প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর সোনভদ্র যাত্রার উদ্যোগ নুইয়ে পড়া কংগ্রেসকে কিছুটা হলেও চাঙ্গা করবে
উত্তরপ্রদেশের মির্জাপুরের শোনভদ্র জেলায় দশজন আদিবাসীকে তাদের নিজেদের জমি না খালি করার জন্যে গুলি করে হত্যার প্রতিবাদে সেখানে যেতে চেয়েছিলেন কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ভদরা।
উত্তরপ্রদেশের মির্জাপুরের শোনভদ্র জেলায় দশজন আদিবাসীকে তাদের নিজেদের জমি না খালি করার জন্যে গুলি করে হত্যার প্রতিবাদে সেখানে যেতে চেয়েছিলেন কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ভদরা। কিন্ত পুলিশ তাঁকে মাঝপথেই আটকায়। প্রিয়াঙ্কা মৃতদের পরিজনদের সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলেন; পুলিশ প্রশাসন তাঁকে অনুমতি দেয়নি।
বিরোধীরা তাদের ঘোর দুর্দিনে এক বড়সড় কল্কে পেল প্রিয়াঙ্কার এই আটক হওয়ার কাহিনীতে। একদিকে যেমন দলের ম্রিয়মান সমর্থকরা দেখলেন এক নতুন নেতৃত্ব, অন্যদিকে রাজ্যের বিজেপি সরকারের অতিসক্রিয়তা নিয়েও উঠল প্রশ্ন।
প্রিয়াঙ্কার উদ্যোগে একটু বল পাবে কংগ্রেস
শোনভদ্র কাণ্ডের পর প্রিয়াঙ্কা যেভাবে উদ্যোগ নিলেন আদিবাসীদের পাশে দাঁড়ানোর জন্যে, তাতে জর্জরিত কংগ্রেস দলের নতুন নেতৃত্ব নিয়ে আশাবাদী হতেই পারেন দলের সাধারণ কর্মী-সমর্থকরা। রাহুল গান্ধী দলের অধ্যক্ষ পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার পরে কংগ্রেস এক কার্যত দিশাহীন জাহাজ। আর তখনই প্রিয়াঙ্কার এই উদ্যোগে কিছুটা হলেও নতুন উদ্যম খুঁজে পাবেন নেতা-কর্মীরা। এখানে মনে করা যেতে পারে যে ২০১১ সালের মাঝামাঝি উত্তরপ্রদেশের ভাট্টা-পারসৌল গ্রামে কৃষক-পুলিশ সংঘর্ষ নিয়ে সেখানে অবস্থান করেন। রাজ্যে তখন মায়াবতীর বহুজন সমাজ পার্টি ক্ষমতায় এবং তার পরের বছরের বিধানসভা নির্বাচনের আগে রাহুলের তখন ওই রাজ্যে কংগ্রেসের পুনরুত্থানের প্রচেষ্টা চলছে। যদিও ২০১২ সালে কংগ্রেস উত্তরপ্রদেশ নির্বাচনে কিছুই সুবিধা করতে পারেনি।
এর আগে ১৯৭৭ সালেও ইন্দিরা গান্ধী তাঁর নির্বাচনী হারের পরে বিহারের বেলচি গ্রামে গিয়েছিলেন সেখানে নিহত দলিতদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে। সেই ঘটনাকে ইন্দিরার ঘুরে দাঁড়ানোর রাস্তায় এক বড় মোড় হিসেবে ধরা হয়।
নির্বাচন না থাকাতেও প্রিয়াঙ্কা যেভাবে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন তা প্রশংসনীয়
দ্বিতীয়ত, এই মুহূর্তে উত্তরপ্রদেশে বা কেন্দ্রে কোনও নির্বাচন নেই। উত্তরপ্রদেশের বিধানসভায় বা ওই রাজ্য থেকে লোকসভায় কংগ্রেসের প্রতিনিধির সংখ্যা প্রায় নগন্য। দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যতে কংগ্রেস প্রায় ধুয়েমুছে সাফ। সেই সময়ে একটি নিপীড়নের ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রিয়াঙ্কার এই উদ্যোগ কংগ্রেসকে কিছুটা হলেও ভরসা যোগাবে। প্রিয়াঙ্কা এই বার্তা দিলেন যে নির্বাচনী রাজনীতিতে তাঁর অভিষেক ভালো না হলেও তিনি যুদ্ধক্ষত্র থেকে পালাননি। বরং অন্যান্য দলের নেতা-প্রতিনিধিদের আগে শোনভদ্রতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে সমাজবাদী পার্টি বা বহুজন সমাজ পার্টিকে পাল্টা চাপে ফেললেন। ওই দু'টি আঞ্চলিক দল এবারের নির্বাচনে জোট করেও বিজেপিকে হারাতে পারেনি; নির্বাচনের পরে জোট থেকে বেরিয়ে গিয়েছেন মায়াবতী। যুদ্ধে পরাজয়ের গ্লানি মায়াবতী এবং অখিলেশ যাদব হয়তো পুরোপুরি কাটিয়ে উঠতে পারেননি; কিন্তু প্রিয়াঙ্কা আমেথিতে রাহুলের পরাজয় চাক্ষুষ করার পরেও হতোদ্যম হয়ে পড়েননি; নেমে পড়েছেন ফের জমি তৈরী করতে; লক্ষ ২০২২। সমাজবাদী পার্টিও অবশ্য কয়েকজন মাঝারি নেতাকে পাঠিয়েছিল কিন্তু স্বাভাবিকভাবেই প্রিয়াঙ্কার মতো পাদপ্রদীপের আলোয় তাঁরা আসতে পারেননি। নৈতিক জয় হয়েছে কংগ্রেস নেত্রীরই।
প্রিয়াঙ্কা গান্ধী উত্তরপ্রদেশের রাজনীতি নিয়ে যে সজাগ, তার প্রমাণ মিলেছে বার বার
প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর শোনভদ্র যাত্রা যে আকস্মিক, তা বলা চলে না। তাঁর সোশ্যাল মিডিয়ায় উত্তরপ্রদেশের রাজনীতি নিয়ে সক্রিয়তা দেখলেই বোঝা যায় যে তিনি রাজ্যের ঘটনাবলী নিয়ে সচেতন ও ভাবিত। মাঝে সপ্তাহখানেকের জন্যে তিনি বাইরে গেলেও প্রিয়াঙ্কার টুইটে উত্তরপ্রদেশ নিয়ে চর্চা থিম থাকেনি। তাঁর সোনভদ্র যাত্রা নিয়ে যে আলোড়ন উঠেছে চারপাশে, তারই ফল টুইটে তাঁর সমর্থনে নানা হ্যাশট্যাগ।
বিজেপির ঝুঁকির রাজনীতি
রাজ্যের যোগী আদিত্যনাথ সরকার হয়তো এটাই চাইছে। প্রিয়াঙ্কাকে জনসাধারণের সামনে হিরো হতে দিয়ে তারা ছক কাটছে পরবর্তী নির্বাচনের আগে কংগ্রেস-সমাজবাদী-বহুজন সমাজের মধ্যে বিরোধী ভোট যেন কাটাকাটি হয়ে যায় এবং ফের বাজিমাত করে গেরুয়া শিবির। এর মধ্যে যেমন সুবিধে আছে তেমন প্রিয়াঙ্কাকে জমি ছেড়ে দেওয়ার ঝুঁকিও রয়েছে। রাজনীতিতে আগাম কিছু বলা যায় না।