কিনেছেন তিনটে সম্পত্তি, পিএনবি কাণ্ডে ভূমিকা রয়েছে মেহুল চোকসির স্ত্রীর, তদন্তে ইডি–সিবিআই
পিএনবি কাণ্ডে ভূমিকা রয়েছে মেহুল চোকসির স্ত্রীর
ভারতে পলাতক হীরে ব্যবসায়ী মেহুল চোকসির স্ত্রী প্রীতি চোকসিও এবার কেন্দ্রীয় তদন্তকারীদের তদন্তের আওতায় চলে এলেন। এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রের খবর যে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী এজেন্সিরা পিএনবি কাণ্ডে মেহুল চোকসির স্ত্রীয়ের জড়িত থাকার প্রমাণ পেয়েছে। ইডি ও সিবিআই সেই তথ্যগুলি খতিয়ে দেখার চেষ্টা করছে।
তিনটে সম্পত্তির তথ্য
তদন্তকারী সংস্থার হাতে কমপক্ষে তিনটে সম্পত্তির তথ্য হাতে এসেছে। কিন্তু সেই সম্পত্তির তথ্যে যে ঠিকানা রয়েছে তা নিয়ে একটু বিভ্রনান্তির সৃষ্টি হয়েছে। এজেন্সির মতে, ওই সম্পত্তিগুলি বেআইনি অর্থ দিয়ে কেনা হয়েছে। তথ্য অনুযায়ী ২০১৩ সালে প্রীতি চোকসি সিডি শাহ বলে একজনকে দুবাইতে চ্যারিং ক্রস হোল্ডিংস, কলিনডেল হোল্ডিংস ও হিলিংডন হোল্ডিং এই তিনটে সংস্থাকে একসঙ্গে করতে বলেছিলেন। এই তিন সংস্থার নমিনি ডিরেক্টর হিসাবে ছিল সিজি শাহের মেগাস কনসালটেন্সি। তথ্যে বলা হয়েছে, 'এই তিনটে সংস্থাই মেহুল চোকসির লাভের স্বার্থে কাজ করছিল।' সংস্থাগুলি ৩৯১.৪৮ কোটি টাকা পর্যন্ত অপরাধের আয়ের প্রত্যক্ষ সুবিধাভোগী ছিল।
পিএনবি কাণ্ডে সরাসরি যুক্ত প্রীতি
তথ্যে এও বলা হয়েছে যে ইডি আভাস দিয়েছে, পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্কের অর্থ তছরূপের প্রতারণার সঙ্গে প্রীতি চোকসি সরাসরি জড়িত রয়েছেন। ২০১৩ সালে প্রীতি এবং দুবাইয়ের গীতাঞ্জলী জেমসের কর্মী ডিওন লিলি-হোয়াইট সিডি শাহ ও তাঁর সহকারী নেহা শিন্ডের সঙ্গে এই তিন সংস্থার জন্য দেখা করেন। সিডি শাহের কনসালটেন্সির নাম মেগাস কনসালটেন্সি। হিলিংডন হোল্ডিংসকে ২০১৩ সালের ২৪ নভেম্বর জাবেল আলি ফ্রি জোনে অন্তর্ভুক্ত করা হয় এবং প্রীতি চোকসি সেখানে চূড়ান্ত সুবিধাভোগী মালিক (ইউবিও)। জাপানে মেগাসের কর্মী অরবিন্দ কুমার শাহকে নমিনি শেয়ারহোল্ডার হিসাবে নিয়োগ করা হয় এবং ডিরেক্টর হিলিংডন হোল্ডিংস ছিল এমএস গোল্ডহাক ডিএমসিসির একমাত্র শেয়ারহোল্ডার (আগের নাম দিমিনিকো ডিএমসিসি)। চোকসির লাভের স্বার্থে হিলিংডন হোল্ডিংস লিমিটেডের সহযোগী প্রতিষ্ঠান দিমিনিকো ডিএমসিসি (পরে পরিবর্তিত গোল্ডহাক ডিএমসিসি) মেহুল চোকসির বেশ কয়েকটি সংস্থায় কাজ করেছিল।
বিভিন্ন সংস্থার অ্যাকাউন্টে টাকা স্থানান্তর
২০১৪ সালের ৯ নভেম্বর প্রায় দেড় কোটি টাকা এমএস এশিয়ান ডায়মন্ড ও জুয়েলারি এফজেডই-এর পক্ষ থেকে হিলিংডন হোল্ডিংসের অ্যাকাউন্টে পাঠানো হয়। দুবাইয়ের গীতাঞ্জলী গ্রুপেরই গয়নার বিপণনী এশিয়ান ডায়মন্ড ও জুয়েলারি এফজেডই। এমএস গোল্ডহকের তিনটি অস্থাবর সম্পত্তি রয়েছে দুবাইতে, মোট ৫১২৩.০৮ স্কোয়ার ফিট জুড়ে, যার মূল্য ২২.৫৪ কোটি। এই অস্থাবর সম্পত্তিগুলি রেজিস্ট্রার হয়েছে দিমিনিকো ডিএমসিসির আওতায় এবং এখনও সেই নামেই রয়েছে। তথ্যে এও বলা আছে যে চোকসির স্ত্রী তাঁর স্বামীর অপরাধের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যোগদান করেছিলেন এবং গোটা অপরাধে তিনি কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করেছেন।
প্রীতি চোকসি অর্থ লুটের সঙ্গে যুক্ত
এজেন্সিগুলির অভিযোগ প্রীতি চোকসি সক্রিয়ভাবে বিভিন্ন মুখোশধারী সংস্থার নামে পিএনবির সঙ্গে আর্থিক প্রতারণা করেছেন। তিনি দুবাইতে সম্পত্তি কেনার নাম করে পিএনবির থেকে প্রতারণা করে এক কোটি টাকা স্থানান্তরও করেছেন। অন্যদিকে আইনজীবী মাইকেল পোলাক জানিয়েছেন যে লন্ডনে মেহুল চোকসির আইনি দল সার্বজনীন এখতিয়ারের আওতায় মেহুল চোকসির অ্যান্টিগা ও বারবুডা থেকে ডোমিনিকায় অপহরণের অভিযোগ খতিয়ে দেখার জন্য মেট্রোপলিটন পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন।
ডোমিনিকায় গ্রেফতার মেহুল চোকসি
বর্তমানে মেহুল চোকসি ডোমিনিকায় হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। তাঁকে কিছুদিন আগে ডোমিনিকায় অনুপ্রবেশের জন্য গ্রেফতার করা হয়। যদিও মেহুল চোকসির দাবি তাঁকে অ্যান্টিগা ও বারবুডার ক্যারিবিয়ান দ্বীপ থেকে অপহরণ করে ডোমিনিকায় নিয়ে আসা হয়েছে। ভারতে ১৩৫০০ কোটি টাকার পিএনবি জালিয়াতি মামলার অন্যতম অভিযুক্ত মেহুল চোকসি ২০১৮ সালে ভারত ছাড়েন এবং অ্যান্টিগার নাগরিক হিসাবে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন।