মোদী-কেয়ার চালু করতে জোর কদমে এগোচ্ছে সরকার, কিন্তু বাস্তবায়ন নিয়ে রয়েছে অনেক প্রশ্ন
২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগেই ৫০ কোটি ভারতীয়ের স্বাস্থ্য-বীমা করানোর জন্য হড়োহুড়ি করছে মোদী সরকার, কিন্তু বাস্তবায়নের পথে অনেক বাধা রয়েছে।
প্রায় ৫০ কোটি ভারতীয়কে স্বাস্থ্য বিমার সুবিধা দিতে মোদী ঘোষণা করেছিলেন আয়ুষ্মান ভারত হেলথ ইনসিওরেন্স বা মোদীকেয়ার-এর কথা। ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের আগেই এই স্বাস্থ্যবিমা চালু করার লক্ষ্য নিয়েছে তাঁর সরকার। এই বিমাকে সামনে রেখেই ভোট বৈতরণী পার হতে চান তিনি। কিন্তু এই বিশাল সংখ্যক মানুষকে বিমার সুবিধা দেওয়া চাট্টিখানি কথা নয়। প্রতিবন্ধকতা রয়েছে পদে পদে। তাই আদৌ ২০১৮-র ১৫ আগস্ট মোদীকেয়ার চালু করা যাবে কিনা তা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন।
দেশের এত সংখ্যক মানুষকে স্বাস্থ্য বিমার সুবিধা দেওয়ার মতো পরিকাঠামো সরকারের নেই। কাজেই শুধু সরকারী হাসপাতালের ভরসায় কাজ হবে না। বিমার আওতায় রাখতে হবে বেসরকারি হাসপাতাল গুলিকেও। জানা গিয়েছে এখনও একটা বড় অংশের হাসপাতাল ও বিমা সংস্থাগুলির সঙ্গে সরকারের এনিয়ে বোঝাপড়া চলছে। ১৫ আগস্টের আগে তা শেষ হবে বলেই অবশ্য দাবি করছে সরকার।
সমস্যা রয়েছে অর্থনৈতিকও। মোদী সরকার দুম করে স্বাস্থ্য বিমা দেওয়ারী কথা ঘোষণা করে দিলেও এতে মোট কত খরচ-খরচা হতে পারে তার এখনও কোনও হিসেব কষা যায়নি। প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি রয়েছে বিমার আওতার প্রত্যেককে বার্ষিক ৫ লক্ষ টাকার কভার দেওয়ার। ফলে দেশের বিমা সংস্থাগুলির উপর এক ঝটকায় চাপ বাড়ছে অনেকটাই। যা পূরণ করা তাদের পক্ষে সম্ভব নাও হতে পারে বলেই ধারণা অর্থনীতিবিদদের। সংস্থাগুলির এ অবস্থায় চাইছে সরকার স্বাস্থ্য খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করুক।
এরসঙ্গে যুক্ত হয়েছে ভারতের ফেডেরাল গঠনের বাধা। স্বাস্থ্য রাজ্য সরকারেরও বিষয়। বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে খুব একটা সমস্যা না হলেও অন্ধ্রপ্রদেশ বা পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্য যেখানে বিজেপি বিরোধী দলগুলি ক্ষমতায় রয়েছে, তারা মোদীর প্রকল্পকে এগিয়ে নিয়ে যেতে বিশেষ আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। তারা বলছেন রাজ্য সরকারেরই নিজেদের স্বাস্থ্যবিমা রয়েছে।
তবে সবচেয়ে বড় সমস্যা হল পরিকাঠামোর অভাব। জনস্বাস্থ্যের কাজে জড়িত অনেকেই বলছেন, এই বিমার আওতার বেশিরভাগ মানুষই গ্রামাঞ্চলের। ভারতের গ্রামগুলিতে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের অভাব যেমন রয়েছে, তেমনই অভাব রয়েছে চিকিৎসকেরও। চিকিৎসা সংক্রান্ত যন্ত্রপাতির অবস্থাও তথৈবচ। কাজেই বিমা করা থাকলেও স্বাস্থ্য-পরিষেবা পেতে হয়ত তাদের কাউকে কাউকে ১০০ কিলোমিটার দূরেও যেতে হতে পারে। অনেকেই বলছেন শুধু টাকা দিলেই কাজ মিটে যায় না।
বিরোধীরা দীর্ঘদিনের অভিযোগ মোদী সরকার ব্যবসায়ীদের সরকার, গরীবের দেখভাল নিয়ে এই সরকারের ভাবনা নেই। ২০১৯ সালের আগে এই ধারণাটাই বদলাতে চাইছেন বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। তাই কিছুটা হঠকারীভাবেই প্রস্তুতি ছাড়া এই স্বাস্থ্যবিমার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বসেন মোদী।