কংগ্রেসের সমর্থনে মুখ্যমন্ত্রী হতে চাইনি, কিন্তু বাধ্য হয়েই..., বিস্ফোরক কুমারস্বামী
এইচ ডি কুমারাস্বামীর মতে, তিনি সুবিদাবাদী নন। সংখ্যাগরীষ্ঠতা নিয়েই মুখ্যমন্ত্রী হতে চেয়েছিলেন বলে জানালেন তিনি।
নির্বাচনের আগে তাঁর দলকে কংগ্রেস বলেছিল বিজেপির বি টিম, এখন তাদের সঙ্গেই জোট গড়ে সরকার গড়তে হচ্ছে জেডি (এস)-কে। এখন ৩৭ বিধায়কের জোর নিয়ে কর্ণাটকে কুমারস্বামী মুখ্যমন্ত্রী হতে যাওয়ায়, আবার তাঁকে বলা হচ্ছে সুবিধাবাদী। পাশপাশি ফ্লোর টেস্টের দিন যতই তাঁদের হাত ধরাধরি করে ঘুরতে দেখা যাক, কুমারাস্বামী- ডি কে শিবকুমারের বিরোধ কারোর অজানা নয়। এত সমীকরণ নিয়ে পাঁচ বছর টিকবে সরকার? সব কিছু নিয়েই মুখ খুলেছেন এইচ ডি কুমারস্বামী।
নিজেকে সুবিদাবাদী বলতে তাঁর আপত্তি আছে। এত অল্প বিধায়কের জোরে মুখ্যমন্ত্রী হতে তিনি কখনই চাননি। কিন্তু নির্বাচনের ফল মেনে নিতেই হবে। কর্ণাটকের মানুষ তাঁর বা তাঁর দলের ওপর ততটাও আস্থা রাখতে পারেননি। সংখ্যাগরীষ্ঠতা পাননি তাঁরা। কিন্তু বহু মানুষকে তিনি অনেক প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। সেসব পূরণ করতেই তিনি মুখ্যমন্ত্রী হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন দক্ষিণের এই নেতা।
পাশাপাশি সিদ্দারামাইয়া থেকে শুরু করে অনেক কংগ্রেস নেতাই বলেছিলেন তিনি কোনওদিন মুখ্যমন্ত্রী হতে পারবেন না। ছিল হাজারটা কুৎসাও। এখন তাঁদের সমর্থনেই তখত দখল করতে যাওয়ার পথে, সেসব আর মনে রাখতে চান না দেবগৌড়া-পুত্র। তাঁর মতে, নির্বাচনের আগে সব পক্ষই অনেক কথা বলে। কিন্তু এখন সেসবের আর গুরুত্ব নেই। সরকার গঠনই একমাত্র গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। পাশাপাশি সিদ্দারামাইয়ার প্রতি তাঁর অকৃত্রিম শ্রদ্ধা রয়েছে বলেও জানান তিনি।
এর আগে ২০০৬ সালে প্রায় একই পরিস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন কুমারস্বামী। কেবল সেবার সরকারে তাঁদের সঙ্গী ছিল বিজেপি। কিন্তু এক বছরের মধ্যেই জোট রাজনীতির ফাঁসে ক্ষমতা হারাতে হয়েছিল। অনেকেই আশঙ্কা করছেন। এবারেও তাই হবে। তবে কুমারস্বামী বলছেন, এক ভুল মানুষ বারবার করে না। তিনি জানেন এবারের পরিস্থিতিটা অনেকটা ২০০৬ সালের মতোই। তবে তিনি আত্মবিশ্বাসী গতবার যে ভুল তিনি করেছিলেন তা আর করবেন না, তাই এবার আর এক বছর নয়, পুরো পাঁচবছরই মুখ্যমন্ত্রী থাকার ব্যাপারে তিনি আত্মবিশ্বাসী।
তবে জোট সরকারের কিছু সীমাবদ্ধতা থাকে, সেটাও তিনি জানেন। তাই নির্বাচনের আগে কর্ণাটকের মানুষকে জেডি (এস) যা যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তার সব যে পালন করা এই সরকারের পক্ষে সম্ভব হবে না, তা প্রথমেই স্বীকার করে নিয়েছেন কুমারান্না। নির্বাচনের আগে বুক বাজিয়ে কৃষকদের বলেছিলেন ক্ষমতায় এলে ২৪ ঘন্টার মধ্যে ঋণ মকুব করবেন। তিনি জানান, সে পথে তাঁরা অবশ্যই এগোবেন, তবে তার আগে আলোচনা করবেন কংগ্রেসের সঙ্গে। খতিয়ে দেখবেন, রাজ্যের কোষাগারের এপর ঠিক কতটা চাপ পড়ছে।
তবে তিনি বারবার মনে করিয়ে দিচ্ছেন এ সরকার জোটের সরকার। তাই, কংগ্রেসের দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূরণেও তিনি সমান সচেষ্ট হবেন। তার জন্য একটি কমন মিনিমাম প্রোগ্রাম গ্রহন করা হবে। এছাড়া দুদলের মধ্যে সমন্বয় বজায় রাখতে একটি কমিটি গঠনের কথাও জানিয়েছেন কুমাপস্বামী। সেই কমিটিতে কারা কারা থাকবেন তার কিছুই এখনও চুড়ান্ত না হলেও কুমারস্বামী সিদ্দারামাইয়াকে চান সেখানে। তিনি বলেছেন, 'ওঁর পাঁচ বছর সরকার চালানোর অভিজ্ঞতা আছে। তাকে কাজে লাগাতে চাই।' তবে সব সিদ্ধান্তেই সোনিয়া-রাহুল কে পাশে চান তিনি।
এমনকী শিবকুমারের সঙ্গে তাঁর ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বও সরকারে বা দুদলের সম্পর্কের রসায়নে কোনও ছাপ ফেলবে না বলেও মনে করেন তিনি। জানান, আমরা দুজনেই পরিণত রাজনীতিক। তাই যখন সিদ্ধান্ত নিয়েছি হাত মিলিয়ে চলব তখন সেভাবেই সবকিছু হবে। পাশপাশি, বিজেপিকে আটকে সরকার গড়ার যে সম্ভাবনা তাঁরা তৈরি করেছেন, তার কৃতিত্ব কারোর একার নয়, দু দলের প্রতিটি নেতারই এতে সমান ভূমিকা আছে বলেই জানিয়েছেন কর্ণাটক রাজনীতির কুমারান্না। এর আগে তাঁর সংক্ষিপ্ত শাসনকালে রাজ্যের আয় সবচেয়ে বেড়েছিল। জনতার মুখ্যমন্ত্রী তকমাও পেয়েছিলেন। এবারে জোটের মুখ্যমন্ত্রী হয়ে কর্ণাটককে তিনি এগিয়ে নিয়ে যেটে পারেন না, জোটের জটেই আটকে যাবে তাঁর যাবতীয় আকাঙ্খা, সেটাই দেখার।