বামদুর্গ রক্ষার শেষ প্রহরী! ধ্বংসের মাঝে দাড়িয়ে দল বাঁচাতে একা লড়ছেন মানিক
বিরোধী হাওয়ার মধ্যেও সবচেয়ে উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে জ্বলছেন ত্রিপুরা মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার। দলের অন্য নেতা-নেত্রীদের আসন টলমল করলেও তিনি একা কুম্ভ হয়ে দলের পতন রোধের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছেন।
কংগ্রেসের যেমন বেঁচেবর্তে বড় রাজ্য বলতে একমাত্র কর্ণাটকে সরকার রয়েছে, তেমনই সিপিএমের দাপট বলতে সারা দেশে একমাত্র ত্রিপুরাই। মাত্র ৬০টি আসন। তাতে কী গোটা রাজ্যে গত ২৫ বছর ধরে একচ্ছত্র দাপট দেখিয়ে চলেছে সিপিএম তথা বামেরা। ছয় ভাগের পাঁচ ভাগ আসন এই মুহূর্তে দলের হাতে থাকলেও এই প্রথমবার ত্রিপুরা বিধানসভা ভোটের প্রাক্কালে দাঁড়িয়ে বেশ আশা-নিরাশায় দুলছে বাম সরকার।
এসবের মাঝেও সবচেয়ে উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে জ্বলছেন ত্রিপুরা মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার। দলের অন্য নেতা-নেত্রীদের আসন টলমল করলেও তিনি একা কুম্ভ হয়ে দলের পতন রোধের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছেন। মূলত মানিক সরকারের একার ক্যারিশমায় ভর করেই ত্রিপুরায় জয়ের স্বপ্ন দেখছে সিপিএম।
মোট ৬০টি আসনের মধ্যে ৫৭টিতে সিপিএম প্রার্থী দিয়েছে। বাকী তিনটিতে একটি করে প্রার্থী দিয়েছে আরএসপি, সিপিআই ও ফরওয়ার্ড ব্লক। ফলে দল হারলে পুরো দোষটাই গিয়ে পড়বে সিপিএমের উপরে। দায় নিতে হবে সবচেয়ে বড় জোট শরিককে।
সিপিএম জানুয়ারির প্রথম দিন থেকে প্রচার চালালেও বিজেপি প্রচার শুরু করেছে মনোনয়ন জমা করার পরে ১ ফেব্রুয়ারি থেকে। তাতেই প্রচারে ঝড় তুলে দিয়েছে গেরুয়া শিবির। এই কয়েকদিনেই ১০৮টি সভা করে ফেলেছে বিজেপি। সঙ্গে রোড শো ও জনসংযোগ। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং, বিজেপি সর্বভারতীয় সভাপতি রাজনাথ সিং, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নিতিন গড়কড়ি, অরুণ জেটলি থেকে শুরু করে বলিউড তারকা হেমা মালিনী বিজেপি নেত্রী তথা টলিউড অভিনেত্রী রূপা গঙ্গোপাধ্যায় ও লকেট চট্টোপাধ্যায় বিজেপির হয়ে ত্রিপুরায় প্রচার সেরে গিয়েছেন।
এদিকে কংগ্রেসের হয়ে সভাপতি রাহুল গান্ধী প্রচারে আসছেন। এছাড়াও সিপি জোশী, ভি নারায়ণস্বামী, তরুণ গগৈরা জোরকদমে প্রচার সেরে চলেছেন। কংগ্রেসের এবারের ভোটে জেতার বিশেষ আশা না থাকলেও লড়াইয়ে কোনও খামতি নেই।
অন্যদিকে সিপিএমের প্রচারে অনেকে এলেও প্রধান মুখ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারই। সীতারাম ইয়েচুরি, বৃন্দা কারাট, প্রকাশ কারাট, বিমান বসুরা রাজ্যে প্রচার সারছেন, তবে মানিক সরকারের জনসভাতে যে ভিড় হচ্ছে তা বাকী নেতাদের সভায় নেই। মানিক একা যেন দলের পতন রুখতে কুম্ভ হয়ে লড়ছেন।
উত্তর ত্রিপুরায় মানিকের সভায় আগের মতো ভিড় নেই বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে সেই হতাশা পুষিয়ে দিয়েছে দক্ষিণ ও পশ্চিম ত্রিপুরায় বিপুল জনসমর্থন। বিজেপির 'চলো পাল্টাই' এর পাল্টা 'প্রত্যাবর্তন' স্লোগান তুলে আকাশ-বাতাস এক করছেন বাম সমর্থকেরা। আর তার কেন্দ্রবিন্দুতে দাঁড়িয়ে রয়েছেন মানিক সরকার একা। দল জিতলে পুরোটাই তাঁর কৃতিত্ব, হারলেও কাঁটাতারের উপর দিয়ে তাঁকেই হেঁটে দলকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।