বিতর্কিত মহন্ত রামচন্দ্র দাস! ভূমিপুজোর ঐতিহাসিক দিনে রাম মন্দিরের অন্যতম এই পুরোধা সম্পর্কে জানুন
বিতর্কিত মহন্ত রামচন্দ্র দাস! ভূমিপুজোর ঐতিহাসিক দিনে রাম মন্দিরের অন্যতম এই পুরোধা সম্পর্কে জানুন
দীর্ঘ বিতর্ক, আইনি লড়াই, রাজনৈতিক জট কাটিয়ে অবশেষে বুধবার অযোধ্যায় রামমন্দিরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করতে চলেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। করোনা আবহেও রামমন্দিরের ভূমি পুজোয় থাকছেনা কোনোও ত্রুটি। তবে এই ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাথে জড়িয়ে রয়েছে দীর্ঘ ১৩০ বছরের ইতিহাস। তবে এই ঐতিহাসিক দিনে রামমন্দিরের অন্যতম পুরোধা ত্রিকালদর্শী শ্রী পরমহংস রামচন্দ্র দাসকে একবার স্মরণ করে নেওয়া যাক সাথে সাথে জেনে নেওয়া যাক রামমন্দিরের আসল ইতিহাস।
১৯১৩ সালে বিহারের একটি গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন পরমহংস রামচন্দ্র দাস
১৯১৩ সালে বিহারের একটি গ্রামে চন্দ্রেশ্বর তিওয়ারি নামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন মোহন্ত রামচন্দ্র দাস। জন্মের কয়েক বছর পরেই অযোধ্যাতে পারি দেন তিনি। তারপর তিনি বেছে নেন আধ্যাত্মিকতার পথ, যোগ দেন দিগম্বর আখরায়। এখন তিনি পরিচিত পরমহংস রামচন্দ্র দাস নামে। রাম জন্মভূমির মুক্তি এবং রাম মন্দির নির্মাণের পেছনে তাঁর অপরিসীম অবদান রয়েছে।
১৯৪৯ সালের ডিসেম্বরেই তুঙ্গে ওঠে বিতর্ক
১৯৪৯ সালের ২২ ডিসেম্বর মধ্যরাতে বাবরি মসজিদ চত্বরের সেই বিতর্কিত স্থান থেকেই মেলে একটি পুরোনো রামমূর্তি। এই নিয়ে তখন থেকেই সোচ্চার হন মহন্ত রামচন্দ্র দাস, তার সাথে হাত মেলান তৎকালীন গোরক্ষনাথ পীঠের প্রধান দিগ্বিজয় নাথ। গোরক্ষনাথ পীঠ হল একটি ধর্মীয় গোষ্ঠী বর্তমানে এই গোষ্ঠীর প্রধান উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। তখন থেকেই গোরক্ষনাথ পিঠ ছিল ডানপন্থী রাজনীতির একটি শক্তিশালী কেন্দ্র। এরপরেই বিভিন্ন স্থানের হিন্দু রামভক্তরা ঐ স্থানে মন্দির তৈরির দাবি করতে থাকেন, অন্যদিকে মুসলমানরাও প্রতিবাদে সরব হন।
রামমূর্তি পাওয়ার প্রসঙ্গে বিতর্কে জড়ান রামচন্দ্র
১৯৪৯ সালে মসজিদের ভিতরে ভগবান রামের মূর্তি পাওয়া গেলে, তৈরী হয় জটিলতা। বিতর্কে নাম জড়ায় রামকৃষ্ণ দাসেরও। প্রশ্ন ওঠে রামকৃষ্ণ দাসের ভূমিকা নিয়েও। এই ঘটনার পরেই অভিরাম দাস, রামসকাল দাস, সুদর্শন দাস সহ প্রায় ৫০ জন হিন্দু নেতার বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হয়।যদিও পরমহংস রামচন্দ্র দাসকে এই মামলায় কখনও পাকাপাকি ভাবে অভিযুক্ত করা হয়নি। মনে করা হয়, বাবরি মসজিদের ভিতরে হিন্দুনেতারাই ভগবান রামের মূর্তি রেখে এসেছিলেন, তখন থেকেই বিতর্কিত স্থান হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে অযোধ্যা।
বিতর্কের জেরে বন্ধ করে দেওয়া হয় বাবরি মসজিদের মূল ফটক, রোজকার নামাজ
বিতর্ক তুঙ্গে উঠতেই অযোধ্যার ওই স্থান নিয়ে চলে সাম্প্রদায়িক অস্থিরতা। বন্ধ করে দেওয়া হয় বাবরি মসজিদের মূল ফটক। নিষিদ্ধ করা হয় মুসলমানদের নামাজ পড়াও। ১৯৯১ সালে একটি সংবাদ মাধ্যমের সাক্ষাৎকারে অবশ্য রামচন্দ্র বলেছিলেন, "আমিই সেই ব্যক্তি,যে মূর্তিটি মসজিদের ভিতরে রেখেছিলেন।" তবে এরপর বেশ কিছু বছর তিনি তার ভূমিকা সম্পর্কে নীরবতা বজায় রেখেছিলেন।
মৃত্যুর আগের দিন পর্যন্ত রামজন্মভূমি ন্যাসের সভাপতি ছিলেন রামচন্দ্র
১৯৮৪ সালে, প্রথম হিন্দু ধর্ম সংসদের তৈরীর মাধ্যমে রাম মন্দির সম্পর্কে প্রচার শুরু করেছিলেন। তখনও সেখানে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন রামচন্দ্র দাস। এরপর গেরুয়া বাহিনীর তত্ত্বাবধানে পরবর্তী সময়ে রাম জন্মভূমি ন্যাস গঠন করা হয় এবং রামচন্দ্র দাসকে করা হয়েছিল সভাপতি। মৃত্যুর আগের দিন পর্যন্তও রামচন্দ্র এই পদেই অধিষ্ঠিত ছিলেন।
১৯৮৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাবরি মসজিদের তালা খোলার আদেশ দেয় আদালত
এরপর ১৯৮৬ সালে বাবরি মসজিদের তালা খোলার আদেশ দেয় আদালত। ফের তৈরী হয় জটিলতা। এরপর রামচন্দ্র দাসের পাশাপাশি মাঠে নামেন ভিএইচপি-র সহ-সভাপতি এবং এলাহাবাদ হাইকোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি দেবকীনন্দন আগড়ওয়াল। তিনি সেই ১লা জুলাই এলাহাবাদ আদালতের লখনউ বেঞ্চে মামলা করেন। সেখানে তিনি বলেন, "১৫২৫ সালে মুঘল সাম্রাজ্যের স্থপতি ভারত আক্রমণ করেন। ১৫২৮ সালে বাবরের হানায় ধ্বংস হয় রামমন্দির। এরপর সেখানেই তৈরি হয় বাবরি মসজিদ।"
১৯৯২: বাবরি মসজিদ ধ্বংস
১৯৯২ সালের ৬ই ডিসেম্বর ভেঙে ফেলা হয় বাবরি মসজিদ। প্রতিবাদ, পাল্টা প্রতিবাদে জ্বলতে থাকে অযোধ্যা। জারি হয় রাষ্ট্রপতি শাসন। এরপর কিছুটা নিজের জায়গা হারান রামচন্দ্র দাস। তবে জীবনের শেষ দিন অবধি রামমন্দির নির্মাণ নিয়ে সোচ্চার ছিলেন তিনি।
অবশেষে রামমন্দিরের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন, স্মরণে রামচন্দ্র দাস
দীর্ঘ ইতিহাসের পর এই ঐতিহাসিক তিথিতে অনেকেই স্মরণ করে নিচ্ছেন রামচন্দ্র দাসকে। দীর্ঘদিন আইনি জটিলতার কারণে বাজপেয়ীর বিজেপি সরকার গঠন হলেও রামমন্দিরের কাজ বিশেষ এগোয়নি। রামমন্দিরের ভূমিপূজোর দিনে অযোধ্যার পোস্টারে, ফেস্টুনে দেখা যাচ্ছে পরমহংস রামচন্দ্র দাসের ছবি।
'রাম মন্দির রাম রাজ্যের আদর্শে আধুনিক ভারতের প্রতীক', ৫ অগাস্টের অনুষ্ঠান ঘিরে রাষ্ট্রপতির বার্তা