করোনা ভাইরাসের আতঙ্কে নয়, পিশাচ থেকে বাঁচতে লকডাউন অন্ধ্রপ্রদেশের এই গ্রামে
করোনা ভাইরাসের আতঙ্কে নয়, পিশাচ থেকে বাঁচতে লকডাউন অন্ধ্রপ্রদেশের এই গ্রামে
করোনা ভাইরাস নামক মারণ রোগের জন্য দেশজুড়ে লকডাউনের ঘোষণা করা হয়েছিল দু’বছর আগে। কিন্তু এই গ্রামের বাসিন্দারা করোনার কারণে নয় বরং কুসংস্কারের জন্য নিজেদেরকে লকডাউনের ঘেরাটোপে নিয়ে গিয়েছেন। জানা গিয়েছে, পিশাচ থেকে মুক্তি পেতে অন্ধ্রপ্রদেশের এই গ্রামের বাসিন্দারা লকডাউনের ঘোষণা করেছে। একমাসের মধ্যে রহস্যজনকভাবে চারজন স্থানীয়ের মৃত্যু হওয়ার পর ভেনেলাভালাসা গ্রামের বাসিন্দারা নিজেদের ওপর লকডাউন চাপিয়ে দিয়েছে।
পিশাচ বনাম লকডাউন
গ্রামবাসীদের বিশ্বাস যে একটি মাংসভোজী রাক্ষস মানুষকে হত্যা করছে। সেই রাক্ষসের থেকে মুক্তি পেতে লকডাউন পালন করছেন গ্রামবাসীরা। মাংস ভক্ষণকারী রাক্ষস 'পিশাচ'-এর ভয়ে বাড়ির বাইরে পা রাখছেন না তাঁরা। ভেনেলাভালাসা গ্রামের বাসিন্দারা এক মাসের মধ্যে চার পড়শির রহস্যজনক মৃত্যুর পর ঘরবন্দি হন তাঁরা।
বহিরাগতদের প্রবেশ নিষিদ্ধ
গ্রামের সরকারি অফিসও বন্ধ। গ্রামে বহিরাগতদের প্রবেশ নিষিদ্ধ, বাইরের মানুষের প্রবেশ নিষিদ্ধ করতে বেড়া দেওয়া হয়েছে। এমনকী স্কুল ও অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র বন্ধ করে রাখা হয়েছে, যাতে কর্মচারি, স্বাস্থ্য কর্মী ও শিক্ষকরা গ্রামে ঢুকতে না পারেন।
অশুভ আত্মাকে আটকাতে লকডাউন
গ্রামটি শ্রীকাকুলাম জেলার সারুবুজ্জিলি মন্ডলের অধীনে অবস্থিত এবং ওড়িশার সঙ্গে সীমান্ত রয়েছে। গ্রামবাসীদের বিশ্বাস, এই লকডাউন অশুভ আত্মার বিরুদ্ধে কাজ করবে। স্থানীয়দের মতে, গত কয়েকদিন ধরে গ্রামের কিছু বাসিন্দা জ্বরে ভুগছেন এবং চারজনের প্রাণ ইতিমধ্যেই চলে গিয়েছে। গ্রামবাসীদের বিশ্বাস যে গ্রামে অশুভ আত্মাদের কারণে এটি ঘটেছে।
পুরোহিতের পরামর্শ নিয়েছেন গ্রামবাসীরা
গ্রামের বরিষ্ঠরা অশুভ আত্মাদের তাড়াতে ওড়িশা ও প্রতিবেশী ভিজিয়ানগরাম জেলার পুরোহিতদের থেকে পরামর্শ নিচ্ছেন। এঁরাই লকডাউন করার উপদেশ দিয়েছেন গ্রামবাসীদের। পুরোহিতের পরামর্শ অনুযায়ী, গ্রামের চারটে দিশায় লেবু লাগানো হয়েছে, যাতে অশুভ বা নেতিবাচক ক্ষমতা গ্রামে ঢুকতে না পারে। এর পাশাপাশি লকডাউনও কার্যকর করা হয় ১৭ এপ্রিল থেকে, যা চলবে ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত।
চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে এলাকায়
গ্রামের দিকে আসা রাস্তাও বন্ধ করে রাখা হয়েছে এবং সেখানে সতর্কবাণী দিয়ে লেখা আছে যে বহিরাগতদের গ্রামে প্রবেশ নিষেধ এবং গ্রামে বসবাসকারীরা বাড়ির বাইরে বেরোবেন না। এই জেলায় এই ঘটনা চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। যদিও অনেকে এটা নিয়ে প্রশ্ন করলেও অনেকে আবার এই পিশাচ-অশুভ শক্তির ওপর বিশ্বাস করেছেন। পুলিশ সহ স্থানীয় কর্তৃপক্ষরা গ্রাম পরিদর্শনে এসে গ্রামবাসীদের অঙ্গনওয়াড়ি, স্কুল ও গ্রামের সচিবালয় খোলার জন্য রাজি করানোর চেষ্টা করে। এরপর গ্রামবাসীদের সঙ্গে বোঝাপড়ার পর এই কার্যক্রম পরিচালনা করার অনুমতি পাওয়া যায়।