এনআরসি-কে দায়ী করে অসমে আত্মহুতি, নিজেকে শেষ করে দিলেন ৭০ বছরের বৃদ্ধ
এবার জাতীয় নাগরিকপঞ্জীকরণ-এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে ঘটল আত্মহুতির ঘটনা। এর আগে এনআরসি নিয়ে নানা বিচ্ছিন্ন মৃত্য়ুর অভিযোগ এসেছে। কিন্তু, সেই সব মৃত্যুর জন্য যে এনআরসি দায়ী তা হলফ করে বলা যায়নি।
এবার জাতীয় নাগরিকপঞ্জীকরণ-এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে ঘটল আত্মহুতির ঘটনা। এর আগে এনআরসি নিয়ে নানা বিচ্ছিন্ন মৃত্য়ুর অভিযোগ এসেছে। কিন্তু, সেই সব মত্যুর জন্য যে এনআরসি দায়ী তা হলফ করে বলা যায়নি। কিন্তু, এবার এমন এক মৃত্যুর ঘটনা সামনে এলে যেখানে সরাসরি এনআরসি-কেই দায়ী করা হয়েছে। এনআরসি-কে দায়ী করে মিলেছে সুইসাইড নোটও।
জানা গিয়েছে, অসমের দারাং জেলার খারুপেটিয়া শহরের বাসিন্দা বছর সত্তরের নিরোদবরণ দাসকে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। এই ঘটনা রবিবারের। নিরোদবরণের কাছ থেকে একটি সুইসাইড নোটও মেলে। এতে মৃত্যুর জন্য এনআরসি-তে নাম ওঠাকেই দায়ী করেছেন তিনি। যেভাবে রাতারাতি তাঁকে 'বিদেশি'-র তকমা পেতে হয়েছে তা তিনি সহ্য করতে পারছেন না বলেই সুইসাইড নোটে জানিয়েছেন।
নিরোদবরণ দাস-এর ভাই অখিল দাস জানিয়েছেন, ১৯৬৮ সালে স্থানীয় শৈলবালা হাইস্কুল-থেকে পাস করে বেরিয়েছিলেন তাঁর দাদা। এই স্কুলেই তিরিশ বছর ধরে শিক্ষকতাও করেছিলেন নিরোদবরণ দাস। এমনকী, অবসর নেওয়ার পর আইনজীবী হিসাবেও কাজ করতে আইনে গ্র্য়াজুয়েট নিরোধবরণ। স্ত্রী, তিন মেয়ে, দুই ভাই ও বোনকে নিয়ে একসঙ্গেই থাকতেন নিরোধবরণ।
এনআরসি-তে পরিবারের সমস্ত সদস্যের নাম উঠলেও তাঁর নাম ওঠেনি। এই নিয়ে প্রবল মানসিক হতাশায় ভুগছিলেন তিনি। নিজ দেশে পরবাসী হয়ে যাওয়ার যন্ত্রণা নিয়ে প্রায়ই পরিবারের সদস্যদের কাছে নাকি অনুযোগও করতেন নিরোধবরণ। খারুপেটিয়া শহর মূলত কৃষি নির্ভর। এই শহরে অন্তত ৮ হাজার লোকের নাম জাতীয় নারকি পঞ্জী-র চূড়ান্ত খসড়া তালিকা থেকে বাদ গিয়েছে। নিরোদবরণ যে এমন একটা পদক্ষেপ নেবেন তা তাঁরা আন্দাজও করতে পারেননি বলে জানিয়েছেন মেয়ে নীলিমা।
দারাং জেলার পুলিশ সুপার সৃজিত টি জানিয়েছেন, রবিবার নিরোধবরণকে ঘরের মধ্যে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পায় তাঁর পরিবার। নিরোদবরণ দাসের ভাই অখিল দাস জানিয়েছেন, ৭ দশক ধরে অসমের খারুপেটিয়া শহরে তাঁরা বাস করছেন, কিন্তু সেগুলোকে এনআরসি-তে বিবেচনাই করা হল না। তাহলে সত্যিকারে ভারতীয় চিহ্নিতকরণের পদ্ধতিটা ঠিক কী?
নিরোদবরণের এমন আত্মহুতি-তে কার্যত বাকরুদ্ধ তাঁর প্রতিবেশী থেকে শুরু করে বন্ধুমহল। গণেশ ঘোষ নামে এক বন্ধু জানিয়েছেন, অপ্রত্য়াশিতভাবে বিদেশি হয়ে যাওয়ার তকমাটা নিতে পারছিলেন না নিরোধবরণ। মানসিক হতাশাতেই নিজেকে শেষ করে দিলেন তিনি।
কয়েক মাস আগে অসমে জাতীয় পঞ্জী-র চূড়ান্ত খসড়়া তালিকা প্রকাশ পেয়েছে। এতে ৪০ লক্ষ মানুষের নাম নেই। সেই সঙ্গে প্রায় ৩ লক্ষ মানুষের পরিচয় নিয়ে প্রশ্ন ঝোলানো হয়েছে। এই বিশাল সংখ্যক মানুষের মধ্যে ৯০ শতাংশই আবার বাঙালি। যার ফলে অসমে বসবাসকারী বাঙালিদের মধ্যে এক তীব্র অসন্তোষ ছড়িয়েছে। এই মুহূর্তে অসমে জাতীয় নাগরিক পঞ্জীকরণের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের কাজ চলছে। যাদের নাম বাদ গিয়েছে তাদেরকে সুযোগ দেওয়া হয়েছে নাগরিক প্রমাণের তথ্য পেশ করার। কিন্তু, এই তথ্য প্রমাণ নিয়েও একাধিক অভিযোগ সামনে আসছে।