৯৯ বছরে প্রয়াত খুশবন্ত সিং
বার্ধক্যজনিত নানা সমস্যায় ভুগছিলেন এই লেখক-সাংবাদিক। শেষ সময়ে তাঁর পাশে ছিলেন ছেলে রাহুল সিং। এই প্রবীণ বুদ্ধিজীবীর প্রয়াণে টুইটার, ফেসবুক ছেয়ে যায় শোকবার্তায়। পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে এদিন বিকেলেই তাঁর অন্ত্যেষ্টি সম্পন্ন হবে।
১৯১৫ সালের ২ ফেব্রুয়ারি জন্ম হয় খুশবন্ত সিংয়ের। তৎকালীন অবিভক্ত পাঞ্জাবের হদালিতে। এখন জায়গাটি পাকিস্তানে। বাবা শোভা সিং ছিলেন দিল্লির বড় প্রোমোটার। কাকা উজ্জ্বল সিং পাঞ্জাব ও তামিলনাড়ুতে রাজ্যপাল পদে দায়িত্ব পালন করেছেন।এমন অভিজাত পরিবারে জন্মগ্রহণ করলেও বরাবরই তিনি ছিলেন মিশুকে। লাহোর ও দিল্লিতে স্নাতক স্তর পর্যন্ত পড়াশুনো করেন। উচ্চশিক্ষা লন্ডনের কিংস কলেজ থেকে।
কর্মজীবন শুরু করেন একজন সাংবাদিক হিসাবে। সরকারি পত্রিকা 'যোজনা' সম্পাদনা করেছেন খুশবন্ত সিং। তা ছাড়াও, সম্পাদনা করেছেন 'দ্য ইলাস্ট্রেটেড উইকলি অফ ইন্ডিয়া' নামের সাপ্তাহিক পত্রিকা। 'দ্য ন্যাশনাল হেরাল্ড' এবং 'হিন্দুস্তান টাইমস'-এর সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন তিনি। ১৯৭৪ সালে তাঁকে পদ্মভূষণে সম্মানিত করে কেন্দ্র। যদিও অমৃতসরের স্বর্ণ মন্দিরে সেনা অভিযানের বিরোধিতা করে ১৯৮৪ সালে সেই সম্মান ফিরিয়ে দেন। ২০০৭ সালে পান পদ্মবিভূষণ। ২০০৬ সালে তিনি পান পাঞ্জাব সরকারের পুরস্কার, পাঞ্জাব রত্তন। ২০১০ সালে সাহিত্য আকাদেমি তাঁকে ফেলোশিপ দেয়। পাঞ্জাবি ছাড়াও হিন্দি, উর্দু, ইংরেজি ভাষায় সমান দক্ষ ছিলেন তিনি।
'ট্রুথ, লাভ অ্যান্ড আ লিটল ম্যালিস' খুশবন্ত সিংয়ের আত্মজীবনী
১৯৮০ থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত তিনি রাজ্যসভার সদস্য ছিলেন। বিভিন্ন ইস্যুতে রাজ্যসভার অন্দরে তিনি তথ্যসমৃদ্ধ বক্তব্য রেখেছেন। খুশবন্ত সিংয়ের সবচেয়ে ইতিবাচক দিক ছিল, তাঁর রসবোধ। সমালোচকদের কটাক্ষ করার সময়ও তিনি রসবোধের পরিচয় দিতেন।
দীর্ঘ জীবনে ভালো ভালো বই লিখেছেন তিনি। কয়েকটি উল্লেখযোগ্য বই হল: দ্য হিস্ট্রি অফ শিখস, ট্রেন টু পাকিস্তান, আই শ্যাল নট হিয়ার দ্য নাইটিঙ্গেল, আ হিস্ট্রি অফ দ্য শিখস, ট্র্যাজেডি অফ পাঞ্জাব, উই ইন্ডিয়ান্স, দ্য কম্পানি অফ উইমেন, ডেথ অ্যাট মাই ডোরস্টেপ, হোয়াই আই সাপোর্টেড দি এমারজেন্সি।
'ট্রুথ, লাভ অ্যান্ড আ লিটল ম্যালিস' হল খুশবন্ত সিংয়ের আত্মজীবনী। ২০০২ সালে বইটি প্রথম প্রকাশিত হয়। জীবনের নানা উত্থান-পতন বর্ণনা করেছেন প্রাঞ্জল ভাষায়। ২০১২ সালে লেখা তাঁর শেষ বই হল 'দ্য গুড, দ্য ব্যাড অ্যান্ড দ্য রিডিকিউলাস'।
খুশবন্ত সিং ছিলেন উদার, ধর্মনিরপেক্ষ, আধুনিক মনস্ক। এদিন তাঁর ছেলে রাহুল সিং বলেন, "বাবা বাজে জিনিসকে মুখের ওপর বাজে জিনিস বলতেন। ভণ্ডামি, মৌলবাদকে ঘৃণা করতেন। খুব নম্রভাবে জীবনধারণের পক্ষপাতী ছিলেন।"