শিলঙের পাহাড়ে শেষের কবিতা থেকে হেমন্তর গান, সিবিআই জেরার সামনে এক অন্য কুণাল
শিলঙে পাহাড়ের এখন শেষের কবিতা খুঁজছেন কুণাল। অমিত-লাবণ্য যে প্রেমকাহিনিতে শিলঙে বাঙালি-র হৃদয়ে স্থান করে আছে সেই শৈলশহরে এখন সারদাকাণ্ডে অভিযুক্ত কুণাল ঘোষ।
শিলঙে পাহাড়ের এখন শেষের কবিতা খুঁজছেন কুণাল। অমিত-লাবণ্য যে প্রেমকাহিনিতে শিলঙে বাঙালি-র হৃদয়ে স্থান করে আছে সেই শৈলশহরে এখন সারদাকাণ্ডে অভিযুক্ত কুণাল ঘোষ। খ্যাতনামা সাংবাদিক-সম্পাদক থেকে তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভার সাংসদ তিনি। আবার তিনি সারদা চিটফান্ডকান্ডে জেল খেটে আসা এক অপরাধী। কিন্তু, কুণাল বারবারই দাবি করেছেন, সারদা চিটফান্ডের একাধিক নিউজ প্রোডাক্টের তিনি মাথা থাকলেও কোনওদিনই লোকের অর্থ প্রতারনার চক্রান্তে জড়িত ছিলেন না। তিনি একজন পেশাদার সাংবাদিক। পেশার চাহিদা এবং উন্নতির সম্ভাবনাতেই তিনি সারদার মিডিয়া উইং-এর দায়িত্ব নিয়েছিলেন। কুণালের এত বক্তব্য সত্ত্বেও তাঁর উপর থেকে অভিযুক্তের তকমাটা ঘোচেনি। কুণাল মনে করেন কাউকে কাউকে বাঁচাতে তাঁকে বলির পাঁঠা করা হয়েছিল। ঘটনার দুর্বিপাকে লড়ছেন কুণাল। আর সেই লড়াই তাঁকে নিয়ে গিয়ে ফেলেছে আজ শিলঙে।
শিলঙ মানে অপার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা এক শৈলশহর। বাঙালি এবং বাঙালির আত্মা, রবীন্দ্রনাথ শিলঙের সঙ্গে একাত্ম হয়ে আছে বহু দশক ধরে। সেই শিলঙে সিবিআই-এর দফতরে সারদাকাণ্ডে জিজ্ঞাসাবাদে হাজির হচ্ছেন সাংবাদিক কুণাল ঘোষ। তাঁর মুখোমুখি বসানো হবে রাজীব কুমারকে। এই সেই রাজীব কুমার যিনি সারদাকাণ্ডের তদন্তে গঠিত সিট-এর প্রধান ছিলেন। এই রাজীব কুমার যখন বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেটের কমিশনার ছিলেন তখন কুণাল ঘোষ-কে গ্রেফতার করা হয়েছিল। এই গ্রেফতারি পর্ব নিয়ে কুণাল বহুবার বহু অভিযোগ করেছেন। কীভাবে তাঁর মতো এক সাংবাদিক সম্পাদককেও পুলিশ রেয়াত করেনি, তা বিস্তারিত অভিযোগ আকারে কখনও কোনও সংবাদপত্রে বা কখনও ফেসবুক লাইভে জানিয়েছেন কুণাল ঘোষ। অভিযোগ করেছিলেন কীভাবে তাঁর সামনে বিধানননগর থানায় পৃষ্টার পর পৃষ্টায় মিথ্যা অভিযোগ লেখা হয়েছিল। এমনকী, তাঁকে দিয়ে জোর করে সেই অভিযোগপত্র সইও করানো হয়েছিল বলে একাধিকবার অভিযোগ করেছিলেন কুণাল ঘোষ।
আজ কি তাঁর সেই জমে থাকা বেদনা-কে সিবিআই -এর অফিসারদের সাহায্যে একটা দিশা দেখাতে পারবেন কুণাল? তা সময়ই বলবে। তবে সন্দেহ নেই শিলঙের এই জেরা পর্ব ভালোই উপভোগ করছেন কুণাল ঘোষ। গুয়াহাটি থেকে সড়ক পথে শিলঙে যাওয়ার মুখে একাধিক স্থানে ছবি তুলেছেন। রবীন্দ্রনাথের 'শেষের কবিতা'-র উদ্ধৃতি টেনে সেই সব ছবি পোস্ট করেছেন ফেসবুকে।
রাতের অন্ধকারে খুঁজতে বেরিয়েছিলেন শিলঙের সেই বাংলো, যা বাঙালির প্রেমতীর্থে একটা জায়গা করেছে। সেই জিৎভূমি বাংলোর সামনে থেকে ফেসবুকে একটা ছোট্ট লাইভও করেছেন। বাংলোর একাধিক ছবি তুলে তা পোস্টও করেছেন। এই জিৎভূমি বাংলোতেই রবীন্দ্রনাথ বহুদিন কাটিয়েছিলেন। এই বাংলার চৌহদ্দি থেকেই তাঁর কলমে নেমে এসেছিল অমিত-লাবণ্যের প্রেমকথা। যে প্রেমের মিলনে কোনও পূর্ণতা ছিল না। বিচ্ছেদও অনেক সময় এক সম্পর্ককে অমর করে দেয় তা প্রমাণ করেছিল শেষের কবিতা। সহ-হারিয়েও যেন সব পাওয়ার এক অমরত্ব। কুণাল ঘোষ তেমনই কিছু ইঙ্গিত করতে চেয়েছিলেন কি না তা জানা যায়নি।
বসন্ত পষ্ণমীর সকালে হোটেলের রুম থেকে বেড-টি- ধূমায়িত কাপকে সামনে রেখে যে ছবি পোস্ট করেছে তা যথেষ্টই ইঙ্গিতবাহী। কারণ একটা লাইন, যা হেমন্ত মুকোপাধ্যায়ের গলায় একটা 'কাল্ট'-এ পরিণত হয়েছে- 'দুরন্ত ঘূর্ণির এই লেগেছে পাক.... '
ঘটনার পাকে-চক্রে যে সম্মানহানির যন্ত্রণা তাঁকে কুরে কুরে খাচ্ছে আজ সেই মানুষ এভাবে 'রং-বদলায়' শব্দটি ব্যবহার করতেই পারেন। আর এই ব্যবহার আরও সমার্থক হয়ে ওঠে শিলঙের পাহাড়ে। কারণ এখানেই তো সবহারিয়ে আজও অমর হয়ে আছেন অমিত-লাবণ্য। কুণালের কাহিনির সঙ্গে যার হয়তো কোথাও কোথাও মিল পাওয়া যায়।