরে সরকারি জল পরিষেবা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। চেন্নাইয়ে এক ট্যাঙ্ক জলের দাম চার থেকে পাঁচ হাজার টাকায় পৌঁছে গিয়েছে। সেই বিপুল পরিমান টাকা দিয়েও একমাস অপেক্ষা করতে হচ্ছে বাসিন্দাদের। জলসংকটের কারণে বাড়ি থেকেই কাজ করতে বলা হচ্ছে তথ্য প্রযুক্তিকর্মীদের। এমনকী হোটেল, গেস্টহাউসও বন্ধ হয়ে গিয়েছে। বর্ষায় ঘাটতি দেখা দিলে জিনিসের দামও বাড়বে। কারণ উৎপাদন কম হবে। এই পরিস্থিতি সামাল দেওয়াই এখন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে মোদী-অমিত শাহের পক্ষে।