ত্রিপুরায় ৩ কর্মচারী খুনের ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত সংবাদপত্রের সম্পাদক

স্থানীয় সংবাদপত্র দৈনিক গণদূতের সম্পাদক সুশীল চৌধুরি। গত বছরে নিজের গাড়ির চালক, প্রুফ রিডার এবং ম্যানজার খুনে ৭৬ বছরের সুশীলবাবুকে দোষী সাব্যস্ত করল আদালত। বৃহস্পতিবার সুশীল চৌধুরির সাজা ঘোষণা করবে আগরতলা আদালত। খুনের দায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত হতে পারে তাঁর।
সুশীল চৌধুরি সংবাদ দুনিয়ার গণমান্য ব্যক্তিত্ব। প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতিদের সঙ্গে একাধিকবার বিদেশ সফরে গিয়েছেন এই হাই প্রোফাইল সাংবাদিক। পুলিশসূত্রের খবর অনুযায়ী. কোনও বেআইনি ও গোপন জমি কেনাবেচায় যুক্ত ছিলেন। সুশীলবাবুর বিরুদ্ধে বিভিন্ন তথ্য ফাঁস করে দেওয়া হুমকি দিয়েছিলেন ম্যানেজার রঞ্জিত চৌধুরি (৬১)। আর সেই কারণেই গত বছর মে মাসে তাঁকে খুন করা হয়।
সুশীলবাবুর গাড়ির চালক বলরাম ঘোষও (৩১) এই ম্যানেজর খুনের ঘটনায় যুক্ত ছিলেন বলে অভিযোগ। বলরাম এবং প্রুফ রিডার সুজিত ভট্টাচার্য (২৫) ম্যানেজর খুনের ঘটনার অন্যতম সাক্ষী ছিলেন। পুলিশ চার্জশিটে জানিয়েছে, সংবাদপত্র অফিসে ২০১৩, ১৯ মে-র যে ৩ জনের খুন হয় তাতে বাইরের কোনও লোক জড়িত নয়। গত বছরেরই ৭ জুন সুশীল চৌধুরিকে গ্রেফতার করা হয়। চার্জশিট অনুয়ায়ী, গাড়ির চালক বলরামের সঙ্গে সংবাদপত্রের সম্পাদক ম্যানেজার খুনের ষড়যন্ত্র করে। জমি লেনদেন নিয়ে ম্যানেজারের বচসা বাধে। দুজনের ধ্বস্তাধ্বস্তি হয়। এরপর ছুড়ি মেরে গলা টিপে খুন করা হয় ম্যানেজারকে। এদিকে বিষয়টি শুনতে পেয়ে যান প্রুফ রিডার সুজিত। তিনি ভয়ে পেয়ে ম্যানেজারের অফিসে একতলায় ছুটে যান। সেখানে উপস্থিত ছিলেন বলরাম। বলরামের সঙ্গে সুজিতের ধ্বস্তাধ্বস্তি শুরু হয়ে যায় দুজনেই একে অপরকে ছুড়ি মেরে দেন।
কিন্তু এর পরেও বলরাম ও সুজিত দুজনেই প্রাণে বেঁচে ছিলেন। কিন্তু সুশীল চৌধুরি মেডিক্যাল সহায়তার জন্য কাউকে না ডাকায় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের জেরে মৃত্যু হয় ২ জনেরই।
এরপরে সুশীলবাবুর অফিস থেকে ওই ৩ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তদন্তে উঠে আসে ম্যানেজারকে গলা টিপে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়েছে। বাকি দুজনকে ছুড়ি মেরে খুন করা হয়। এই ঘটনায় হতচকিত হয়ে যায় গোটা উত্তরপূর্ব ভারত। মিডিয়ায় আলোড়ন পড়ে যায়।
শুশীল চৌধুরিকে গ্রেফতার করার পর তিনি জানিয়েছিলেন, তিনি কারোর খুন করেননি। বরং খুনীদের লক্ষ্য ছিলেন তিনিই। কিন্তু কীভাবে কী ঘটল তার কোনও ব্যাখ্যা ছিল না সম্পাদকের কাছে। এরপরে ত্রিপুরা হাই কোর্টে জামিনের আর্জি জানান সুশীলবাবু। কিন্তু আদালত তা খারিজ করে দেয়। যত শীঘ্র সম্ভব তদন্ত শেষ করতে হবে।
৬৮ দিনের মাথায় চার্জশিট দাখিল করে পুলিশ। ওই চার্জশিটে সুশীল চৌধুরি এবং বলমার ঘোষের পাশাপাশি তাঁর স্ত্রী নিয়তি ঘোষেরও নাম ছিল। তবে আদালত নিয়তিকে সমস্ত অভিযোগ থেকে বেকসুর খালাস করেছে।