প্রস্তুত এক দেশ এক নির্বাচনের জন্য, দরকার সংবিধান পরিবর্তনের, জানালেন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার
প্রস্তুত এক দেশ এক নির্বাচনের জন্য
এক দেশ এক নির্বাচন করার জন্য প্রস্তুত নির্বাচন কমিশন। বৃহস্পতিবার পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের গণনা চলাকালীন এএনআইকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাতকারে এমনটাই জানিয়েছেন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার সুশীল চন্দ্র। তিনি জানান যে এক দেশ এক নির্বাচন ভালো প্রস্তাব, কিন্তু তার জন্য সংবিধানে পরিবর্তন প্রয়োজন ও এটা সংসদে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। মুখ্য নির্বাচন কমিশনার এও জানিয়েছেন যে নির্বাচন কমিশন এর জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত এবং একযোগে নির্বাচন পরিচালনা করতে সক্ষম।
একযোগে নির্বাচন করতে প্রস্তুত কমিশন
বৃহস্পতিবার পাঁচ রাজ্যে ভোট গণনা সকাল থেকেই জোর কদমে শুরু হয়ে যায়। এরই মাঝে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার সাক্ষাতকারে বলেন, 'সংবিধান অনুযায়ী সব নির্বাচন একযোগে হতে হবে। স্বাধীনতার পর থেকে যে সংসদীয় নির্বাচন হয়েছে, তার মধ্যে তিনটে এককালীন নির্বাচন ছিল। এরপরে কখনও বিধানসভা ভেঙে দেওয়া হয়, কখনও আবার সংসদ সময়সূচীর কারণে বিঘ্নিত হয়। এক দেশ এক নির্বাচন ভালো প্রস্তাব কিন্তু তার জন্য সংবিধানে পরিবর্তন করা প্রয়োজন রয়েছে।' তিনি এও বলেন, 'যে বিধানসভা পাঁচ বছরের মেয়াদ পূর্ণ করতে পারে না বিধানসভায় তাকে ভাবতে হবে সংবিধানের অধীনে আমরা তা বাতিল করতে পারি নাকি দেশে একযোগে নির্বাচনের জন্য আমাদের প্রয়োজন সংসদের মেয়াদ বাড়ানোর।'
সংসদের সিদ্ধান্ত হওয়া উচিত
সুশীল চন্দ্র এ প্রসঙ্গে আরও বলেন, 'এটা সংসদের সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত যে আমরা অর্ধেক নির্বাচন একসঙ্গে করব এবং পরবর্তী নির্বাচন আবার একসঙ্গে করা হবে, এটা সংসদকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে, তবে নির্বাচন কমিশন পুরোপুরি প্রস্তুত রয়েছে এবং নির্বাচন কমিশন একযোগে নির্বাচন পরিচালনা করতে সক্ষম এবং পাঁচবছরে কেবল একটি নির্বাচন করতে প্রস্তুত।'
জনসভা ও পদযাত্রার ওপর নিষেধাজ্ঞা
পাঁচ রাজ্যের ভোট গণনা যখন একেবারে তুঙ্গে সেই সময় সুশীল চন্দ্র জানান যে জনসভা ও পদযাত্রার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা খুব কঠিন সিদ্ধান্ত। তিনি বলেন, 'যখন নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছিল, যা শুরু হয় সেপ্টেম্বর, অক্টোবর মাস থেকে তখন কেউ জানতেন না যে করোনা ভাইরাসের তৃতীয় ওয়েভ আসতে চলেছে। কিন্তু আমরা ডিসেম্বরের কাছাকাছি আসতেই আমরা অনুভব করি যে ওমিক্রন ছড়াতে শুরু করেছে। কমিশন এরপর কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য সচিবের সঙ্গে কথা বলেন এবং রাজ্যগুলির মুখ্য সচিব ও স্বাস্থ্য সচিবদের সঙ্গেও আলোচনায় বসেন। আমরা দেখি যে কোভিড ছড়াচ্ছে।' তিনি এও বলেন, 'কিছু রাজ্যে, প্রত্যেকে ভ্যাকসিনেশনের আওতায় ছিলেন না, তাই কমিশন সিদ্ধান্ত নেয় যে কোনও শারীরিকভাবে জনসভা হবে না শুরুর দিকে এবং কোনও পদযাত্রাও করবে না রাজনৈতিক দলগুলি, শুধুমাত্র ডিজিটাল জনসভা হবে এবং একই সময়ে সীমিত সংখ্যার লোকবল নিয়ে রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরা ভোটারদের দরজায় দরজায় গিয়ে প্রচার করতে পারবেন। কমিশনের প্রাথমিক ধারণা ছিল নির্বাচন হবে সুরক্ষিতভাবে এবং ভোটাররাও সুরক্ষিত থাকবেন।' তিনি এও জানিয়েছেন যে প্রত্যেক শনিবার, রবিবার করে নির্বাচনী রাজ্যগুলির মুখ্য সচিব, স্বাস্থ্য সচিবদের সঙ্গে ভ্যাকসিন নিয়ে আলোচনা করতেন নির্বাচন কমিশন। জনসভার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করার অর্থ হল যাতে কোভিড কোনওভাবে ছড়াতে না পারে। কমিশনার বলেন, 'অন্যদিকে, আমরা ধীরে ধীরে নিষেধাজ্ঞা শিথিল করতে শুরু করি। প্রত্যেক সপ্তাহে আমরা নিষেধাজ্ঞা শিথিল করেছি আলোচনার মাধ্যমে।'
রাজনৈতিক দলগুলির প্রশংসা
প্রতিটি রাজনৈতিক দলের প্রশংসা করে সুশীল চন্দ্র বলেন, 'আমি এটা বলতে চাই যে কোনও রাজনৈতিক দল এর বিরোধিতা করেনি। আমি সব রাজনৈতিক দলগুলিকে ধন্যবাদ জানাতে চাই, এছাড়াও ভোটাররাও আমাদের সিদ্ধান্তকে ভালোভাবে গ্রহণ করেছেন এবং আমরা ডিজিটাল মাধ্যমে প্রচারের জন্য ব্যয়ের সীমাও বাড়িয়েছি। যাতে হাইব্রিড মডেলে প্রচার চালানো যেতে পারে যা পরবর্তী সময়ে নজির হয়ে থাকবে।' সিইও এও বলেন, 'এই সিদ্ধান্তে কোনও রাজনৈতিক দলই বিরোধিতা করেনি এবং ডিজিটাল মাধ্যমেই সব রাজনৈতিক দলগুলি প্রচার চালিয়েছে। শুধু পদ্ধতিটা বদল হয়েছে। যেমন আমরা করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় ওয়েভের সময় লক্ষ্য করেছিলাম যে ওয়ার্ক ফ্রম হোম শুরু হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু সংস্থাগুলি বন্ধ হয়নি। একইভাবে প্রচার বনন্ধ হয়নি, প্রচার অন্যভাবে করা হয়েছিল। নির্বাচনের আগে, মণিপুর বাদে, বাকি চারটি রাজ্য তাদের ১০০% জনসংখ্যাকে ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ সরবরাহ করেছে। দ্বিতীয় ডোজও ওই পাঁচ রাজ্যের অধিকাংশ নাগরিক গ্রহণ করে ফেলেছিল। এর পাশাপাশি পোলিং স্টেশনেও বাধ্যতামূলক সুরক্ষা জারি ছিল, যাতে ভোটার ও তাঁর ভোট সুরক্ষিত থাকে।'
প্রার্থীদের তথ্য জানার অধিকার রয়েছে ভোটারদের
'এই নিষেধাজ্ঞার সময়ে, আমাদের আধিকারিকরা নির্বাচনের আদর্শ আচরণ বিধি (এমসিসি) নিয়ম লঙ্ঘনকে খুব গুরুত্ব সহকারে নিয়েছিলেন। কোভিড নিয়ম লঙ্ঘন ও পাঁচ রাজ্যে এমসিসি লঙ্ঘনের জেরে ২২৭০টি এফআইআর দায়ের করা হয়।' বলেন সুশীল চন্দ্র। সুশীল চন্দ্র আরও জানিয়েছেন যে প্রার্থীদের আবেদন পত্র জানা কমিশনের উদ্যোগে এটা বড় সফলতা। সুপ্রিম কোর্টে পিটিশন দায়ের হয়েছে যে অপরাধ জগত থেকে মানুষ নির্বাচনে লড়তে আসছে। প্রসঙ্গত, এ বছরের বিধানসভা নির্বাচনেও একই চিত্র ধরা পড়েছে। যেখানে একাধিক প্রার্থীদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা রয়েছে। এ ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্ট সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যে যারা অপরাধী পটভূমির লোক তাদের ভোটারদের কাছে পরিচিত হওয়া উচিত। মুখ্য নির্বাচন কমিশনার এ প্রসঙ্গে বলেন, 'এই কারণেই আমরা একটি অ্যাপ তৈরি করেছি এবং সকলের জন্য এটা বাধ্যতামূলক যে তাদের অপরাধের ভাবমূর্তি ও ইতিহাস সেই ওয়েবসাইটে রাখা হবে। ৬,৯০০ জন প্রার্থীদরে মধ্যে ১৬০০-এর বেশি প্রার্থীর অপরাধ প্রেক্ষাপট রয়েছে, ২৫ শতাংশের পূর্বে অপরাধের ইতিহাস রয়েছে। এটা আমাদের কর্তব্য যে আমাদের ভোটাররা প্রার্থীদের সব তথ্য জানুক। এটা ভোটারদের তাঁদের পছন্দ নির্বাচন করতে সহায়তা করবে। গণতন্ত্রের পরিচ্ছন্নতার জন্য এটি প্রয়োজনীয় যে অপরাধী প্রেক্ষাপটের প্রার্থীরা রাজনীতিতে যোগ্য নয়, তবে শেষ পর্যন্ত এটি ভোটারদের পছন্দের উপর নির্ভর করে। আমাদের দায়িত্ব ভোটারদের প্রার্থীদের প্রেক্ষাপট জানানো।'
তিন দশক পরে কংগ্রেসের 'রেকর্ড’ ভাঙল বিজেপি, উত্তরপ্রদেশে টানা দু’বার যোগী সরকার