গ্রামে ৩২ টাকা, শহরে ৪৭ টাকা! পকেটে থাকলে গরিব নন
এ বার দারিদ্র্য তথা দারিদ্র্যসীমার নবতম মাপকাঠি ঠিক করে দিলেন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নর সি রঙ্গরাজন। এনডিএ সরকারের কাছে রিপোর্ট পেশ করে জানালেন, গ্রামে রোজ ৩২ টাকা খরচ করতে পারেন এবং শহরে রোজ ৪৭ টাকা ব্যয় করতে সক্ষম, এমন লোকেদের গরিব বলা যাবে না! অর্থাৎ গ্রামে কারও মাসিক রোজগার ৯৭২ টাকা হলে এবং শহরাঞ্চলে তা ১৪০৭ টাকা হলে তিনি দারিদ্র্যসীমার নীচে থাকছেন না!
২০১১-১২ সালে ইউপিএ আমলে সুরেশ তেণ্ডুলকর কমিটির পরিসংখ্যান নিয়ে বিস্তর জলঘোলা হয়েছিল। তখন বলা হয়েছিল, গ্রামে রোজ ২৭ টাকা এবং শহরাঞ্চলে ৩৩ টাকা ব্যয় করতে পারে, এমন লোকজন দারিদ্র্যসীমার ঊর্ধ্বে থাকবে। যোজনা কমিশনের তৎকালীন ডেপুটি চেয়ারম্যান মন্টেক সিং আলুওয়ালিয়া এই তত্ত্বকে সমর্থন করেছিলেন। এর জেরে বিস্তর হইচই হয়েছিল। প্রশ্ন উঠেছিল, এটা কি যুক্তিসঙ্গত? মুম্বই, ব্যাঙ্গালোর ছেড়েই দেওয়া গেল। এগুলি ব্যয়বহুল শহর হিসাবে পরিচিত। 'সস্তা শহর' কলকাতাতে কেউ ৩৩ টাকা খরচ করে দু'বেলা ভরপেট খেতে পারবে? এখন দেখা যাচ্ছে, রঙ্গরাজন কমিটিও একই বিভ্রান্তির স্বীকার। আরও একটা বিষয়ে আপত্তি আছে। তা হল, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির যুগে খরচ দ্রুত বাড়ে। আজকে ভাত-ডাল-মাছ খেতে কারও যা খরচ হচ্ছে, দু'দিন পরই সেটা বেড়ে যাচ্ছে। ফলে এমন কঠোর-কঠিন সীমারেখা তৈরি করে দেওয়া কি যুক্তিসঙ্গত? সুরেশ তেণ্ডুলকর বা সি রঙ্গরাজন নিজে কলকাতা শহরে ৪৭ টাকায় একটা দিন চালাতে পারবেন? এই প্রশ্নগুলিই ঘুরেফিরে আসছে বারবার।
সুরেশ তেণ্ডুলকর কমিটি তাদের সমীক্ষায় আরও বলেছিল, দেশে দারিদ্র্যসীমার নীচে বসবাসকারী মানুষের সংখ্যা ২৭ কোটি। রঙ্গরাজন কমিটি বলছে, এই সংখ্যা ৩৬.৩০ কোটি। শতকরা হিসাবে গরিব বেড়েছে ৩৫ শতাংশ। রঙ্গরাজন কমিটির রিপোর্ট নিয়ে এখনও কেন্দ্রের তরফে কেউ মুখ খোলেনি।