মনোহর পার্রিকর, আইআইটি থেকে 'জনসাধারণের মুখ্যমন্ত্রী' - এক বর্ণময় জীবনের অবসান
গোয়া মুখ্যমন্ত্রী মনোহর পার্রিকরের জাবনাবসান ঘটেছে। জেনে নিন তার বর্ণময় রাজনৈতিক জীবন সম্পর্কে।
রবিবার (১৭ মার্চ), শেষ নিশ্বাস ত্য়াগ করেছেন গোয়ার মুখ্যমন্ত্রী মনোহর পার্রিকর। দীর্ঘদিন ধরে তিনি অগ্নাশয়ের ক্যানসারে ভুগছিলেন। গত অক্টোবরে গোয়ার সরকার মুখ্যমন্ত্রীর অসুস্থতার কথা ঘোষণা করেছিল। ধীরে ধীরে কর্কট রোগ ছড়িয়ে পড়েছিল যকৃতেও। গত কয়েকদিনে অবস্থার আরও অবনতি হয়। অবশেষে চিকিৎসকদের সব লড়াই এদিন শেষ হয়ে যায়।
তাঁর মৃত্যুতে অবসান হল এক ব্যতিক্রমী রাজনীতিকের। অনেকেরই হয়ত জানা নেই, মনোহর পার্রিকরই দেশের প্রথম আইআইটি প্রাক্তনী বিধায়ক। আইআইটিতে থাকতে থাকতেই সংঘ পরিবারের সদস্য হয়ে ওঠা ও সেখান থেকে সংসদীয় রাজনীতিতে। অবশেষে 'জনসাধারণের মুখ্যমন্ত্রী' হিসেবে পরিচিত হন তিনি। দেশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের ভারও সামলেছেন।
শিক্ষা-জীবন
গোয়ার যে কেন্দ্র থেকে নির্বাচনে দাঁড়াতেন, সেই মাপুসা-তেই ১৯৫৫ সালের ১৩ ডিসেম্বর তারিখে জন্মগ্রহন করেছিলেন মনোহর পার্রিকর। মারাঠিতে মাধ্যমিক দিয়েছিলেন তিনি। তারপর মেটালার্জিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা করেন আইআইটি বম্বে-তে। ২০০১ সালে প্রতিষ্ঠানটি বিশিষ্ট প্রাক্তনী হিসেবে তাঁকে সংবর্ধনা দিয়েছিল।
ব্যক্তিগত জীবন
মনোহর পার্রিকরের স্ত্রী মেধা পার্রিকর ২০০১ প্রয়াত হন। দুই ছেলেকে রেখে গেলেন গোয়ার মুখ্যমন্ত্রী। বড় ছেলে উৎপল মিশিগান বিশ্ববিদ্য়ালয়ের ইলেকট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ার। আর ছোট ছেলে অভিজিত গোয়াতেই ব্যবসা করেন।
সংঘ জীবন
মনোহর পার্রিকরের সঙ্গে রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘের যোগাযোগ অনেক দিনের। স্কুলে পড়াকালীনই তিনি সংঘের 'মুখ্য শিক্ষক' হয়ে উঠেছিলেন। আইআইটি থেকে স্নাতক হয়ে তিনি ফের সংঘের কাজে যোগ দিয়েছিলেন। মাপুসায় নিজস্ব ব্যবসা খোলার পাসাপাশি মাত্র ৩৬ বছর বয়সে 'সংঘচালক' হয়ে ওঠেন। উত্তর গোয়ায় 'রাম জন্মভূমি আন্দোলন' সংঘটিত করায় তাঁর মুখ্য ভূমিকা ছিল।
সংসদীয় রাজনৈতিক জীবন
সংঘের সুপারিশেই মূলত মহারাষ্ট্রবাদী গোমন্তক পার্টি-র বিরুদ্ধে লড়ার জন্যই তিনি প্রথমবার বিজেপির হয়ে নির্বাচনে লড়েছিলেন। ১৯৯৪ সালে প্রথম গোয়া বিধানসভার সদস্য হন। ১৯৯৯ সালে হন প্রধান বিরোধী নেতা। গোয়ার মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে প্রথমবার শপথ নেন ২০০০ সালে। তবে সেই বার বছর দেড়েকের বেশি টেকেনি তাঁর সরকার। ২০০২ সালে তিনি ফের গোয়ার মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব নেন। ২০০৭ সালে বিজেপি গোয়ায় সরকার গড়তে পারেনি। ফের ক্ষমতায় ফেরে ২০১২ সালে। মনোহর পার্রিকরই মুখ্যমন্ত্রী হন।
কিন্তু, ২০১৪ সালে কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদী সরকার গঠিত হয়। খানিক ইচ্ছের বিরুদ্ধেই গোয়া থেকে দিল্লিতে এসে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের দায়িত্ব নিতে হয় তাঁকে। আবার ২০১৭ সালে নির্বাচনের পর বিজেপি গোয়ায় গোয়া ফরোয়ার্ড পার্টির সঙ্গে জোট করে। তাদের শর্ত ছিল পারিক্করকে মুখ্য়মন্ত্রীর দায়িত্ব নিতে হবে। সেই সময় থেকে রবিবার পর্যন্ত সেই চেয়ারেই ছিলেন 'জনসাধারণের মুখ্যমন্ত্রী'।
বিতর্কিত মনোহর পার্রিকর
জীবনে বিতর্কেও কম জড়াননি মনোহর পার্রিকর। কখনও গোয়ার মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে ৫১টি সরকারি স্কুল সংঘের হাতে তুলে দিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েছেন। আবার কখনও জনসাধারণের অর্থ ব্যয় করে ক্যাবিনেটের ৩ মন্ত্রী-সহ ৬ দলীয় বিধায়ককে পাঠিয়েছেন বিশ্বকাপের খেলা দেখতে। আবার ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা নিয়ে চিত্র-তারকা আমির খান মন্তব্য করলে তাঁকে উচিত শিক্ষা দেওয়ার কথা বলেছিলেন। প্রতিরক্ষামন্ত্রী থাকাকালীন পাকিস্তানকে নরকের সঙ্গে তুলনা করেও বিতর্ক বাধিয়েছেন। পরমানু আক্রমণের ক্ষেত্রে ভারত কেন 'নো ফার্স্ট ইউস' নাতি মানবে সেই প্রশ্নও তুলেছিলেন।
সবমিলিয়ে মনোহর পার্রিকরের জীবনাবসানে ভারতীয় রাজনীতি হারাল এক বর্ণময় চরিত্রকে।