মন কি বাত-এ বারুইপুরের সহিদুল, বাগানের পেয়ারা আর জামরুল উপহার নরেন্দ্র মোদীকে
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী জানেন কলকাতার রসগোল্লা বা সন্দেশের স্বাদ। এমনকী চেখে দেখেছেন বহুল খ্যাত কলকাতার মিষ্টি দইও। কিন্তু, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর হাতে কি কখনও পৌঁছেছে বারুইপুরে পেয়ারা বা জামরুল। টসটসে রসে ভরা বারুইপুরের যে পেয়ারার নাম বঙ্গজুড়ে বিখ্যাত, সেই পেয়ারর স্বাদ নিশ্চিতভাবে কখনও পাননি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এবার বারুইপুরের সেই পেয়ারাই মোদীর হাতে তুলে দিচ্ছেন বারুইপুরের সহিদুল লস্কর। মন কি বাত অনুষ্ঠানের লাইভ টেলিকাস্টে অংশ নেওয়ার জন্য এই মুহূর্তে দিল্লিতে রয়েছেন বারুইপুরের সহিদুল। ট্যাক্সি চালিয়ে হাসপাতাল তৈরি করা এবং বিনামূল্যে সাধারণ মানুষের কাছে চিকিৎসা পৌঁছে দেওয়ার জন্য মোদীর সঙ্গে মুখোমুখি সাক্ষাৎ-এ সহিদুল। ডালির মধ্যে আটটি পেয়ারা সাজিয়ে নিয়ে তিনি দিল্লি এসেছেন। এই উপহারের ডালির মধ্যে জামরুলও আছে।
বারুইপুরে যে জমি তে সহিদুল ও তাঁর স্ত্রী সামিমা এই হাসপাতাল তৈরি করেছেন সেখানেই একটা ফলের বাগান তৈরি করা হয়েছে। পেয়ারা ও জামরুল সেই বাগানেরই বলে দিল্লি থেকে ওয়ানইন্ডিয়া বেঙ্গলিকে জানালেন সহিদুল। গত মার্চ মাসে মন কি বাত অনুষ্ঠানে শাহিদুল হাসপাতাল-এর কথা দেশবাসী-কে জানান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তিনি জানান কীভাবে শাহিদুল ট্যাক্সি চালিয়ে এবং স্ত্রী গয়না বেঁচে দিয়ে এই হাসপাতাল তৈরি করেছিলেন। এমনকী কীভাবে এই দম্পতি বিনামূল্যে সকলের কাছে চিকিৎসা পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করছে তাও তুলে ধরেছিলেন মোদী। মন কি বাত-এর পঞ্চাশতম এপিসোডে তাই মোদী এমন বেশকিছু মানুষের মুখোমুখি হচ্ছেন যাঁরা নিজেদের সীমিত ক্ষমতাকে পার করেও সমাজকে বদলে দিয়েছেন। পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার অনতিদূরে বারুইপুরের সহিদুল লস্করও এই মানুষগুলির মধ্যে একজন হিসাবে নির্বাচিত হয়েছেন।

ভোরের দিল্লি-র প্রেক্ষাপটে নিজেকে ঝালিয়ে নিলেন
রবিবার একদম সকালেই ঘুম ভেঙে যায় সহিদুল লস্করের। অবশ্যই মন জুড়ে যে একটা উত্তেজনা কাজ করছিল তাঁর। ওয়ানইন্ডিয়া বেঙ্গলির সঙ্গে কথা বলতে তা একদমই লুকানোর চেষ্টা করেননি সহিদুল। একদম সকালের দিল্লির এই রূপ কখনও প্রত্যক্ষ করা হয়নি। কুয়াশাছন্ন দিল্লি-কে দেখে সহিদুল যেন ফিরে গিয়েছিলেন তাঁর দু'দশক আগের শুরুর সেই সময়ে। বিনা চিকিৎসায় ক্যানসারে আক্রান্ত বোনকে হারিয়ে তখন ভেঙে পড়েছেন সহিদুল। দাদা হিসাবে কিছু করতে না পারার যন্ত্রণা। সে সময় এই কুয়াশার মতো সহিদুলের সামনেটা ছিল আবছা। ভরসা হারাননি। ট্যাক্সি চালিয়ে বোনের নামে হাসপাতাল তৈরি করেছেন তিনি। নরেন্দ্র মোদী-র সামনে মন কি বাত-এ এই ২৫ নভেম্বর, ২০১৮-তেও আরও এক স্বপ্নের বার্তা সকলকে দিতে চান সহিদুল।

অশোকা হোটেলের ৬৪০ নম্বর ঘরে এল স্ত্রী-র ফোন
দিল্লির অশোকা হোটেলের ৬৪০ নম্বর ঘরে রয়েছেন সহিদুল। ৬ তলার এই ঘর থেকে দিল্লি শহরের স্কাইলাইনটা স্পষ্ট দেখা যায়। সেই স্কাইলাইন দেখতে এদিন সকালে আরও একটি কাজ করে ফেলেন সহিদুল। মনে মনে আওড়ে নেন তাঁর নতুন স্বপ্নের প্রকল্পের প্রতিটি খুঁটিনাটি। স্ত্রী সামিমার ফোনটা পেয়েও মনটা যে আরও চনমনে হয়ে উঠেছে এবং তিনি যে চাপমুক্ত তাও ওয়ানইন্ডিয়া বেঙ্গলিকে ফোনের মাধ্যমে জানান সহিদুল। অযথা টেনশন না করতেও স্বামীকে নাকি নিষেধ করেছেন সামিমা। যে ১২ কোটি টাকার প্রকল্পের কথা প্রধানমন্ত্রীর সামনে লাইভ টেলিকাস্টের মাধ্যমে তুলে ধরবেন তার প্রতিটি পয়েন্ট গুছিয়ে নেওয়ারও পরামর্শ দেন তিনি। পরিশেষে নাকি সামিমা জানিয়েছেন স্বামীকে রিসিভ করতে মধ্যরাতে কলকাতা বিমানবন্দরে সপরিবারে হাজিরও থাকবেন তিনি।

ব্রেকফাস্টে দোসা এবং কফি
দাঁত মেঝেই অশোকা হোটেলের কাফেটেরিয়ায় চলে যান সহিদুল। সেখানে অতিথিদের জন্য ব্রেকফাস্টের বন্দোবস্ত করা হয়েছিল। সেখানে বুফেট থেকে নিজের ইচ্ছে-মতো প্রাতরাশ বেছে নিয়ে খান সহিদুল। এরপর দোসাও খান তিনি। মিষ্টির মধ্যে থেকে সন্দেশ নেন তিনি। শেষে কফি খেয়ে ফিরে আসেন নিজের হোটেল রুমে।

স্নান সেরেই একটু পড়াশোনা
ব্রেকফাস্ট সেরে ঘরে ঢুকেই স্নান সেরে নেন সহিদুল। এরপর জামা-কাপড় পরে তৈরিও হয়ে যান তিনি। বসে পড়েন তাঁর ৩৮ পাতার প্রজেক্ট প্রোপোজাল নিয়ে। যার আবার দুটো ভাগ, ২০ পাতা জুড়ে রয়েছে ১২ কোটি টাকার প্রকল্পের কথা। আর বাকি ১৮ পাতায় রয়েছে কী ভাবে এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হবে তাঁর কথা। সমস্ত বিষয়গুলি ভালো করে একবার দেখে নেন তিনি।

কলকাতা বিমানবন্দরে সেলফি
শনিবার রাত সাড়ে দশটার বিমানে কলকাতা থেকে বিমানে চেপেছিলেন সহিদুল। বিমানবন্দরে ঢুকে বন্ধু মইদুলের সঙ্গে সেলফিও তোলেন। তবে তাঁর মনে যে মোদীর সাক্ষাৎ-এর প্রিপারেশন-এর একটা চাপ কাজ করছিল তা অস্বীকার করেননি তিনি। তাঁর মিশন, ভিশন ও অ্যাপ্রোচ-কে কী ভাবে প্রধানমন্ত্রীর সামনে মেলে ধরবেন সেটাই সারাক্ষণই মনে মনে আওড়ে গিয়েছেন তিনি। ১২ কোটি টাকায় যে জেরিয়াট্রিক প্রকল্পের স্বপ্ন তিনি দেখেছেন তার প্রতিটি পয়েন্ট যে ঠিকঠাকভাবে প্রধানমন্ত্রীর সামনে উত্থাপন হওয়া জরুরি তা ভালো করেই জানেন সহিদুল।