তেলেঙ্গানা বিল পেশের বিরোধিতায় লোকসভায় ছুরি, মরিচ স্প্রে, ঘুষোঘুষি
আগে থেকে ঠিক ছিল এদিন তেলেঙ্গানা বিল পেশ হবে লোকসভায়। কিন্তু, কংগ্রেসেরই সীমান্ধ্র এলাকার সাংসদরা হুমকি দিয়েছিলেন, আলাদা রাজ্য গঠন তাঁরা মানবেন না। তাঁদের সমর্থন করেন তেলুগু দেশম পার্টি (টিডিপি) এবং ওয়াইএসআর কংগ্রেসের সাংসদরা। সভার শুরুতে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীলকুমার শিন্দে বিদ্রোহী সাংসদদের কাছে আর্জি জানান শান্তি বজায় রাখার।
কিন্তু, দুপুর বারোটা নাগাদ সুশীলকুমার শিন্দে তেলেঙ্গানা বিল পেশ করতেই হইচই শুরু হয়ে যায়। সীমান্ধ্র এলাকার কংগ্রেস সাংসদরা অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকেন। লোকসভায় কেন সোনিয়া গান্ধী, রাহুল গান্ধী ও মনমোহন সিং গরহাজির, সেই প্রশ্ন তুলে স্পিকার মীরা কুমারের দিকে ছুটে যান। ঘুষি মেরে টেবিলের কাচ ভেঙে দেন। টিডিপি সাংসদ বেণুগোপাল রেড্ডি স্পিকারের মাইক্রোফোন কেড়ে নিয়ে আছাড় মেরে ভেঙে ফেলেন। স্পিকার তাঁকে ভর্ৎসনা করলে তিনি পকেট থেকে ছুরি বের করে ভয় দেখান বলে অভিযোগ।
ইতিমধ্যে তেলেঙ্গানা এলাকার সাংসদরা ছুটে আসেন। তাঁরা বেণুগোপাল রেড্ডিকে ধরে টানাহ্যাঁচড়া শুরু করেন। এ সময় তেলেঙ্গানাপন্থী সাংসদরা ওই টিডিপি সাংসদকে ঘুষি মারেন বলেও অভিযোগ। আর এক টিডিপি সাংসদ কে নারায়ণ রাও হঠাৎ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। যদিও তিনি বিষ খেয়েছেন বলে খবর রটে যায়। এই ঘটনার সত্যতা অবশ্য জানা যায়নি।
কংগ্রেসকেই দুষল বিজেপি
তবে, সবচেয়ে ভয়ঙ্কর কাণ্ড ঘটান বিজয়ওয়াডার সাংসদ লগডপতি রাজাগোপাল। তিনি সোনিয়া গান্ধী-মনমোহন সিংয়ের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে দিতে আসন ছেড়ে উঠে পড়েন। তার পর পেপার স্প্রে বা মরিচ স্প্রে ছড়াতে শুরু করেন। মুহূর্তে কটু গন্ধে ভরে যায় লোকসভা। দলমত নির্বিশেষে সাংসদরা প্রচণ্ড কাশতে শুরু করেন স্প্রে-র প্রভাবে। শুরু হয় চোখ জ্বালা, মাথার যন্ত্রণা। ওই সাংসদ নিজেও অসুস্থ হয়ে পড়েন। শেষ পর্যন্ত মার্শালরা অসুস্থ সাংসদদের ধরাধরি করে অ্যাম্বুলেন্সে তুলে দেয়। তাঁদের নিয়ে যাওয়া হয় রামমনোহর লোহিয়া হাসপাতালে।
এই অবস্থায় আর লোকসভা চালানো সম্ভব হয়নি। অধিবেশন মুলতুবি ঘোষণা করা হয়। পেপার স্প্রে এতটাই জোরালো ছিল যে, দর্শক গ্যালারিতে বসে থাকা সাংবাদিকরা পর্যন্ত কাশতে শুরু করেন।
পরে স্পিকার মীরা কুমার সাংবাদিকদের বলেন, "আমি নিজেও অসুস্থ হয়ে পড়েছি। যা হল, সেটা গণতন্ত্রের কলঙ্ক। সারা বিশ্বের কাছে লজ্জায় আমাদের মাথা হেঁট হয়ে গেল।" সিপিআই সাংসদ গুরুদাস দাশগুপ্ত বলেছেন, "লগডপতি রাজাগোপাল দুর্বৃত্তের মতো কাজ করেছেন। ওঁকে এক্ষুণি গ্রেফতার করা উচিত।" তৃণমূল সাংসদ দীনেশ ত্রিবেদী বলেছেন, "সংসদ হল গণতন্ত্রের মন্দির। কিন্তু আজকের ঘটনায় সংসদের মর্যাদাহানি হয়েছে।"
এই ঘটনার দায় পুরো কংগ্রেসের ওপর চাপিয়ে দিয়েছে বিজেপি। লোকসভায় বিরোধী দলনেত্রী সুষমা স্বরাজ বলেছেন, "এমন অবস্থা তৈরি হল কংগ্রেসের কারণে। নিয়ম না মেনে গায়ের জোরে ওরা বিল পেশ করেছে। তেলেঙ্গানা নিয়ে আমরা আর সরকারের সঙ্গে কোনও আলোচনায় যাব না।" বিজেপি-র 'ভীষ্ম' লালকৃষ্ণ আদবানি বলেছেন, "১৯৭০ সাল থেকে সংসদে আছি। আজ পর্যন্ত এমন বিশৃঙ্খল অবস্থা দেখিনি। সরকারের উচিত, সংসদের সম্মান রক্ষায় কেবল ভোট-অন অ্যাকাউন্টের কাজ চালানো। এই দায় সরকারের।"
কংগ্রেস অবশ্য বলেছে, হামলাকারী সাংসদদের ছাড়া হবে না। সংসদ-বিষয়ক মন্ত্রী কমলনাথ জানান, স্পিকারের সঙ্গে আলোচনা করে ওই সাংসদদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আপাতত ১৭ জন সাংসদকে চিহ্নিত করে সাসপেন্ড করা হয়েছে।