গত ৪৮ মাসে কতটা 'সাফ নিয়ত' ছিল মোদী সরকারের, কতটাই বা 'সাহি বিকাশ' হল, দেখে নিন
এক পুস্তিকাতে মোদি সরকার গত ৪৮ মাসে তাদের গ্রহণ করা বেশ কিছু বেশ কিছু উদ্যোগের কথা তুলে ধরেছে।
২৬ মে এনডিএ সরকার ৪ বছর পূর্ণ করেছে। ওই দিন থেকেই তারা ২০১৯-এ ফিরে আসার প্রচার চালু করেছে। তাদের স্লোগান, 'সাফ নিয়াত, সাহি বিকাশ', অর্থাৎ স্পষ্ট অভিপ্রায়, সঠিক বিকাশ। কিন্তু সেই প্রচারের মুল সূরটাই হল গান্ধি পরিবারের ৪৮ বছরের শাসনের প্রেক্ষিতে বিজেপি সরকারের ৪৮ মাসের শাসনের সাফল্যকে তুলে ধরা। এর জন্য গত চার বছরের কাজের খতিয়ান দিয়ে প্রতিটি মন্ত্রককে প্রতিবেদন তৈরী করতে নির্দেশ দেওযা হয়েছিল। গত চার বছরে যা যা প্রকল্প, যা যা কর্মসূচী নেওয়া হয়েছে তা সবটা বিশদে জানাতে বলে হয়েছিল সেই রিপোর্টে।
প্রচারের বিষয়টি পরিচালনা করার জন্য রেলমন্ত্রী পিযুশ গয়ালের নেতৃত্বে, পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি এবং গ্রামীন বিকাশ মন্ত্রী নরেন্দ্র সিং তোমরকে নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল। কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী মন্ত্রক তাদের গত চার বছরের কাজ নিয়ে একটি করে ভিডিয়ো বানিয়েছে। সেই সঙ্গে, তথ্য সম্প্রচার দপ্তর, সমস্ত দপ্তর থেকে পাওয়া তথ্য একত্রিত করে একটি বড় আকারের বুকলেট প্রকাশ করেছে। তাতে ইনফোগ্রাফিক্স সহযোগে গত ৪৮ মাসে সরকারের সমস্ত উদ্যোগ তুলে ধরা হয়েছে। এক নজরে দেখে নেওয়া যাক সেই বুকলেটে গত চার বছরে কী কী কাজ করার দাবি করেছে নরেন্দ্র মোদীর সরকার।
আয় বাড়াতে বিনিয়োগ
খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পকে এগিয়ে নিয়ে যেতে এই খাতে বাজেট দ্বিগুন করা হয়েছে। এছাড়া নজর দেওয়া হয়েছে সাপ্লাই চেইন পরিকাঠামোর আধুনিকিকরণে, দাম নিয়ন্ত্রণে, ই-ব্যবস্থার মাধ্যমে সরাসরি ক্রেতার কাছে কৃষকদের পৌঁছে দেওয়ার মতো বিষয়গুলিও। যদিও এই সময়রকালে ঋণের দায়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন বহু কৃষক।
কালো টাকা বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা
৩ লক্ষ ভূয়ো কোম্পানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তবে বিরোধীদের প্রশ্ন, সুইস ব্যাঙ্ক থেকে কালো টাকা ফেরানোর যে প্রতিশ্রুতি ছিল, তার কী হল?
মাতৃভূমি রক্ষা
পাকিস্তানে সার্জিকাল স্ট্রাইক চালানোকে বড় সাফল্য হিসেবে তুলে ধরেছেন মোদী। এছাড়া প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে আর বলার মতো বিষয় প্রাক্তন সেনাকর্মীদের জন্য 'এক পদ এক পেনসন' চালু করা। কিন্তু এসময়ই জানা গিয়েছে দেশে নেই পর্যাপ্ত গোলাগুলি, নেই পর্যাপ্ত যুদ্ধ বিমান ও যুদ্ধ জাহাজ।
মহিলাদের সামাজিক ক্ষমতায়ন
মহিলাদের ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে তিন তালাক বিল পাসকে সাফল্য হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে বুকলেটে। এছাড়া পুরুষ সঙ্গী ছাড়া মুসলিম মহিলাদের হজযাত্রার অনুমতি প্রদান, প্রধাণমন্ত্রী আবাস যোজনায় মহিলাদের অগ্রাধিকার দেওয়ার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। তবে এই একই সময়ে সারা দেশে বেড়েছে নারী নির্যাতন। বিজেপি নেতা, মন্ত্রীরা বিভিন্ন সময়ে মহিলাদের প্রতি অবমাননাকর মন্তব্যও করেছেন।
মুদ্রা এবং স্ট্যান্ডআপ ইন্ডিয়া
এসসি, এসটি, ওবিসি ও মহিলা উদ্যোগপতিদের জন্য সহজে ঋণের ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে দাবি সরকারের। যদিও বিরোদাদের অভিযোগ, 'মুদ্রা', 'স্ট্যান্ডআপ ইন্ডিয়া' এসব প্রকল্প শুধুই গালভরা নাম। কাজের কাজ বিশেষ কিছু হয়নি।তবে সরকার তথ্য দিয়ে দেখিয়েছে শিডিউল কাস্ট উদ্যোগপতিদের জন্য ২০১৮-র মে অবধি ২৩৯.২২ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।
বিদ্যুৎ বিভাগ
এই ক্ষেত্রে সরকারের দাবি প্রতিটি গ্রামেই এখন বিদ্যুতা পৌঁছে গিয়েছে। তবে গ্রামের সব বাড়িতে যে এখনও বিদ্যুত পৌঁছায়নি, তাও জানানো হয়েছে বুকলেটে। তবে ২০১৮-র ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যেই তাও সম্পন্ন হবে।
হাইওয়েতে রূপান্তর
সড়ক যোগাযোগের দিকে মোদী সরকার বিশেষ নজর দিয়েছে। যেরকম বেড়েছে হাইওয়ের দৈর্ঘ, তেমনই পাল্লা দিয়ে বেড়েছে কাজের গতি। সম্প্রতি মোদী দিল্লির সন্নিকটে ইস্টার্ণ পেরিফেরাল এক্সপ্রেসওয়ের উদ্বোধন করেছেন। এই রাস্তা ৯১০ দিনে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও ৫০০ দিনেই এর নির্মাণ শেষ হয়। তবে হাইওয়ের নিরাপত্তা নিয়ে এখনও বড় প্রশ্ন রয়েছে।
স্বাস্থ্য খাতে
এইমস-এর মতো ২০ টি নতুন সুপার-স্পেশালিটি হাসপাতাল স্থাপন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, এখনও যে দেশে পয়সার অভাবে মৃত আত্মীয়কে, কাঁধে চাপিয়ে নিয়ে যাওয়ার দৃশ্য দেখতে হয়, তাদের কতটা সাধ্যের মধ্যে থাকছে হাসপাতালগুলি।
ব্যবসা করার সুবিধা
গ্রাফ সহযোগে দেখানো হয়েছে ভারত গত চারবছরে ব্যবসার সুবিধার দিক থেকে বিশ্বে ৪২ ধাপ এগিয়েছে। কিন্তু ক্ষমতায় আসার আগে মোদী যে মেক ইন ইন্ডিয়ার স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন, তাতে বিশেষ সাড়া মেলেনি চার বছরে।
জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াই
আজকের পৃথিবীতে দ্রুত বদলে যাওয়া জলবায়ুর একটা গভীর সমস্যা। প্যারিসে সিওপি২১-এ ভারত একটি মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে বলে দাবি করেছে সরকারি পুস্তিকা। কিন্তু মাস খানেক আগেই দেখা গিয়েছিল বিশ্বের সবচেয়ে দুষিত শহরগুলির তালিকার প্রথম দশটি শহরের মধ্যে অধিকাংশই ছিল ভারতের।
বেটি বাঁচাও, বেটি পড়াও
মেয়েদের শিক্ষার জন্য একাধিক বৃত্তি চালু করা হয়েছে। সরকারের শীর্ষ থেকে নারীশিক্ষার উদ্যোগ নেওয়া হলেও বিজেপি নেতাদেরই আবার 'লাভ জিহাদ' ঠেকাতে মেয়েদের বাল্য বিবাহের সুপারিশ করতে শোনা গিয়েছে।
দালালদের অপসারণ
দালালদের অপসারণ এবং একই সঙ্গে দরীদ্রদের উপকৃত হওয়া নিশ্চিত করার জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহন করা হয়েছে।
দক্ষতা উন্নয়ন
দেশের প্রায় ১ কোটি তরুণকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে বলে জানানো হয়েছে।