হত্যার উদ্দেশ্যেই তুতিকোরিণে গুলি চালিয়েছিল পুলিশ! রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস, নাকি কারো ষড়যন্ত্র
ফাঁস হওয়া এক বিস্ময়কর ভিডিওতে, দেখআ গিয়েছে তুতিকোরিনে পুলিশ স্টারলাইট বিরোধীদের হত্যার উদ্দেশ্যেই গুলি চালিয়েছিল।
তুতিকোরিনে কি পুলিশ আন্দোলনকারীদের হত্যা করবে বলেই গুলি চালিয়েছিল, নাকি বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দেওয়াটাই তাদের উদ্দেশ্য ছিল? কারা দিয়েছিল পুলিশকে গুলি চালানোর নির্দেশ? প্রশাসন, নাকি এর পেছনে অন্য কারো হাত আছে? রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস, নাকি ষড়যন্ত্র? এসব উত্তর না মেলা প্রশ্নই ঘুরে বেড়াচ্ছে উপকূলবর্তা শহরটির আকাশে-বাতাসে। সংবাদ মাধ্যমে একটি ভিডিও প্রকাশিত হয়ে যে রহস্য আরও ঘনিভূত হয়েছে।
কি রয়েছে সেই ভিডিওতে? বিক্ষোভকারীরাদের থেকে সামান্য দূরে একটি বাসের ওপর সাদা পোশাকে দাঁড়িয়ে আছেন তামিলনাড়ুর এক পুলিশকর্মী। তাঁর হাতে সম্ভবত একটি অ্যাসল্ট রাইফেল। বাসের ওপর থেকেই তিনি নিশানা লক্ষ্য করে পোজিশন নিলেন। নীচের রাস্তায় তখন পুলিশের বিশাল বাহিনী গিজগিজ করছে। তাদের কারোর গায়ে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট, কারোর গায়ে শুধুই খাকি। সঙ্গে রয়েছেন বেশ কয়েকজন দাঙ্গা নিয়ন্ত্রণকারী বাহিনীর সদস্যও।
কেউ একজন আরেক পুলিশ সদস্যকেও বাসের ওপরে ওঠার নির্দেশ দিলেন। কয়েক সেকেন্ডে যেকোনও দক্ষ কমান্ডোর মতোই আরেকজন উঠে এলেন বাসের মাথায়। তিনিও অ্যাসল্ট রাইফেল হাতে উদ্য়ত অবস্থান নিলেন। এবার পেছন থেকে শোনা গেল আরেকটি কন্ঠস্বর, 'অন্তত একজনকে মারা উচিত।' কয়েক সেকেন্ড পরেই পুলিশের প্রথম গুলিটি ছুটল। সেটা কাউকে আঘাত করলো কিনা তা স্পষ্ট না হলেও তার পরের গুলিটি করেছে। নাহলে অন্য কোনও পুলিশ কর্মীর চালানো গুলি আঘাত হেনেছে।
#WATCH Local police in Tuticorin seen with assault rifles to disperse protesters demanding a ban on Sterlite Industries. 9 protestors have lost their lives. #TamilNadu. (Earlier visuals) pic.twitter.com/hinYmbtIZQ
— ANI (@ANI) May 22, 2018
অর্থাত, প্রাণহানি যে হবে, সে কথা পুলিশের একটা অংশ আগেই জানত। তুতিকোরিনে স্টারলাইট বিরোধী আন্দোলনকারীদের ওপর তারা জেনে বুঝে হত্যা করার জন্যই গুলি চালিয়েছিল। এটা কোনও হঠাত ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনা নয়। কিন্তু কে বা কারা পুলিশকে গুলি চালানোর নির্দেশ দিয়েছিল সেটা এখনও স্পষ্ট নয়।
যেটা স্পষ্ট সেটা হল, মঙ্গলবার তামিলনাড়ুর তুতিকোরিনে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে প্রাণ গিয়েছে অন্তত ৯ জন স্টারলাইট বিরোধী আন্দোলনকারীর। স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমের দাবি, এর মধ্যে এক ১৭ বছরের কিশোরীও রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী এডাপ্পাডি কে পলানিস্বামী ঘটনায় পুলিশের ভূমিকার তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী একে 'হত্যা' এবং 'রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস' বলে সমালোচনা করেছেন। শনিবার সন্ধ্যায় গভর্নর বনোয়ারিলাল পূরোহিত একটি শোক বার্তা প্রকাশ করেন। সেখানে তিনি নিহতের সংখ্যা ১১ বলেছেন।
গত ১০০ দিন ধরে তুতিকোরিনে নতুন করে স্টারলাইট কারখানা সরানোর দাবিতে আন্দোলন চলছে। কিন্তু সেই আন্দোলন হঠাত কেন এত হিংসাত্মক হয়ে গেল, সেই প্রশ্নই ঘুরছে বিভিন্ন মহলে। এর মধ্যে এই ভিডিওটি প্রকাশ পাওয়ায় রহস্য ক্রমে দানা বাধছে। এর আগে স্টারলাইট বিরোধী আন্দোলনের পিছনে বিদেশী ও বিচ্ছিন্নতাবাদীদের উস্কানির অভিযোগ উঠেছিল। আন্দোলনটি একটি সঠিক কারণে শুরু হলেও তাকে স্বার্থান্বেষী বহিরাগতরা কাজে লাগাতে চাইছে বলে দাবি করেছিলেন কেউ কেউ। এখন এই ভিডিয়ো সামনে আসার পর প্রশ্নটা হল, বিক্ষোভ হঠাতে এটা কি রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস ছিল? নাকি বিক্ষোভের আগুনে ঘি ঢালতে কোনও ষড়যন্ত্র রয়েছে এর পেছনে?
গতকাল গুলি চালনার ঘটনার পরই অবস্থা হাতের বাইরে চলে গেছিল। তীব্র উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছিল উপকূলবর্তী শহরটি জুড়ে। হাজার হাজার মানুষ পথে নেমে আসেন। একাধিক পুলিশের গাড়ি সহ কালেক্টরের অফিস, এমনকী স্টারলাইট কারখানার কর্মীদের আবাসস্থলেও আগুন ধরিয়ে দেয় উত্তেজিত জনতা। গোটা শহর জুড়ে দীর্ঘক্ষণ ধরে চলে দাঙ্গা-হাঙ্গামা। জায়গায় জায়গায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ান প্রতিবাদীরা। দাঙ্গা নিয়ন্ত্রণকারী স্ট্রাইকিং ফোর্সকে লক্ষ্য করে ইঁট-পাথর ছো়ড়া হয়। ভাঙচুর করে জ্বালিয়ে দেওয়া হয় তাদের গাড়ি।
১৯৯৭ সালে স্টারলাইট কপারের এই কারখানাটি স্থাপিত হয়েছিল। সেসময় থেকেই পরিবেশ দূষিত হওয়ার অভিযোগে কারখানাটি বন্ধ করার দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়েছিল। কপার উৎপাদনের সময় বাইপ্রোডাক্ট হিসেবে সীসা, আর্সেনিক এবং সালফার অক্সাইডের মত বিষাক্ত উপজাত উৎপন্ন হয়। এলাকার জল, মাটি এবং বায়ু দুষিত হয়। কারখানা স্থাপনের পর থেকেই আশপাশের গ্রামের মানুষের স্বাস্থ্যহানি এ বিষয়টিকে সমর্থনও করেছে। ফেব্রুয়ারির ১০ তারিখ কারখানাটির মেয়াদ আরও ২৫ বছর বাড়ানোর কথা ঘোষিত হতেই নতুন করে মাথা চাড়া দেয় প্রতিবাদ-আন্দোলন। গত এপ্রিলে কমল হাসান থেকে শুরু করে তামিল ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির অনেকেই আন্দোলনকে সমর্থন জানান।